ক্ষুদীরাম দাস :
সময়ের প্রয়োজনে, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু মানুষকে ও মানুষের কর্মকাÐকে এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা আমাদের আশপাশে অনেক মানুষ আছে, যাদের কারণে ভালো থাকা যায় না। এক্ষেত্রে সবার আগে চলে পরিবারের সদস্যদের কথা। হ্যাঁ, অবশ্যই সেক্ষেত্রেও তাদের বেশ কিছু কাজকে এড়িয়ে চলার মানে হলো-তাদের কাজকে সমর্থন না করা। আর সেটা করতে পারলে আমরা নিজেরা ভালো থাকতে পারি। তাছাড়া পরিবারকে এড়িয়ে চলা গেলেও তাদেরকে কোনোভাবেই পরিত্যাগ করা যায় না। কিন্তু প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবের কথা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই পরিবার বদলানো বা বাছাই করার সুযোগ না থাকলেও বন্ধু বা সঙ্গী নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন আমরা হতেই পারি। তাহলে জীবনের অনেক মারাত্মক সমস্যাগুলো থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি।
কেননা জীবনের প্রতিটি স্তরে যেসব মানুষ প্রতিনিয়ত নানাভাবে প্রভাব ফেলছে, তাদের বাছাই করতে সতর্ক না হলে শেষটায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। ২ তীমথিয় ২ অধ্যায় ১৪ পদে রয়েছে, “এসব কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দাও, প্রভুর সাক্ষাতে তাদের সাবধান কর, যেন লোকেরা তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলে, কেননা তাতে কোন ফল হয় না, বরং যারা শোনে তাদের সর্বনাশ হয়।” এখানে পরস্পরের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা এসব করতে দারুণভাবে পছন্দ করে। তাদেরকে আমাদের এড়িয়ে চলাই উচিত। কেননা তর্ক-বিতর্ক করা মানুষগুলো সবসময় ঝামেলাই করে। তারা কখনো অন্যের সমাধানের উৎস হতে পারে না। এতে কোনো ভালো ফল হয় না; সর্বনাশই হয়ে থাকে। এধরণের মানুষকে একেবারে এড়িয়ে চলাই উচি।
পরচর্চার অভ্যাস যাদের আছে, তাদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত। যারা বেশি গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে গালগল্প ফাঁদে বা নিজেদের ভালো সাজানোর জন্য বানিয়ে কথা বলে, তাদের সঙ্গ মোটেই স্বাস্থ্যকর হতে পারে না। যদি এরকম মানুষের সংস্পর্শে এসে থাকেন তবে তাদেরকে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলা থেকে দূরে থাকাই ভালো; অথবা একেবারেই এড়িয়ে চলুন। হিতোপদেশ ১১ অধ্যায় ১৩ পদে রয়েছে, “পরনিন্দা পরচর্চা আস্থা ভঙ্গ করে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য মানুষ গোপনীয়তা বজায় রাখে।” এ ধরনের মানুষ সমাজের কীট। কিন্তু কিছু কিছু আমরা ভুল করে থাকি; আর তা’ হলো সরল বিশ্বাসে আমরা কারো কারো কাছে আমাদের জীবনের গোপন কথাগুলো অকপটে বলে দিই। আর তা’ নির্ভরতার কারণেই বলে থাকে। আমরা যেন সবসময় ভালো শিক্ষা পরস্পরকে দিতে পারি। তীত ২ অধ্যায় ৩ পদে রয়েছে, “সেভাবে, বয়স্ক মহিলাদেরও শিক্ষা দাও, যেন তাঁরা সম্ভ্রমের সঙ্গে জীবনযাপন করেন, যেন পরচর্চায় মত্ত বা মদ্যপানে আসক্ত না হয়ে পড়েন। কিন্তু যা কিছু মঙ্গলজনক, তাঁরা যেন সেই শিক্ষা দেন।” কিন্তু যদি একান্ত গোপনীয় বিষয়গুলো নিয়ে অন্যদের সাথে সমালোচনা করে তাহলে আমাদের কেমন লাগে। ওদেরকে কারণেই অনেক বিবাদের জন্ম নেয়। হিতোপদেশ ২৬ অধ্যায় ২০ পদে রয়েছে, “কাঠের অভাবে আগুন নিভে যায়; পরনিন্দা পরচর্চার অভাবেও বিবাদ থেমে যায়।” অতএব, আমাদের কারো কারো কাছে পরনিন্দা খুব ভালো লাগতে পারে; কিন্তু তা’ বিষের মতো হয়ে থাকে। হিতোপদেশ ২৬ অধ্যায় ২২ পদে রয়েছে, “পরনিন্দা পরচর্চার কথাবার্তা সুস্বাদু খাদ্যের মতো লাগে; সেগুলি মানুষের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে।” আর এ ধরনের মানুষ এর কথা তাকে, আর তার কথা ওকে বলতে থাকে। কাউকে না বলার দোহাই দিয়ে তারা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে মানুষের সাথে মিশে যায়।
এ ধরণের মানুষের কাছে মনের কথা কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়। তাই পরচর্চাকারী ব্যক্তি আমাদের যতোই কাছের কেউ হোক, এ ধরনের মানুষদের বন্ধুর মর্যাদা না দেয়াটাই ভালো। হিতোপদেশ ১১ অধ্যায় ১৩ পদে রয়েছে, “পরনিন্দা পরচর্চা আস্থা ভঙ্গ করে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য মানুষ গোপনীয়তা বজায় রাখে।” হিতোপদেশ ১৬ অধ্যায় ২৮ পদে রয়েছে, “বিকৃতমনা লোক বিবাদ বাধায়, ও পরনিন্দা পরচর্চা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও বিচ্ছিন্ন করে দেয়।” হিতোপদেশ ২০ অধ্যায় ১৯ পদে রয়েছে, “পরনিন্দা পরচর্চা আস্থা ভঙ্গ করে; অতএব সেই লোককে এড়িয়ে চলো যে অতিরিক্ত কথাবার্তা বলে।”
ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তি এড়িয়ে চলা মঙ্গলজনক। তারা তো খোলা কবরের মতো দুর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। হিতোপদেশ ১৪ অধ্যায় ৩০ পদে রয়েছে, “শান্ত হৃদয় শরীরের জীবন; কিন্তু ঈর্ষা সকল অস্থির পচনস্বরূপ।” আমরা জানি, কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার অন্যতম একটি বিশেষ দিক হলো তার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করা যায়। সেটি হোক দুঃখ-বেদনা বা নিজের আনন্দ সাফল্য। স্বাভাবিকভাবেই আমরা চাই যে আমাদের বন্ধু আমাদের সাফল্যে আনন্দিত হবে। তবে এমন কিছু বন্ধুও থাকেন যারা আপনার সাফল্যে আনন্দিত হওয়া দূরে থাক, উল্টো আপনার বিরুদ্ধে কটু কথা বলতেও দ্বিধা করে না। এমন চলতে থাকলে আপনি হয়তো বন্ধুত্ব রক্ষার্থে নিজের সাফল্যগুলোকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। হাতেগোনা কিছু মানুষের জন্যে নিজের কষ্টার্জিত সাফল্য লুকিয়ে রাখার চেয়ে বরং এ ধরনের বন্ধুদের এড়িয়ে চলুন। কেননা যাকে আমি বন্ধু ভাবি, সে যদি আমরা সর্বনাশের কারণ হয়; তাহলে তাকে কেনো আমরা সঙ্গ দিবো। যাকোব ৩ অধ্যায় ১৬ পদে রয়েছে, “কেননা যেখানে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা, সেখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম থাকে।” যাকোব ৩ অধ্যায় ১৪ পদে রয়েছে, “কিন্তু তোমাদের হৃদয়ে যদি তিক্ত ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা রাখ, তবে সত্যের বিরুদ্ধে শ্লাঘা করিও না ও মিথ্যা কহিও না।”
নেতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা দরকার। সবসময়ে হাসিখুশি থাকতে সব ধরনের মানুষকে নিজের জীবনে প্রশ্রয় না দেওয়াই ভাল। এমন কিছু মানুষ আমাদের চারপাশে থাকে যাদের মানসিকতা সবসময় নেতিবাচক। এ ধরনের মানুষের সঙ্গ এড়িয়ে চলাই ভালো। গীতসংহিতা ১৫ অধ্যায় ৩ পদে রয়েছে, “যে পরীবাদ জিহŸাগ্রে আনে না, মিত্রের অপকার করে না, আপন প্রতিবাসীর দুর্নাম করে না।” কথায় আছে, যদি একটি মিথ্যা বা নেতিবাচক কথা বারবার বলা হয়, তবে একটা পর্যায়ে আপনি তা বিশ্বাস করতে শুরু করবেন। আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রকে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু আপনার কোনো এক সহকর্মী অফিসে পা রাখা মাত্রই আপনার কাছে আপনার কর্মক্ষেত্র বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করতে শুরু করেন, এক পর্যায়ে লক্ষ করবেন আপনার মনেও বিষয়গুলো গেঁথে যাচ্ছে। সে সময় আপনার মনে এসব বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। নেতিবাচক মনোভাব সংক্রামক রোগের মতো। তাই নিজের মানসিক শান্তি রক্ষা করতে চাইলে নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। হিতোপদেশ ৩০ অধ্যায় ১০ পদে রয়েছে, “কর্তার কাছে দাসের দুর্নাম করিও না, পাছে সে তোমাকে শাপ দেয়, ও তুমি অপরাধী হও।” হিতোপদেশ ১৮:৩ পদে রয়েছে, “দুষ্ট আসিলে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও আইসে, আর অপমানের সহিত দুর্নাম আইসে।”
নিজেকে সবজান্তা ভাবা মানুষকেও এড়িয়ে চলা দরকার। ১ করিন্থীয় ৮ অধ্যায় ২ পদে রয়েছে, “যদি কেহ মনে করে, সে কিছু জানে, তবে যেরূপ জানিতে হয়, তদ্রƒপ এখনও জানে না;” আমরা জানি যে, সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অপরের মতামতের প্রতি সহানুভ‚তিশীল হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জীবনে চলার পথে আমরা এমন কিছু মানুষের সংস্পর্শে আসি, যারা অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতে চান না। অন্যের মতকে অগ্রাহ্য করে কিংবা নানা অযুহাতে ভুল প্রমাণ করে নিজের মতকেই সঠিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। এমন স্বঘোষিত সবজান্তা শমসেরদের সঙ্গে কাজ করতে গেলে কিংবা সাধারণ বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গেলেও আপনি একপর্যায়ে হাঁপিয়ে উঠবেন। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। তাই ব্যক্তিগতভাবে তাদের কাছ থেকে যতোটা দূরত্ব বজায় রাখবেন। উপদেশক ৯ অধ্যায় ৫ পদে রয়েছে, “কারণ জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে।” যোহন ৭ অধ্যায় ৪৯ পদে রয়েছে, “কিন্তু এই যে লোকসমূহ ব্যবস্থা জানে না, ইহারা শাপগ্রস্ত।” উপদেশক ৬ অধ্যায় ৮ পদে রয়েছে, বস্তুতঃ হীনবুদ্ধি অপেক্ষা জ্ঞানবানের কি উৎকর্ষ? আর জীবিতদের সাক্ষাতে চলিতে জানে এমন দুঃখী লোকেরই বা কি উৎকর্ষ?” উপদেশক ৬ অধ্যায় ১০ পদে রয়েছে, “যাহা হইয়াছে, অনেক দিন হইল তাহার নামকরণ হইয়াছিল, কারণ সকলে জানে যে, সে মনুষ্য , এবং আপনা অপেক্ষা পরাক্রান্ত লোকের সহিত বিতÐা করিতে সে অপারগ।” হিতোপদেশক ৯ অধ্যায় ১৩ পদে রয়েছে, “হীনবুদ্ধি স্ত্রীলোক কলহকারিণী, সে অবোধ, কিছুই জানে না।”
