মোবাইল আসক্তিতে শিশুদের ভাষা শিক্ষায় বাধা

লাইফস্টাইল ডেস্ক : মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এসব আমাদের নিত্যসঙ্গী। বিনোদন হোক বা প্রয়োজন, এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়া একদিনও কাটানো প্রায় অসম্ভব। ছোট থেকে বড় সব মানুষই দিনের বেশ কয়েক ঘণ্টা এসব ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটায়।

মূলত যখন পরিবারের বড়রা কাজে বা অলস সময় কাটাতে মোবাইল ও টিভি ব্যবহার করে, তখন ছোট শিশুরাও তাদের দেখাদেখি এই অভ্যাস গড়ে তোলে। তবে শিশুদের জন্য বেশিক্ষণ স্ক্রিনের এই নীল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

শিশুরা বেশিক্ষণ ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকলে তাদের চোখের ক্ষতি হয়। এছাড়াও শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রেও এই অভ্যাস অনেক বেশি ক্ষতি সাধন করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অতিরিক্ত সময় কাটানোর অভ্যাস শিশুদের ভাষাগত বৃদ্ধিতে কঠোরভাবে বাধা প্রদান করতে পারে।

শিশুদের মস্তিষ্কের কগনিটিক অর্থাৎ, জ্ঞানীয় কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান করে। এই কারণে শিশুরা যখন প্রাথমিকভাবে ভাষা শেখা শুরু করে তখন সেই শিক্ষাক্রমে বাঁধা তৈরি হয়। এস্তোনিয়ার বিশেষজ্ঞদের একটি দলের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করার এই অভ্যাস শিশুরা তাদের পিতা-মাতার অনুসরণেই পেয়ে থাকে।

তারতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক ডাক্তার টিয়া তুলভিস্তে নবজাতকদের ভাষার দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলায় যখন শিশুদের বিকাশ ঘটতে শুরু করে, তখন বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যরা শিশুর সাথে খেলার ছলে নানান কথোপকথন করে। সেই অনুযায়ী প্রতিদিন বড়দের মাধ্যমে শিশুদের ভাষাগত বিকাশ হতে থাকে।

বয়সের সঙ্গে তাদের উচ্চারণ এবং ব্যাকরণগত শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হতে থাকে চর্চার মাধ্যমে। সেই বয়সে এর বদলে যদি তাদের মোবাইল বা ল্যাপটপের প্রতি ঝোঁক বাড়ে তাহলে তাদের স্বাভাবিক বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। শিশুদের এই অভ্যাস তৈরির পেছনে অবশ্য প্রতিপালকদের দায় থাকে। শিশুদের সাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে কথোপকথন করতে হবে।

গবেষকেরা কিছু শিশুদের উপর পরীক্ষাজনক ভাবে নজর রাখেন। এই শিশু এবং এদের বাবা মায়েরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সময় কাটান। সময়ের দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে শিশুদের তিনটি ভাগে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

প্রথমভাগে সেসব শিশুরা অনেক বেশি ডিভাইসে সময় কাটায় তাদের ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করা হয়। এই শিশুদের কথায় পরিপক্কতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয়ভাগে একই বয়সের তুলনামূলক কম ডিভাইসে আসক্ত শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা প্রথম ভাগের তুলনায় উন্নত ছিল। সবশেষে যেসব শিশুদের একদম ডিভাইস থেকে দূরে রাখা হয় তারা ব্যাকরণ এবং উচ্চারণে সবচেয়ে বেশি দক্ষতার পরিচয় দেয়।

শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সমগ্র জীবনের ভিত্তি শৈশবেই তৈরি হয়। শিশুদের প্রথম ৫ বছর চঞ্চলতা অনেক বেশি থাকে। এইসময়কালে বই পড়া আর শিক্ষামূলক খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। তাই এইসময়ে শিশুদের অনেক বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন। খেলা, বই পড়া, শিশুদের সাথে কথোপকথনের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের থেকে তাদের দূরত্ব রক্ষা করাও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ হবে এবং সুন্দর শৈশব উপহার পাবে। তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

You might like