আমাদের এতো অস্থিরতা কেনো?

সম্পাদকীয়

গত ৪ জুন ২০২৪ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত “অস্থিরতা, রাগ, অপরাধ সবই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, কারণ কী” সংবাদ শিরোনামের মাধ্যমে বর্তমান মানুষের পরিস্থিতি সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্পষ্টত আমরা বুঝতে পেরেছি যে, চারিদিকে মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কেউ কেউ শান্তিতে থাকতে চাইলেও পারছে না। চারিদিকে মানুষের মনমেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে। শুধু বড়দের কথাই আমরা বলি কেনো; ছোটরাও এ হিসেব থেকে বাদ যায় না। তাদের মধ্যেও গালাগালি, মারামারি আমরা দেখতে পাই। তাছাড়া র‌্যাগিং তো রয়েছেই; তা’ নিয়ে বেশি আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না। প্রকাশিত সংবাদে আমরা পড়েছি যে, “তুই হা হা দিয়ে হাসলি কেন? বিয়ের ভোজে পাতে মাংস এতো কম কেনো? রেস্তোরাঁয় বেগুনি কম ভাজা হয়েছে কেনো? তুই আমাকে গালি দিলি কেনো? এ চেয়ারে তুই বসলি কেনো?”-এমন সব প্রশ্নে ইদানিং রেগেমেগে বাস্তবিকই তুলকালাম কাÐ ঘটাচ্ছে মানুষজনÑএমনকি শিশুরাও।”

চারিদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। এতেই বিভিন্ন অপরাধকে উসকে দেয়া হচ্ছে। কখনো কখনো ঘটনা খুন পর্যন্তও গড়াচ্ছে। প্রায় মানুষের মধ্যেই এখন আর কোনো স্থিরতা নেই। প্রেম, টাকা-পয়সা কোনো কিছুর জন্যেই কেউ সময় দিতে রাজি নয়। পথে চলতে চলতে মেজাজ গরম হলেই মনে পড়ে যাওয়া কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিচিত কাউকে গালাগালি করতে শোনা যায়, রিক্সায় চড়তে চড়তে রিক্সাওয়ালার সাথে ঝগড়া-মারামারির মতো ঘটনাও ঘটে। দোকানে জিনিসপত্র, দামাদামি নিয়ে ঝগড়াঝাটি। একে অপরকে ঠকানোর জন্যে কতো বুদ্ধি-ফন্দি; অথচ এসব ভালো কাজে লাগাতে পালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কেউ কাউকে মানতে রাজি নয়; দোষ করলেও ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’-এমন ভাব আমরা দেখতে পাই।

আমরা প্রায়ই গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবরের শিরোনামে ‘তুচ্ছ কারণ’ শব্দটি যোগ হতে দেখতে পাই। প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ছোট্ট ঘটনার জের ধরে ভয়াবহ সহিংস প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এতে স্পষ্ট যে, মানুষ দ্রæতই রেগে যায়; কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। চারিদিকে অঘটন ঘটছে; তার প্রতিবাদও হচ্ছে; আবার দ্রæতই তা’ ভুলে যাচ্ছে। এতে কোনো কোনো মানুষ নির্বিকারভাবে জীবনযাপন করছে। আমরা চারিদিকের বিভিন্ন আতঙ্ক বা বীভৎসতা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর এসব না হলে যেন মনে হয় যে, কিছু হচ্ছে না কেনো? সত্যিকারে আমরা ক্রমান্বয়ে জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছি, সামাজিক পরিস্থিতি আমাদের কাঁদিয়ে ছাড়ে। চারিদিকে যুদ্ধ, দুর্নীতি, বৈষম্য, নির্যাতন, সর্বব্যাপী অপতথ্য এবং চরমপন্থায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়ও কখনো কখনো দেখতে পাই না।

আবার দেখুন-স্কুলে ভালো ফল করতেই হবেÑঅভিভাবকদের এ তাড়নায় শিশুরা অস্থির থাকছে। রাতজাগা বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মতো জীবনযাপনগত কারণেও রেগে যাওয়ার প্রবণতা শিশুদের মধ্যে দেখতে পাই। সুতরাং আমরা প্রশ্ন করতেই পারি যে, মানুষের রাগ-ক্ষোভ কেনো এতো বাড়ছে? এ প্রশ্নের উত্তরে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নৈতিক শিক্ষার অভাব, সম্পর্কে টানাপোড়েন, হতাশা, অপ্রাপ্তি, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবকে আমরা টানতে পারি।

চারপাশের প্রতিক‚লতার কারণে মানুষ নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করে। এমন প্রতিক‚লতার মধ্যে আছে বৈষম্য, প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব, পরিবার-সমাজ-রাজনীতিতে নানা বিচ্যুতি ও অস্থিরতা, দুর্নীতি এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়া। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। তাদের আগ্রাসী মনোভাব বা অস্থিরতা বাড়ছে। তারা অল্পতেই সহিংস হচ্ছে। তাছাড়া চারিদিকে হত্যা, চুরি, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ এবং মামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ আরো বেপরোয়া হয়ে যায়।

সত্যিকারে আমাদের প্রয়োজন রয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সান্নিধ্য, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মজীবন, সুখ নিয়ে বেশি চিন্তা না করা, হতাশাবাদী না হওয়া, আভিজাত্যের প্রতিযোগিতা বা বহিঃপ্রকাশ না করে অনাড়ম্বর বা সাদামাটা জীবনযাপন করা। তাছাড়া মানুষের অস্থিরতা, রাগ-ক্ষোভের প্রভাব পড়ছে তার কর্মক্ষেত্রে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তাই বিষয়গুলো অবহেলা করার উপায় নেই। মানুষের মধ্যে এখন আর কোনো স্থিরতা নেই। প্রেম, টাকাপয়সাÑকোনো কিছুর জন্যই কেউ সময় দিতে রাজি নয়। বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় দুম করে তালাক হয়ে যাচ্ছে। মোবাইল দরকার, তো এখনই লাগবে। পায়নি-খুব সহজে মানুষ আত্মহত্যা করে ফেলছে।

আসলে আমরা এমন অস্থিরতার মাঝে থাকতে থাকতে সঠিক পথই হারিয়ে ফেলছি। আমাদের চিকিতসা প্রয়োজন, প্রয়োজন কাউন্সিলিংয়ের। আমরা বাঁচতে চাই, ভালোভাবে বাঁচতে চাই।

বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?

You might like