মিথ্যাবাদী মানুষ থেকে এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা তারা একসময় এমন কিছু করবে বা ঘটনা ঘটাবে যা’ কল্পনাও করা যায় না। হিতোপদেশ ১০ অধ্যায় ১৮ পদে রয়েছে, “যে দ্বেষ ঢাকিয়া রাখে,তাহার ওষ্ঠাধর মিথ্যাবাদী; আর যে পরীবাদ রটায়, সে হীনবুদ্ধি।” হিতোপদেশ ৩০ অধ্যায় ৬ পদে রয়েছে, “তাঁহার বাক্যকলাপে কিছু যোগ করিও না; পাছে তিনি তোমার দোষ ব্যক্ত করেন, আর তুমি মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হও।” প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস যেকোনো সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি ও সন্দেহ সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, আপনার খুব কাছের কোনো বন্ধু যদি নানা বিষয়ে মিথ্যা বলে বিভিন্ন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তবে তা আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে। হয়তো আপনি মিথ্যা একদমই বলেন না। ফলে না চাইলেও অনেক কাজ আপনাকে করতে হয়। অপরদিকে আপনার বন্ধু দিব্যি মিথ্যা বলে পার পেয়ে যান। এতে আপনার মনে হতেই পারে, সত্যের চেয়ে মিথ্যা বলাটাই আপনার জন্যে মঙ্গল। যে আপনি কোনোদিনই মিথ্যা বলতেন না, সেই আপনিই হয়তো মিথ্যা বলতে শুরু করে দিলেন। তাই সুখী হতে হলে মিথ্যাবাদী ব্যক্তি সবসময়ই পরিত্যাজ্য। পবিত্রশাস্ত্রের ১ যোহন ২ অধ্যায় ৪ পদে রয়েছে, “যে ব্যক্তি বলে, আমি তাঁহাকে জানি, তথাপি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন না করে, সে মিথ্যাবাদী এবং তাঁহার অন্তরে সত্য নাই।” ১ তীমথিয় ১ অধ্যায় ১০ পদে রয়েছে, “নরহন্তা, ব্যভিচারী, পুঙ্গামী, মনুষ্যচোর, মিথ্যাবাদী, মিথ্যাশপথকারী, তাহাদের জন্য, এবং আর যাহা কিছু নিরাময় শিক্ষার বিপরীত, তাহার জন্য ব্যবস্থা স্থাপিত হইয়াছে।” যিশাইয় ৩০ অধ্যায় ৯ পদে রয়েছে, “কেননা উহারা বিদ্রোহী জাতি ও মিথ্যাবাদী সন্তান; উহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা শুনিতে অসম্মত সন্তান।” হিতোপদেশ ২১ অধ্যায় ৬ পদে রয়েছে, “মিথ্যাবাদী জিহŸা দ্বারা যে ধনকোষ লাভ, তাহা চপল বাষপবৎ, তদন্বেষীরা মৃত্যুর অন্বেষী।” হিতোপদেশ ১৯ অধ্যায় ২২পদে রয়েছে, “দয়াতেই মনুষ্যকে বাঞ্ছনীয় করে, এবং মিথ্যাবাদী অপেক্ষা দরিদ্র লোক ভাল।” হিতোপ ১২ অধ্যায় ২২ পদে রয়েছে, “মিথ্যাবাদী ওষ্ঠ সদাপ্রভুর ঘৃণিত; কিন্তু যাহারা বিশ্বস্ততায় চলে, তাহারা তাঁহার সন্তোষ-পাত্র।” ১৯ পদে রয়েছে, “সত্যের ওষ্ঠ চিরকাল স্থায়ী; কিন্তু মিথ্যাবাদী জিহŸা নিমেষমাত্র স্থায়ী।” গীতসংহিতা ১২০ অধ্যায় ২ পদে রয়েছে, “সদাপ্রভু, আমার প্রাণ মিথ্যাবাদী ওষ্ঠাধর হইতে, প্রতারক জিহŸা হইতে রক্ষা কর।” ১ যোহন ১ অধ্যায় ১০ পদে রয়েছে, “যদি আমরা বলি যে, পাপ করি নাই, তবে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করি, এবং তাঁহার বাক্য আমাদের অন্তরে নাই।”
অযৌক্তিক সমালোচনাকারীদেরও কৌশলে এড়িয়ে চলতে হয়। এমন মানুষজন আছেন, যাঁরা সবসময় একপেশে বিচারবুদ্ধি নিয়ে চলেন। নিজের মানসিকতাকেই জাহির করার চেষ্টা করেন। এরা যেকোনোও বিষয়েই সমালোচনা করতে ভালোবাসেন। সমালোচনা ভালো তখনই, যখন সেটা যুক্তিগ্রাহ্য। কিন্তু ভালো হোক বা মন্দÑ সবকাজেই অনাবশ্যক খুত ধরে বেড়ান যারা, তাদের এড়িয়ে চলাই ভালো। তীত ২ অধ্যায় ৮ পদে রয়েছে, “ওজন করে কথা বলবে যাতে বিরোধীপক্ষের লোকেরা দোষ খুঁজে না পায়। তখন আমাদের সমালোচনা করার কিছু না পেয়ে তারা লজ্জা পাবে।” রোমীয় ১৪ অধ্যায় “অপরের সমালোচনা করো না।” কিছু মানুষ আছে, যারা কারো নিজস্ব সময় কাটানো, কারো পোশাক পরিধান, কর্মকাÐ বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে কটু সমালোচনা করতেই থাকে; মনে রাখা উচিত যে, এমন মানুষের আশপাশে থাকলে যে কেউ সবসময় ক্লান্ত অনুভব করবে।
ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগকারীদেরও এড়িয়ে চলাই উত্তম। মুদ্রাদোষ প্রতিটি মানুষের মধ্যেই রয়েছে। একজন মানুষ যেরকম, সেটা অন্যের যুক্তিতে ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু সেটা অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপন করাই হলো পরিবেশ নষ্ট করা, জীবন অতিষ্ঠ করে দেয়ার মতো বিষয় হয়ে যায়। তাছাড়া ছোটখাটো ব্যাপারেও যারা অভিযোগ করেন, তাঁদের সঙ্গ এড়িয়ে চলাই ভাল। এমন অনেক মানুষজন আছেন, যারা কোনোও ব্যাপারেই সন্তুষ্ট নন। এদের সাহচর্য মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যোহন ৮ অধ্যায় ১০ পদে রয়েছে, “তখন যীশু মাথা তুলিয়া, স্ত্রীলোকটি ছাড়া আর কাহাকেও দেখিতে না পাইয়া, তাহাকে কহিলেন, হে নারি, যাহারা তোমার নামে অভিযোগ করিয়াছিল, তাহারা কোথায়? কেহ কি তোমাকে দোষী করে নাই?” প্রেরিত্ ২৩ অধ্যায় ২৯ পদে রয়েছে, “তাহাতে আমি বুঝিলাম, তাহাদের ব্যবস্থা সম্বন্ধীয় কোন কোন বিবাদ প্রযুক্ত ইহার উপরে দোষারোপ হইয়াছে, কিন্তু প্রাণদÐের বা শৃঙ্খলের যোগ্য কোন দোষ প্রযুক্ত ইহার নামে অভিযোগ হয় নাই।” রোমীয় ৮ অধ্যায় ৩৩ পদে রয়েছে, “ঈশ্বরের মনোনীতদের বিপক্ষে কে অভিযোগ করিবে? ঈশ্বর ত তাহাদিগকে ধার্মিক করেন; কে দোষী করিবে?” ১ তীমথিয় ৫ অধ্যায় ১৯ পদে রয়েছে, “দুই তিন জন সাক্ষী ব্যতিরেকে কোন প্রাচীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রাহ্য করিও না।”
অতিরিক্ত অলস ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা উচিত। হিতোপদেশ ১৮ অধ্যায় ৯ পদে রয়েছে, “যে ব্যক্তি আপন কার্যে অলস, সে বিনাশকের সহোদর।” অলস প্রকৃতির মানুষদের কাছে ঘেঁষতে না দেয়াই ভালো। এ ধরনের মানুষ কখনো কোনো কাজে উৎসাহ দেখান না। তাদের বিমর্ষ মুখ চারপাশের মানুষজনের উপরেও প্রভাব ফেলে। এর সঙ্গে পড়লে কিছুদিন পর দেখা যাবে, আপনিও কোনোও কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন না; বাস্তবিক তাই ঘটে। হিতোপদেশ ২৬ অধ্যায় ১৩ থেকে ১৬ পদে রয়েছে, “অলস বলে, পথে সিংহ আছে, চৌরাস্তায় কেশরী থাকে। কব্জাতে যেমন কবাট ঘুরে, তেমনি অলস আপন খাটিয়াতে ঘুরে। অলস থালে হস্ত ডুবায়, পুনর্বার মুখে তুলিতে তাহার ক্লেশ বোধ হয়। সুবিচারসিদ্ধ উত্তরদাতা সাত জন অপেক্ষা অলস নিজের দৃষ্টিতে অধিক জ্ঞানবান।” হিতোপদেশ ২০ অধ্যায় ৪ পদে রয়েছে, “শীত প্রযুক্ত অলস হাল বহে না, শস্যের সময়ে সে চাহিবে, কিন্তু কিছুই মিলিবে না।” হিতোপদেশ ১৯ অধ্যায় ২৪ পদে রয়েছে, “অলস থালে হস্ত ডুবায়, পুনর্বার মুখে দিতেও চাহে না।” হিতোপদেশ ১৯ অধ্যায় ১৫ পদে রয়েছে, “আলস্য অগাধ নিদ্রায় মগ্ন করে, এবং অলস প্রাণ ক্ষুধায় কষ্ট পায়।” ২ পিতর ১ অধ্যায় ৮ পদে রয়েছে, “কেননা এই সমস্ত যদি তোমাদের মধ্যে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত¡জ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না।” হিতোপদেশ ১২ অধ্যায় ২৪ পদে রয়েছে, “পরিশ্রমীদের হস্ত কর্তৃত্ব পায়; কিন্তু অলস পরাধীন দাস হয়।” ২৭ পদে রয়েছে, “অলস মৃগয়াতে ধৃত পশু পাক করে না; কিন্তু মনুষ্যের বহুমূল্য রতœ পরিশ্রমীর পক্ষে। হিতো পদেশ ১০ অধ্যায় ২৬ পদে রয়েছে, “যেমন দন্তের পক্ষে অ¤øরস ও চক্ষুর পক্ষে ধূম, তেমনি আপন প্রেরণকর্তাদের পক্ষে অলস। হিতোপদেশ ৬ অধ্যায় ৬ পদে রয়েছে, “হে অলস, তুমি পিপীলিকার কাছে যাও, তাহার ক্রিয়া সকল দেখিয়া জ্ঞানবান হও।” ৯ পদে রয়েছে, “হে অলস, তুমি কত কাল শুইয়া থাকিবে? কখন্ নিদ্রা হইতে উঠিবে?”
অহঙ্কারী মানসিকতার মানুষকেও কখনো কখনো এড়িয়ে চলা উচিত। গীতসংহিতা ৪০ অধ্যায় ৪ পদে রয়েছে, “ধন্য সেই জন, যে সদাপ্রভুকে আপন বিশ্বাসভ‚মি করে, এবং তাহাদের দিকে না ফিরে, যাহারা অহঙ্কারী ও মিথ্যা পথে ভ্রমণ করে।” অহঙ্কারী ও স্বার্থপর মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করাই ভাল। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন বা সহকর্মীÑ কথায় কথায় যদি কেউ আপনাকে ছোট করেন, আপনার সব কাজে ভুল ধরেন ও সমালোচনা করেন, স্বার্থপর মনোভাব নিয়ে চলেন, তা হলে তাঁদের সঙ্গ এড়িয়ে চলাই ভাল। গীতসংহিতা ৯৪ অধ্যায় ২ পদে রয়েছে, “উঠ, হে পৃথিবীর বিচারকর্তা, অহঙ্কারী লোকদিগকে অপকারের প্রতিফল দেও।” হিতোপদেশ ১৫ অধ্যায় ২৫ পদে রয়েছে, “সদাপ্রভু অহঙ্কারীদের বাটী উপড়াইয়া ফেলেন, কিন্তু বিধবার সীমা স্থির রাখেন।” হিতোপদেশ ১৬ অধ্যায় ১৯ পদে রয়েছে, “বরং দীনহীনদের সহিত নম্রাত্মা হওয়া ভাল, তবু অহঙ্কারীদের সহিত লুণ্ঠন বিভাগ করা ভাল নয়।” যিশাইয় ১৩ অধ্যায় ১১ পদে রয়েছে, “আর আমি জগতের উপরে দুর্বৃত্তির ফল ও দুষ্টগণের উপরে তাহাদের অপরাধের ফল বর্তাইব; আমি অহঙ্কারীদের দর্প শেষ করিব, দুর্দান্তদের গর্ব খর্ব করিব। যাকোব ৪ অধ্যায় ৬ পদে রয়েছে, “বরং তিনি আরও অনুগ্রহ প্রদান করেন; এই কারণ শাস্ত্র বলে, “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।”
