সম্পাদকীয়
আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্যে পলিথিন নিষিদ্ধ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বটে! কেননা যেভাবে পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে চলেছে, তাতে এখনই নিষিদ্ধ না হলে চারিদিকে পলিথিনের স্তুপ পড়ে যাবে; তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা কোথাও গেলেই দোকানী আমাদের হাতে সস্তা মূল্যের পলিথিনে যে কোনো দ্রব্য হাতে তুলে দেয়। কাঁচা বাজার হতে শুরু করে মাছ-মাংস সবকিছুতেই পলিথিনের ব্যবহার চলছে। আমরা বাজারে যাচ্ছি খালি হাতে; আর বাজার থেকে ফেরার পথে হাতে করে নিয়ে আসছি বিভিন্ন তরিতরকারির সাথে দশ থেকে পনেরটি পন্যের সাথে পনেরটি পলিথিন। তাছাড়া বাজার থেকে যে লবণ কেননা হয়, তাও পলিথিনের মধ্যে থাকে; আর সেটা বহন করে নেয়ার সুবিধার্থে দোকানী আবার অন্য আরেকটি পলিথিন দিয়ে দেয়, যেন আমরা ঝুলিয়ে পলিথিন নিতে পারি। আর সেসব পলিথিন বাড়িতে এনে ফেলে দিচ্ছি বাড়ির আশপাশে বা চাষাবাদের জমিতে। অথবা তরকারি কাটার পরে তা ফেলা হচ্ছে পুকুরে অথবা ডোবায়। সেখানে সেই পলিথিন দীর্ঘদিন থাকার ফলে মাটির উর্বরা নষ্ট হচ্ছে। পুকুর/ডোবায় ফেলার কারণে সেখানে মাছের চাষ করা যাচ্ছে না। জমিতে ফসল ভালো উৎপাদন হচ্ছে না।
আমাদের সময় এসেছে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে সচেতন হওয়ার। যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে এ নিষিদ্ধ একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত আমরা বলতে পারি। কিন্তু আমাদের সন্দেহ রয়েছে যে, এ নিষিদ্ধ কী শুধুই কাগজে কলমে হবে কিনা। কেননা অতীতে আমরা দেখেছি, ধূমপান নিষিদ্ধ হয়ে, আইন হয়েও বর্তমানে প্রকাশ্যে ধূমপান চলছে। মানুষ ভুলেই গেছে যে, জনসম্মুখে ধূমপান অপরাধ। শুরুতে বেশকিছু দিন হৈ চৈ চলেছিলো, পরে আবার সেটার আইন কেউ আর মানছে না। আগের মতোই প্রকাশ্যে ধূমপান চলছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ধূমপানের রমরমা ব্যবসা চলছে। আর পলিথিন নিষিদ্ধও কী সে রকম পর্যায়ে যাবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
এদিকে পর্যাপ্ত বিকল্প তৈরি না করেই সুপারশপে পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিক্রেতা ও ভোক্তাদের। তারপরও সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জুতসই বিকল্পের খোঁজে হন্যে হয়ে পড়েছেন ব্যবহারকারীরা। তবে বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ উৎপাদকরা বলছেন, সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো বিকল্প রয়েছে তাদের কাছে। পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে তথ্যপ্রমাণ দিচ্ছেন গবেষকরাও। এখন দেখার বিষয়-ভবিষ্যৎ কী হয়! কিছু কারখানায় তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব বায়োডিগ্রেডেবল শপিং ব্যাগ। উদ্যোক্তারা বলছেন, নতুন করে চাহিদা বাড়ছে এ ব্যাগের! আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কঠোরতার পর থেকেই সুপারশপে দেখা যাচ্ছে পাট, কাপড় কিংবা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে সরবরাহ সঙ্কট ও বাড়তি দামের অভিযোগ।
ভালো বিকল্পের খোঁজে যখন ভোক্তা ও বিক্রেতারা, তখন গবেষকরা বলছেন, দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাগ কম্পোস্টেবল বা বায়োডিগ্রেডেবল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এগুলো ১৮০ দিন বা তার কম সময়ে মিশে যায় মাটিতে। আর এগুলো পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর নয় বলেও প্রমাণ মিলেছে। প্রশ্ন হলো, কতটা ব্যয় সাশ্রয়ী পলিথিনের বিকল্প এসব ব্যাগ? উৎপাদকদের দাবি, পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগের দাম আকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা। পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগের দাম পড়ছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা। আর একই সাইজের কম্পোস্টেবল বা বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিনের ব্যাগের দাম পড়বে ৩ থেকে ৬ টাকা। সে হিসেবে পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার ভবিষ্যৎ কী?-সে প্রশ্ন করা যেতেই পারে; কেননা শুরুটা ভালো দেখতে পেলেও কিছুদিন পরে কী আবারো জোড়েশোরে পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে না তো! সে হিসেবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে শঙ্কা সাধারণ মানুষের মনেও! সুতরাং পাটের ব্যাগ বা অন্যান্য ব্যাগ ব্যবহার করতে গিয়ে ভোক্তাদের খরচের ওপর যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেজন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা উচিত হবে।
আর যাই হোক, বিভিন্ন অফিস, আদালাত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ, স্কুল-কলেজগুলোতে কোমলমতি শিশুদের এখন থেকে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব! আমরা সেদিনের অপেক্ষায় থাকতেই পারি যে, একসময় আমরা পলিথিনের কথা ভুলেই যাবো!
মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?