সম্পাদকীয়
নি:সন্দেহে এসব সম্বোধন সম্মানের জন্যে। বিশেষ ব্যক্তিবর্গকেই সাধারণত এভাবে সম্বোধন করা হয়। আমরা ছোটবেলা থেকে জেনেছি যে, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরকেই স্যার ও ম্যাডাম বলে থাকে। বিশেষক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও স্যার ও ম্যাডাম বলা যায়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এ সম্বোধনকে নিয়ম করে নিয়েছে। অফিসে পরস্পরকে এভাবে সম্বোধন করে থাকে। কিন্তু যারা সাধারণ জনগণ তাদের জন্যে এমন বিধান থাকলেও অভ্যাসের বিষয়টি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়! এখানে ভুলের বিষয়টি চলে আসে। তাছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের স্যার বলার বিধান নেই। অবশ্য ভদ্রতার খাতিরে কেউ স্যার বা ম্যাডাম বলতে পারে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয় বলেই আমরা জানি। কেউ কেউ আবার নাম ধরে সম্বোধন করে শেষে দাদা, কাকা, ভাই বলে থাকে।
আমরা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের স্যার বা ম্যাডাম বলার কোনো বিধান নেই। তারা জনগণের সেবক। তাদের নাম ধরে বা পদবি ধরে ডাকা যেতে পারে। সচিব সাহেব, ডিসি সাহেব, ইউএনও সাহেব বলে সম্বোধন করা যেতে পারে। আমরা জানতে পেরেছি যে, বিতর্ক এড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি পরিপত্র, অফিস আদেশ জারি করতে পারে। এতে সিভিল সার্ভেন্টদের সতর্ক করা হবে। যদি সেবাপ্রার্থী কেউ কোনো কর্মকর্তাকে স্যার বা ম্যাডাম সম্বোধন না করেন, তবে তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করা যাবে না। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, শুধু প্রশাসন নয়, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অনেকেই স্যার সম্বোধন না করলে মাইন্ড করেন। সেবাপ্রত্যাশীদের কেউ স্যারের বদলে ভাই সম্বোধন করে ফেললে ঘটে বিপত্তি। এসব ক্ষেত্রে অনেক কর্মকর্তা দর্শনার্থীর সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন। কিছু দিন ধরে সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে মাঠ প্রশাসনে একাধিক কর্মকর্তা এ ধরনের ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তাদের স্যার বা ম্যাডাম ডাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ভদ্রতার খাতিরে অনেকে স্যার বা ম্যাডাম ডাকেন। কিন্তু এ সম্বোধন বাধ্যতামূলক কিছু নয়। কেউ যদি আপা বা ভাই ডাকেন, তাতে দোষের কিছু নেই। এতে মাইন্ড করারও কিছুই নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা জনগণের সেবক, এই চিন্তা থেকেই কাজ করতে হবে। সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেখানে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এ সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী জনগণ প্রজাতন্ত্রের মালিক। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনগণের সেবক। মালিক সেবককে স্যার বা ম্যাডাম সম্বোধন কোনোভাবেই সমীচীন নয়। কেউ যদি সৌজন্যতাবশত স্যার সম্বোধন করে, সেটা ভিন্নকথা। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারি আইনকানুন বা বিধিবিধানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে সম্প্রতি স্যার-ম্যাডাম সম্বোধনের বিষয়টি সামনে আসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় ৩৩ বছর আগের সরকারি একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, ১৯৯০ সালের ১৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে (বাবাকো) মতামত চাওয়া হয় সরকারি অফিসে কর্মকর্তাদের নামে প্রেরিত পত্রাদিতে লিখিত এবং মৌখিক সম্বোধনে কী লেখা বা বলা হবে। বাবাকো বিষয়টি সচিব কমিটিতে প্রেরণ করে। সচিব কমিটি ওই বছর ১১ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মতামত প্রেরণ করে। এতে জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের নামে লেখা পত্রে পুরুষের ক্ষেত্রে মহোদয় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে মহোদয়া লেখা যেতে পারে। মৌখিক সম্বোধনে পুরুষের ক্ষেত্রে স্যার এবং মহিলার ক্ষেত্রে ম্যাডাম সম্বোধন করা যেতে পারে। এছাড়া পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক জনাব এবং বেগম শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। কর্মকর্তাদের অনেকে স্যার কিংবা ম্যাডাম সম্বোধনের পক্ষে ওই চিঠি প্রমাণক (প্রমাণ) হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।
আমরা মনে করি, সম্মানটাই সবচেয়ে বড় কথা। পরস্পরকে আমরা কতোটুকু সম্মানের জায়গায় রাখতে পারছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে যদি এমন নির্দেশনা থাকে বা নিয়ম থাকে তাহলে সেটা সকলেরই মান্য করা উচিত। এ নিয়ে বিতর্ক করাটা যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। অথবা এ নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে তা কোনোভাবেই আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতে পারি না। একটা সমাধানে আশার প্রত্যাশা করতে পারি-যা’ সকলেরই গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত হতে পারে।
রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?