স্বার্থপর মানসিকতার মানুষকেও কখনো কখনো এড়িয়ে চলা উচিত। ফিলিপীয় ২ অধ্যায় ৩ পদে রয়েছে, “স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা কিংবা অহংকারের বশে কিছুই করো না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেকে নিজের চেয়ে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর;” আর স্বার্থপর মানুষ থেকে দূরে থাকাটা কখনো কখনো সহজ হয় না আসলে। জীবন সঙ্গী কিংবা যাদের সাথে দৈনিক ওঠাবসা, তারাই যদি স্বার্থপর হয়, সে ক্ষেত্রে মানুষের আর কিছু করার থাকে না। যে মানুষ শুধু নিজের ভালো বোঝে, শুধু নিজে ভালো থাকার কথা ভাবে, যে কেবলই আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের, তার সাথে সম্পর্কে থাকা মানেই নিজের সুখ আর অনুভ‚তিগুলোকে বিসর্জন দেয়া! একতরফাভাবে স্যাক্রিফাইস, মানিয়ে নেয়া, কর্তব্য পালন করা কখনোই সম্পর্ককে সুন্দর করে না– করতে পারে না। পরস্পর যখন পরস্পরের মানসিক এবং শারীরিক চাহিদার দিকে নজর রাখে, ঠিক তখনই কেবল সম্পর্ক সুন্দর হতে পারে। নিজে ভালো থাকার কথা চিন্তা করাটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু স্বার্থপরের মতো কেন শুধু নিজের ভালো থাকার কথা ভেবে সঙ্গীকে মানসিক যন্ত্রণা দিতে হবে? নিজে সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক এবং শারীরিক চাহিদা পূরণ করে, তাকে অবহেলা করাটা শুধুই স্বার্থপরতা নয় বরং চরম অন্যায়! মানুষটাকে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় রেখে, নিজের সকল চাহিদা পূরণ করে, শুধু নিজে ভালো থাকাটা কারো কারো কাছে পৈশাচিক আনন্দের। আর এই রকম স্বার্থপর স্বভাবের মানুষ যারা পায়, তাদের কাছে সংসার কিংবা সম্পর্ক আর নয়তো জীবনটাকেই কেবলই নরক বলে মনে হয়! এড়িয়ে চলবে তো দূরের কথা, সারাজীবন একতরফা ভাবে স্যাক্রিফাইস আর মানিয়ে নিতে নিতে মানুষ মৃ ত্যু র দুয়ারে পৌঁছে যায়! যাকোব ৩ অধ্যায় ১৪ পদে রয়েছে, “কিন্তু তোমাদের অন্তর যদি ঈর্ষায় তিক্ত হয় ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খায় ভরা থাকে, তবে সত্যের বিরুদ্ধে গর্ব করো না ও মিথ্যা বলো না।” প্রেরিত ২৪ অধ:্যায় ২৫ পদে রয়েছে, “পৌল স্বার্থপরতার, ইন্দ্রিয় দমনের এবং আগামী বিচারের বিষয় বর্ণনা করলে ফীলিক্স ভয় পেয়ে জবাবে বললেন, এখনকার মত যাও, উপযুক্ত সময় পেলে আমি তোমাকে ডেকে আনবো।” যাকোব ৩ অধ্যায় ১৬ পদে রয়েছে, “কেননা যেখানে ঈর্ষা ও স্বার্থপরতা, সেখানে অস্থিরতা ও সমস্ত দুষ্কর্ম থাকে।”
ঈর্ষাকাতর মানুষ থেকেও নিজেকে দূরে রাখা নিরাপদ। কেননা এসব মানুষের কর্মকাÐে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে। হিতোপদেশ ১০ অধ্যায় ১২ পদে রয়েছে, “দ্বেষ বিবাদের উত্তেজক, কিন্তু প্রেম সমস্ত অধর্ম আচ্ছাদন করে।” ১৮ পদে রয়েছে, “যে দ্বেষ ঢাকিয়া রাখে,তাহার ওষ্ঠাধর মিথ্যাবাদী; আর যে পরীবাদ রটায়, সে হীনবুদ্ধি।” কখনো কখনো দুধকলা দিয়ে আমরা অধিকাংশ মানুষ হিংসা নামক সাপ পুষছি। আপনার সকল নেককর্ম অক্ষত রাখতে চাইলে হিংসা ত্যাগ করুন। হিংসা নামক আগুন আমাদের জীবনে ও আমাদের জীবনের প্রাপ্যকে জ্বালিয়ে দেয়। আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন গীর্জা থেকে বের হয়েই আরেকজনকে নিয়ে সমালোচনা শুরু করে দেন। জেনে, না জেনে, বুঝে না বুঝে অন্যের নামে কতো ধরনের সমালোচনা শুরু করে দেন। তাহলে বাইবেল পাঠ, প্রার্থনা, প্রশংসায় কীভাবে আত্মীকভাবে আমরা উদ্দীপ্ত হতে পারি? কারো সম্পদ, উন্নতি দেখে হিংসা করা মানে তাকে হিংসা করা নয় বরং তাকে যেই ঈশ্বর এ প্রাচুর্য দিয়েছেন আমরা পরোক্ষভাবে সেই ঈশ্বরকেই হিংসা করি। অন্যের প্রতি হিংসার মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে ঈশ্বর তাকে যা’ দান করেছেন তা’ মানতে পারছেন না, তাই তার প্রতি হিংসা করছেন। এজন্য একজন প্রকৃত বিশ্বাসীর উন্নতিতে কষ্ট না পেয়ে বরং খুশি হওয়া উচিত। বহু মানুষ সামনে দেখান যে, তারা আমাদের কতো শুভাকাক্সক্ষী, কিন্তু আড়ালে ক্ষতি করার চেষ্টা করতে থাকেন। দেখা যায়, এমন মানুষেরা সর্বদা আপনার খুঁত ধরে বেড়ায়, প্রতিটা কথায় ব্যঙ্গ করে, প্রশংসা তাদের মুখে আসবেই না। যতোই ভালো কাজ করুন, অথবা তাদের উপকারও করুন না কেন, আপনার প্রশংসা কখনোই করবেন না তারা। এমনকি, কৃতজ্ঞতাও জানাবেন না। এদের থেকে সাবধান। হিতোপদেশ ১৯ অধ্যায় ৭ পদে রয়েছে, “দরিদ্রের ভ্রাতারা সকলে তাহাকে দ্বেষ করে, আরও নিশ্চয়, তাহার বন্ধুগণ তাহা হইতে দূরে যায়; সে আলাপের চেষ্টা করে, কিন্তু তাহারা নাই।” হিতোপদেশ ২৬ অধ্যায় ২৪ পদে রয়েছে, “যে দ্বেষ করে, সে ওষ্ঠাধরে ভাণ করে, কিন্তু মনের মধ্যে ছল রাখে;” হিতোপদেশ ৯ অধ্যায় ৮ পদে রয়েছে, “নিন্দুককে অনুযোগ করিও না, পাছে সে তোমাকে দ্বেষ করে; জ্ঞানবানকেই অনুযোগ কর, সে তোমাকে প্রেম করিবে।” আদিপুস্তক ৩০ অধ্যায় ১ পদে রয়েছে, “রাহেল যখন দেখলেন যে তিনি যাকোবের জন্য কোনও সন্তানধারণ করতে পারছেন না, তখন তিনি তাঁর দিদির প্রতি ঈর্ষাকাতর হলেন। তাই তিনি যাকোবকে বললেন, “আমাকে সন্তান দাও, তা না হলে আমি মারা যাব!” মথি ২০ অধ্যায় ১৫ পদে রয়েছে, “আমার অর্থ নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করার কি অধিকার আমার নেই? না, আমি সদয় বলে তুমি ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েছ?” রোমীয় ১০ অধ্যায় ১৯ পদে রয়েছে, “আমি আবার জিজ্ঞাসা করি: ইস্রায়েল জাতি কি বুঝতে পারেনি? প্রথমত, মোশি বলেন, “যারা কোনো প্রজা নয় তাদের দ্বারা আমি তোমাদের ঈর্ষাকাতর করে তুলব; যে জাতি কিছু বোঝে না তাদের দ্বারা আমি তাদের ক্রুদ্ধ করব।” রোমীয় ১১ অধ্যায় ১১ পদে রয়েছে, “আমি আবার জিজ্ঞাসা করি, তারা কি এজন্যই হোঁচট খেয়েছে, যেন পতিত হয় ও আর কখনও উঠে দাঁড়াতে না পারে? আদৌ তা নয়! বরং, তাদের অপরাধের কারণেই অইহুদিরা পরিত্রাণ লাভ করেছে, যেন ইস্রায়েলীরা ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে।”
পরনিন্দা-পরচর্চাকারীরা অনিরাপদ ব্যক্তি-তাদের এড়িয়ে চলাই উত্তম। হিতোপদেশ ১১ অধ্যায় ১৩ পদে রয়েছে, “পরনিন্দা পরচর্চা আস্থা ভঙ্গ করে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য মানুষ গোপনীয়তা বজায় রাখে।” জীবনে যারা এ জাতীয় মানুষের সাথে মিশেছে তারা ভুল করেছে। এদের ফাঁদে পা দিয়ে ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। কেননা এ ধরনের মানুষজন চ‚ড়ান্ত নেতিবাচক হয়ে থাকে; যে কোনো মুহূর্তে বিপদে ফেলতে পারে। ২ করিন্থীয় ১২ অধ্যায় ২০ পদে রয়েছে, “কেননা আমার ভয় হয়, পাছে উপস্থিত হইলে আমি তোমাদিগকে যেরূপ দেখিতে চাই, সেইরূপ না দেখি, এবং তোমরা আমাকে যে রূপ দেখিতে না চাও, সেইরূপ দেখ, পাছে কোন মতে বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, পরনিন্দা, কানভাঙ্গানি, দর্প, গÐগোল বাধিয়া উঠে;” হিতোপদেশ ১৬ অধ্যায় ২৮ পদে রয়েছে, “বিকৃতমনা লোক বিবাদ বাধায়, ও পরনিন্দা পরচর্চা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও বিচ্ছিন্ন করে দেয়।” হিতোপদেশ ২০ অধ্যায় ১৯ পদে রয়েছে, “পরনিন্দা পরচর্চা আস্থা ভঙ্গ করে; অতএব সেই লোককে এড়িয়ে চলো যে অতিরিক্ত কথাবার্তা বলে।” হিতোপদেশ ১৮ অধ্যায় ৮ পদে রয়েছে, “পরনিন্দা পরচর্চার কথাবার্তা সুস্বাদু খাদ্যের মতো লাগে; সেগুলি মানুষের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে।” হিতোপদেশ ২৬ অধ্যায় ২০ ও ২২ পদে রয়েছে, “কাঠের অভাবে আগুন নিভে যায়; পরনিন্দা পরচর্চার অভাবেও বিবাদ থেমে যায়। পরনিন্দা পরচর্চার কথাবার্তা সুস্বাদু খাদ্যের মতো লাগে; সেগুলি মানুষের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে।” তীত ২ অধ্যায় ৩ পদে রয়েছে, “সেভাবে, বয়স্ক মহিলাদেরও শিক্ষা দাও, যেন তাঁরা সম্ভ্রমের সঙ্গে জীবনযাপন করেন, যেন পরচর্চায় মত্ত বা মদ্যপানে আসক্ত না হয়ে পড়েন। কিন্তু যা কিছু মঙ্গলজনক, তাঁরা যেন সেই শিক্ষা দেন।”
যারা অবহেলা করে তাদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত। আমরা যেখানে বাস করি, সেখানে কেউ কেউ যদি আমাদের অবহেলা করে বা অবহেলার চোখে দেখে, তাহলে তাদেরকে এড়িয়ে চলাই ভালো। জীবনে চলার পথে প্রত্যেকের জীবনেই কোন না কোন সময় অবহেলা নামক এই আঘাতটা আসে। অবহেলা শব্দটি কত ছোট টাই না, কিন্তু এর প্রভাব কতই না বিশাল কত গভীর। প্রিয়জনের অবহেলা, পরিবারের অবহেলা, বন্ধু-বান্ধবের অবহেলা হৃদয়ের গভীরে যন্ত্রণার তীব্র আগুন জ্বালায়। মনের গভীরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে দাগ কেটে দেয়। মথি ২২ অধ্যায় ৫ পদে রয়েছে, “কিন্তু তাহারা অবহেলা করিয়া কেহ আপন ক্ষেত্রে, কেহ বা আপন ব্যাপারে চলিয়া গেল।” অবহেলা মানুষকে মানসিকভাবে মৃত করে তোলে। আমরা কেউই অবহেলিত হতে চাই না,কারণ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হল অন্যের নজরে আসতে চাওয়া।