হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ : মানুষ ভুলে যাচ্ছে রসের স্বাদ

সম্পাদকীয়

আহা! সেই স্বাদ বুঝি আর নেই। হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। মানুষ ভুলে যাচ্ছে রসের স্বাদ। চাদর মুড়ি দিয়ে বসে বসে গøাসে ভরে রস খাওয়ার দৃশ্য আর তেমন চোখে পড়ে না। রোদ পোহাতে পোহাতে রসের তৈরি পীঠা আমরা আর আগের মতো খেতে পারি না।

খেজুর গাছ খুব একটা দেখা যায় না; দেখা যায় না গাছিদেরও; যারা শীত আসার সাথে সাথে রসের জন্যে প্রস্তুত করে খেজুর গাছ। খেজুর গাছের রস ও গুড় আমাদের সংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ। শীতের সকালে খেজুরের রস, রসের পিঠা, গুড়-মুড়ি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য। যেখানে কয়েকবছর আগেও শত শত খেজুর গাছ ছিলো; এখন আর তেমন গাছ দেখা যায় না। আর ওইসব গাছ থেকে শীতকালে যতো খেজুরের রস সংগ্রহ হতো তা’ দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে তৈরি হতো খেজুরের গুড়; যা’ এখন আর হচ্ছে না। আর মানুষের চাহিদার সাথে সাথে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে নকল গুড়ে।

এখন এসব গুড়েই তৈরি হচ্ছে পীঠা-পুলিসহ অন্যান্য মিষ্টান্ন। গাছি সংকট, অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব তো রয়েছেই। কেননা হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। আর সেই সাথে রসের পরিমাণ এখন অনেক কমে এসেছে। কনকনে শীতের শিশির ভেজা সকালে খেজুর গাছের মিষ্টি রসে ভরা হাঁড়ি নামাতে ব্যস্ত সময় পার করার লোকজনকে দেখা মিলে না। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের শীত মৌসুমে খেজুরের রসের কদর থাকলেও তেমন উপায় থাকে না। তবুও যা’ আছে তাতে খেজুর গাছের রসের সুমিষ্ট স্বাদ ও ঘ্রাণ একেবারেই আলাদা অনুভূতি জাগিয়ে তোলে মানুষের মনে। পুরো শীত মৌসুমেই চলে রসের পিঠা-পুলি আর পায়েশ খাওয়ার পালা।

গ্রাম্য আদলে থাকা কিছু কিছু এলাকাভেদে সবার ঘরে ঘরে এখন খেজুর রসের তৈরি পিঠা, পায়েশ, মুড়ির মোয়া, লালিসহ নানা রকম মজার মজার খাবার তৈরির ধুম পড়েছে। রস দিয়ে পাটালি গুড়ের বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন তৈরি হয়-যা খুবই সুস্বাদু। আর শীতের সকাল বেলায় খেজুরের সুমিষ্ট রস পান করতে খুবই মজা।

আর আমাদের দেশে খেজুর গাছের তেমন একটা যত্ন করা হয় না। সারা বছর এসব গাছ অযত্ম-অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতের মৌসুমে এদের কদর বেড়ে যায়। গাছগুলোকে অবলম্বন করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তুলনামূলকভাবে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুরগাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এ খেজুরগাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। যে হারে খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ করা হয় না। এখন গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন নেই। তবুও কয়েকটা গাছের পরিচর্যা করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চেষ্টা করা উচিত। খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় গাছিদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এ কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন।

এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা’ দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসারের খরচ চলতো। কিন্তু এখন সে সুযোগ নেই; তেমন একটা কাজও পাওয়া যায় না। ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হয়।

এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। কোথাও ইটভাটার উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই গাছ। আগের মতো দা-কাঁচি, একগাছি রশি, একদণ্ড বাঁশ ও কোমরে ঝোলানো লম্বা-গোল আকৃতির বিশেষ পাত্র (ঠুঙ্গি) নিয়ে গাছে উঠতে দেখা যায় না গাছিদের। শীতের সকালে কাঁধে ভার চেপে ঝুলন্ত কলস নিয়ে ছেঁড়া স্যান্ডেলে তাঁদের ছুটতে দেখা যায় না। দুর্লভ এ ধরনের দৃশ্য বর্তমানে কেবল বইয়ের পাতায়ই শোভা পাচ্ছে।

খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে দেখা যায় না মা-চাচিদের রসের বা ভাপা-পুলিপিঠা বানাতে। হারানো এ ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। গাছিদের গাছ কাটার সরঞ্জাম, পোশাক, প্রণোদনা ইত্যাদি প্রদান করার মাধ্যমে তাঁদের এ কাজে উৎসাহিত করতে হবে, ব্যবস্থা করতে হবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের।

যদি বলি, গ্রামে এখন শহুরে ছোঁয়া; ভুল বলা হবে না। শহরায়নের আগ্রাসনে প্রকৃতির ঐতিহ্য খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে খেজুর গাছও তত কমছে। কোনো কোনো জায়গায় কিছু কিছু খেজুর গাছ রয়েছে। যেসব স্থানে এক সময় রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল সেসব স্থানে এখন নেই খেজুর গাছ। গ্রামের কোনো কোনো সড়কের পাশে কিছু গাছ থাকলেও তাতে তেমন রস হয় না; এ যে আমাদের জন্যে বড়ই দুঃখের! কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস, মন মাতানো ঘ্রাণ গ্রামীণ জনপদে বিরল। শীতের সকালে খেজুর রস, মিষ্টি রোদ, কৃষক-কৃষাণির হাসি দারুণ প্রাণশক্তি। বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য খেজুর গাছ ও দেখা দিয়েছে রসের সংকট। আসুন আমরা খেজুর গাছ রোপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি।

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?

You might like