

সম্পাদকীয়
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই চারিদিকে তাকালে আমরা পলিথিন দেখতে পাই। রান্নাঘর, থাকার ঘর সর্বত্র ঝুলানো থাকে পলিথিন ব্যাগে। বাজারে খালি হাতে আমরা যাই; বাজার থেকে ফিরে আসি ছোট বড় মিলিয়ে ২০টি পলিথিন ব্যাগ নিয়ে। অবশ্যই হতবাক হওয়ার বিষয়; আদতে এটাই সত্যি! একটু হিসেব করলেই আমরা বুঝতে পারবো যে, যদি বাজার থেকে কয়েক আইটের বাজার নিই তাহলে হিসাব করলে ২০টিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ বাড়িতে নিয়ে আসি। এভাবে প্রত্যেকটি পরিবার মাসে আধাকেজির মতো পলিথিন ব্যাগ বাড়িতে আনা হয়। উপকরণ ঘরে রাখার পর পলিথিনগুলো বাড়ির আশপাশে ফেলে দিই। সেগুলো বাড়ির পরিবেশকে নষ্ট করার পাশাপাশি নোংরা ও দুর্গন্ধ চারিদিকে ছড়ায় এবং তা’ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই ক্ষতিকর।
প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটসের মতো রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এই ব্যাগগুলো যখন পোড়ানো হয় তখন ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়।

বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণের কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার। পরিবেশবিদদের মতে, পলিথিন তৈরিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়, যা পরিবেশ সুরক্ষায় মোটেও উপযোগী নয়। পলিথিন এমন একটি পণ্য, যা মাটির সঙ্গে মিশতে আনুমানিক দেড় হাজার বছর সময় লাগে। পলিথিনের অবাধ ব?্যবহার বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় এর পরিত্যক্ত অংশ মাটির অভ্যন্তরে ঢুকে মাটির উর্বরতা হ্রাস ও মাটিতে থাকা অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
পলিথিন শুধু মাটির গুণাগুণ নষ্ট করছে তা-ই নয় বরং বিপন্ন করে তুলছে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকেও। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজধানীর ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। তার মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। অপচনশীল ও সর্বনাশা পলিথিনের এমন যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বিশেষ করে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়োনিষ্কাশনের ড্রেন, নালা, নর্দমা, খাল, বিল ও নদীগুলো ভরাট হচ্ছে আর দূষিত হচ্ছে পানি। পলিথিন নদী ও সাগরের তলদেশে জমা হয়ে জীববৈচির্ত্য ও সামুদ্রিক জীবের মারাত্মক ক্ষতি করছে। মাছ-মাংস পলিথিনে প্যাকিং করলে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়। পরিবেশ বিপন্নকারী সর্বনাশা পলিথিন ব্যবহার নিরসনকল্পে পলিথিনের ব?্যবহার সীমিতকরণ, বিকল্প পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি পলিথিনের ক্ষতিকর দিক থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পলিথিনের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় ইথিন থেকে প্রাপ্ত পলিমারকে পলিথিন বলে। পরিবেশদূষণ, জীববৈচির্ত্য, অর্থনীতি ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য পলিথিন মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। আমাদের দেশে আশির দশকে পলিথিনের ব্যবহার শুরু হলেও পলিথিনের সহজলভ্যতাই এর ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ব্যাগ হাতে বাজারে যাওয়া যেন অসহনীয় তার চেয়ে ১০/১৫টি চকচকে পলিভর্তি বাজার নিয়ে ঘরে ফেরা বেশ আরামদায়ক।
আমরা সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধে একমাস সময় দিয়ে আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমরা মনে করি, বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও উত্তম সিদ্ধান্ত। তাছাড়া পহেলা নভেম্বর থেকে সুপার শপে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও আমরা সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। জাতি হিসেবে নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পলিথিন ব্যাগ ধরে রাখা হবে নাকি বাদ দেব। উৎপাদনকারীর জন্য যেমন এটি নিষিদ্ধ, ব্যবহারকারীর জন্যও নিষিদ্ধ, তাই ব্যবহার করাও বন্ধ করা জরুরী। পলিথিন কারখানার অনুমোদন নেই, আর এসব কারখানায় শুধু পলিথিন শপিং ব্যাগই তৈরি করা হয়, তা ঠিক নয়। তাছাড়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্তকারীদের পুরস্কৃত করা হবে বলেও আমরা জানতে পেরেছি।
আমরা মনে করি, পলিথিন সমূলে নিষিদ্ধ হলে পরিবেশ রক্ষা পাবে। সেই সাথে বাংলাদেশের সোনালি আঁশের সোনালি ব্যাগ মানুষের শোভা পাবে। আমরা পরিবেশকে ভালোবাসি; কেননা পরিবেশ আমাদের রক্ষা করে; তাই পরিবেশকেও স্বাভাবিক রাখতে আমাদের চেষ্টা করতে হবে এবং পলিথিন বন্ধে সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?