তবে যা চাওয়া হয় সবসময় তাই পাওয়া যায় না। দিনের পর দিন অবহেলিত হতে হতে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকে। তাই মানুষ যদি অবহেলাকে ,উপেক্ষাকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের মতো করে বাঁচতে পারে ,চলতে পারে তাহলেই তার জীবনের স্বার্থকতা। ইয়োব ৩৪ অধ্যায় ২৭ পদে রয়েছে, “কারণ তাহারা তাঁহার অনুগমন হইতে ফিরিল, তাঁহার সমস্ত পথ অবহেলা করিল;” হিতোপ ৩০ অধ্যায় ১৭ পদে রয়েছে, “যে চক্ষু আপন পিতাকে পরিহাস করে, নিজ মাতার আজ্ঞা মানিতে অবহেলা করে, উপত্যকার কাকেরা তাহা তুলিয়া লইবে, ঈগল পক্ষীর শাবকগণ তাহা খাইয়া ফেলিবে।” ১ তীমথিয় ৪ অধ্যায় ১৪ পদে রয়েছে, “তোমার অন্তরস্থ সেই অনুগ্রহ-দান অবহেলা করিও না, যাহা ভাববাণী দ্বারা প্রাচীনবর্গের হস্তার্পণ সহকারে তোমাকে দত্ত হইয়াছে।” ইব্রীয় ২ অধ্যায় ৩ পদে রয়েছে, “তবে এমন মহৎ এই পরিত্রাণ অবহেলা করিলে আমরা কি প্রকারে রক্ষা পাইব? ইহা ত প্রথমে প্রভুর দ্বারা কথিত, ও যাহারা শুনিয়াছিল, তাহাদের দ্বারা আমাদের নিকটে দৃঢ়ীকৃত হইল;” ইব্রীয় ৮ অধ্যায় ৯ পদে রয়েছে, “সেই নিয়মানুসারে নয়, যাহা আমি সেই দিন তাহাদের পিতৃগণের সহিত করিয়াছিলাম, যে দিন মিসর দেশ হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিবার জন্য তাহাদের হস্ত গ্রহণ করিয়াছিলাম; কেননা তাহারা আমার নিয়মে স্থির রহিল না, আর আমিও তাহাদের প্রতি অবহেলা করিলাম, ইহা প্রভু বলেন।”
নাটক প্রেমী মানুষগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। এ ধরনের লোকেরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নাটক তৈরি করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। এই ব্যক্তিরা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। এ কারণে তাদের থেকে দূরে থাকা জরুরি। এ জাতীয় মানুষ নাটক বানাতে বেশ পছন্দ করেন। এরা কখনও শান্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ সরবরাহ করে না; বরং সমস্যাগুলো আরো বড় করে তুলে। এ ধরণের মানুষ আবেগের মাধ্যমে গঠনমূলকভাবে কাজ করার ক্ষমতাকে বাধা দেয়। তারা মানুষের ভালো কাজের অগ্রগতির চেয়ে সমস্যাগুলো তৈরি করতে বেশ পটু ও পছন্দ করে। ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায় ৩১ পদে রয়েছে, “আর যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় করিতেছে না, যেহেতু এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে।” ২য় শমূয়েল ১৩ অধ্যায় ৫ পদে রয়েছে, “যোনাদব কহিল, তুমি আপন পালঙ্কের উপরে শয়ন করিয়া পীড়ার ভাণ কর; পরে তোমার পিতা তোমাকে দেখিতে আসিলে তাঁহাকে বলিও, অনুগ্রহ করিয়া আমার ভগিনী তামরকে আমার নিকটে আসিতে আজ্ঞা করুন, সে আমাকে রুটি খাইতে দিউক, এবং আমি দেখিয়া যেন তাহার হস্তে ভোজন করি, এই জন্য আমার সাক্ষাতেই খাদ্য পাক করুক।” হিতোপদেশ ১৩ অধ্যায় ৭ পদে রয়েছে, “কেহ আপনাকে ধনবান দেখায় কিন্তু তাহার কিছুই নাই; কেহ বা নিজেকে দরিদ্র দেখায় কিন্তু তাহার মহাধন আছে।”
গুজব ছড়ানোর মতো কিছু মানুষ সমাজে রয়েছে; যারা এগুলোকে তাদের খেলা বা মজা হিসেবে নেয়। যাত্রাপুস্তক ২৩ অধ্যায় ১ পদে রয়েছে, ”তুমি মিথ্যা গুজব ছড়াবে না; অন্যায় সাক্ষী হয়ে দুর্জনের সহায়তা করো না।” গুজব হল কোনো ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে প্রচারিত সত্যতা যাচাই বিহীন কিছু কথা বা ব্যাখ্যা। গুজব নানা প্রকারের হতে পারে। অতীত ঘটনা নিয়ে প্রচারিত গুজবকে ভ‚তাপেক্ষ গুজব বলা হয়। এদের কারণে সমাজ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুজব অনেক ক্ষেত্রে “ভুল তথ্য” এবং “অসঙ্গত তথ্য” এই দুই বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। “ভুল তথ্য” বলতে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যকে বুঝায় এবং “অসঙ্গতি তথ্য” বলতে বুঝায় ইচছাকৃতভাবে ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা। কেননা গুজব মানুষের উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এগুলো অপ্রয়োজনীয় চাপ বাড়ায়। মানুষকে বিভ্রান্তির দিকে পরিচালিত করে। যারা মানুষের সম্পর্কে গুজব ছড়ায় তাদের থেকে দূরে থাকুন। হিতোপদেশ ১৮ অধ্যায় ৮ পদে রয়েছে, “গুজবের কথা মিষ্টান্নের মত, তা অন্তরের অন্তঃপুরে নেমে যায়।” হিতোপদেশ ২৬ অধ্যায় ২২ পদে রয়েছে, ”গুজবের কথা মিষ্টান্নস্বরূপ, তা অন্তরের অন্তঃপুরে প্রবিষ্ট হয়।” রোমীয় ১ অধ্যায় ৩০ পদে রয়েছে, “কর্ণেজপ, পরীবাদক, ঈশ্বর-ঘৃণাকারী, দুর্বিনীত, উদ্ধত, আত্মশ্লাঘী, মন্দ বিষয়ের উৎপাদক, পিতামাতার অনাজ্ঞাবহ,…”
