সম্পাদকীয়
তুলামূলকভাবে আমাদের দেশে পরিবারগুলোতে পূর্বের চেয়ে বন্ধ্যাত্ব বেড়ে যাচ্ছে। আমরা জানি, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। বার্ধক্য গর্ভপাতের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়। একজন মহিলার বয়স হিসাবে, তার কম ডিম থাকে এবং ডিমের অবস্থাও ততটা স্বাস্থ্যকর হবে না যখন সে তার ২০ বছর বয়সে ছিল। এছাড়াও তার স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যা গর্ভধারণকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তাছাড়া ধূমপান, বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহার এবং অ্যালকোহল সেবন বেড়েছে। এই কারণগুলি উর্বরতা হ্রাস করে যা ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্বে অবদান রাখে। আরো রয়েছে, আধুনিক মহিলা কর্মক্ষেত্রে এবং বাড়িতে কাজ করার জন্যে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকা। এ বর্ধিত স্ট্রেস এবং চাপ তার উর্বরতাকে এমন পরিমাণে হস্তক্ষেপ করে যে অ্যামেনোরিয়া বা পিরিয়ডের অনুপস্থিতির দিকে পরিচালিত করে। ভুল জীবনধারা পছন্দ স্থূলতা বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে এবং এর ফলে মহিলাদের গর্ভধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব-কম শুক্রাণুর সংখ্যা, অঙ্গসংস্থানের অস্বাভাবিকতা এবং শুক্রাণুর কম গতিশীলতা এর সাধারণ কারণ পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব। পুরুষদেরও বয়সের সাথে সাথে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দেয়। যেসব দম্পতির পুরুষের বয়স ৪০-এর বেশি তাদের কম বয়সী দম্পতিদের তুলনায় গর্ভধারণে বেশি অসুবিধা হয়। অতিরিক্ত ওজন পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান, বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহার এবং অ্যালকোহল সেবন পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়াতে পরিচিত। তাছাড়া প্রেসক্রিপশন টেস্টোস্টেরন ইনজেকশন, ইমপ্লান্ট বা কম টেস্টোস্টেরনের জন্য সাময়িক প্রয়োগ, বা টেসটোসটেরন বা অনুরূপ ওষুধগুলি পেশী ভর বাড়াতে নেওয়া বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। বিকিরণের এক্সপোজার শুক্রাণুর ক্ষতি করবে এবং বন্ধ্যাত্বের দিকে পরিচালিত করবে। অণ্ডকোষের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম। ঘন ঘন উচ্চ তাপমাত্রার এক্সপোজার শুক্রাণু উৎপাদনকে প্রভাবিত করবে যা বন্ধ্যাত্বের দিকে পরিচালিত করবে। কিছু ওষুধ যেমন ফ্লুটামাইড, সাইপ্রোটেরন ইত্যাদি ক্ষতিকর পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্য। কীটনাশকের রাসায়নিক, সীসা, ক্যাডমিয়াম এবং পারদ পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের দিকে পরিচালিত করে।
গত ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্ধ্যাত্ব : গবেষণা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেখে হতবাক হয়েছি। অবশ্যই এটা আমাদের সকলের জন্যে, দেশের জন্যে হুমকস্বরূপ। এ থেকে মুক্তির জন্যে আমাদের সতর্কতার বিকল্প নেই। তাছাড়া সচেতনতা আমাদেরকে আরো ভালো ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে শব্দদূষণ একটি একটি মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করছে। উচ্চমাত্রার শব্দযুক্ত স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করার ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং এমনকি কার্ডিওভাসকুলারজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে। বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে ছিল ঢাকা। বিশ্বের ১২৬টি শহরের মধ্যে শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে বায়ুদূষণে ঢাকার এ অবস্থান ছিল।
শুক্রবার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, “ সম্প্রতি দেশে বন্ধ্যাত্ব উল্লেখ্যহারে বেড়ে গেছে। বায়ুদূষণ ও রাস্তার ট্রাফিকের শব্দ দূষণের মতো দূষণগুলো দীর্ঘমেয়াদে পুরুষ ও নারীর উর্বরতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে ২.৫ মাত্রার কণার সংস্পর্শে আসা বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। এক্ষেত্রে তাদের বয়সের সময়সীমা পাওয়া গেছে ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। অন্যদিকে, নারীদের মধ্যে রাস্তার ট্রাফিকের শব্দ ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষকরা বলেন, ২.৫ মাত্রার বায়ুদূষণে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাস্তার ট্রাফিকের শব্দদূষণে ৩৫-৪৫ বছর বয়সী নারীদের উর্বরতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে ৩০-৩৪.৯ বছর বয়সীদের ওপর এর কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি।” অতএব, আমরা বুঝতে পারছি যে, এটা আমাদের জন্যে কতোটা ভয়াবহ হিসেবে পরিগণিত।
বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত¡া ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। তাঁদের বিষয়ে বিশেষ যতœবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। শব্দদূষণ একধরনের মারাত্মক পরিবেশদূষণ। আমাদের সঠিক অনুধাবনের অভাবে দিন দিন এই দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অনেক পরিবেশবাদী বাংলাদেশের শব্দদূষণের বর্তমান পর্যায়কে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ নামে অভিহিত করেছেন। ‘শব্দ–সন্ত্রাস’ আমাদের মাথাব্যথার কারণ। বর্তমানে ঢাকা শহরের শব্দদূষণ যে পর্যায়ে অবস্থান করছে তা খুবই আশংকাজনক। সেটা সমস্যা মনে হলেও আমাদের অসচেতনতার কারণে আমরা প্রায়শ বলে থাকি এটার নিরসন সম্ভব নয়। কিন্তু এ সমস্যাগুলো মানুষেরই তৈরি। আমরা একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেই এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাড়িতে, অফিসে, রাস্তাঘাটে এমনকি বিনোদনের সময়ও আমরা বিভিন্নভাবে শব্দদূষণের শিকার হচ্ছি। বিশ্বব্যাপী মানুষ পরিবেশ দূষণ রোধে সোচ্চার। বাংলাদেশেও বর্তমানে পরিবেশ দূষণ রোধের বিষয়টি একটি আলোচিত বিষয়। অনেক ব্যক্তি, বেসরকারি সংগঠন, পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি তথা পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। প্রচার মাধ্যমগুলোকে এ ব্যাপারে আরো এগিয়ে আসতে হবে।
শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?