অন্যকে দিয়ে স্বার্থোদ্ধার প্রবণতা ব্যক্তিদের থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা দরকার। এদের জন্যে চিরজীবন খাটলেও নিজের কোনো উপকার হবে না। এরা নিজেদের জেেন্য যা’ দরকার তার সবই অন্যদের দিয়ে কৌশলে করিয়ে নিতে চায়। আর স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে কৌশলেই নিজেকে ঘুরিয়ে নেয়। এ জাতীয় মানুষ অসঙ্গতিতে বসবাস করে। এদেরকে সহজে বুঝতে পারা যায় না। কারণ, এরা ক্ষণে ক্ষণেই ভোল পাল্টায়। নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অনুযায়ী তারা তাদের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণও বদলাতে পটু। এমনকি উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে এরা মেকি দয়াও প্রদর্শন করে। যাকোব ৩ অধ্যায় ১৬ পদে রয়েছে, “কেননা যেখানে ঈর্ষা ও স্বার্থপরতা, সেখানে অস্থিরতা ও সমস্ত দুষ্কর্ম থাকে।” প্রেরিত ২৪ অধ্যায় ২৫ পদে রয়েছে, “পৌল স্বার্থপরতার, ইন্দ্রিয় দমনের এবং আগামী বিচারের বিষয় বর্ণনা করলে ফীলিক্স ভয় পেয়ে জবাবে বললেন, এখনকার মত যাও, উপযুক্ত সময় পেলে আমি তোমাকে ডেকে আনবো।” ফিলিপীয় ১ অধ্যায় ১৭ পদে রয়েছে, “কিন্তু অন্যেরা স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা বশতঃ মসীহ্কে তবলিগ করছে, আন্তরিকভাবে নয়, তারা মনে করছে বন্দীদশায় তারা আমাকে আরও কষ্ট দিতে পারবে।” ফিলিপীয় ২ অধ্যায় ৩ পদে রয়েছে, “স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা কিংবা অহংকারের বশে কিছুই করো না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেকে নিজের চেয়ে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর;” যাকোব ৩ অধ্যায় ১৪ পদে রয়েছে, “কিন্তু তোমাদের অন্তর যদি ঈর্ষায় তিক্ত হয় ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খায় ভরা থাকে, তবে সত্যের বিরুদ্ধে গর্ব করো না ও মিথ্যা বলো না।”
দায় স্বীকার করে না-এমন ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলতে হবে। হিতোপদেশ ২৮ অধ্যায় ১৩ পদে রয়েছে, “যে আপন অধর্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে।” এরা নিজেদের অনুভ‚তিগুলোর ব্যাপারে কোনো দায় স্বীকার করে না। কেউ যদি তাদের অনুভ‚তিগুলোর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে, তখন তারা সবসময়ই নিজেদের সাফাই গাইতে থাকে। আর এরা নিজেদের কোনো কাজেরই দায় স্বীকার করে না। খোঁড়া যুক্তিতে নিজেকে রক্ষা করে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে দেয়। হোশেয় ৫ অধ্যায় ১৫ পদে রয়েছে, “আমি আপন স্থানে ফিরিয়া যাইব, যে পর্যন্ত তাহারা দোষ স্বীকার না করে, ও আমার শ্রীমুখের অন্বেষণ না করে; সঙ্কটের সময়ে তাহারা সযতেœ আমার অন্বেষণ করিবে।” হিতোপদেশ ৩ অধ্যায় ৬ পদে রয়েছে, “তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” গীতসংহিতা ৮১ অধ্যায় ১৫ পদে রয়েছে, “সদাপ্রভুর বিদ্বেষিগণ তাঁহার কর্তৃত্ব স্বীকার করিবে; কিন্তু ইহাদের শাস্তি চিরকাল থাকিবে।” লেবীয় পুস্তক ৫ অধ্যায় ৫ পদে রয়েছে, “আর তদ্রƒপ কোন বিষয়ে দোষী হইলে সে আপনার কৃত পাপ স্বীকার করিবে।” গীতসংহিতা ১৮ অধ্যায় ৪৪ পদে রয়েছে, “শ্রবণমাত্র তাহারা আমার আজ্ঞাকারী হইবে; বিজাতি-সন্তানেরা আমার কর্তৃত্ব স্বীকার করিবে।”
অন্যায়ের জন্যে কখনো ক্ষমা চায় না-এমন ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলতে হয়। এরা কখনো কোনো ভুল কাজের জন্যে ক্ষমা চায় না। কারণ তাদের ধারণা তারা যা’ করে তার সবই ঠিক আছে। তারা মনে করে তারা নিজেরা কোনো ভুল করতে পারে না। এমনকি এরা নিজেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলোকেও শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতে চায়। আর এরা সবসময়ই নিজেকে ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করে অন্যের করুণা পেতে চায় এবং মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। পবিত্রশাস্ত্র আমাদের শিক্ষা দেয় যে, গীতসংহিতা ৩৮ অধ্যায় ১৮ পদে রয়েছে, “আমি আমার অপরাধ স্বীকার করি; আমার পাপের জন্য আমি অত্যন্ত অনুতপ্ত।” গীতসংহিতা ৫১ অধ্যায় ১৭ পদে রয়েছে, “ভগ্ন আত্মা আমার নৈবেদ্য, হে ঈশ্বর; ভগ্ন ও অনুতপ্ত হৃদয় হে ঈশ্বর, তুমি তুচ্ছ করবে না।” লূক ১৭ অধ্যায় ৩ পদে রয়েছে, “তাই নিজেদের সম্পর্কে সতর্ক থেকো। “তোমার ভাই পাপ করলে তাকে তিরস্কার কোরো এবং সে অনুতপ্ত হলে, তাকে ক্ষমা কোরো।”
আধিপত্য বিস্তারকারী মানুষ চুষে খাওয়া জোঁকের মতোদের এড়িয়ে চলা দরকার। এ ধরনের লোকেরা সবসময় আপনার উপর আধিপত্য চালাতে চাইবে। আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নানা ধরনের কাজ করতে বাধ্য করে। এ ধরনের লোকেরা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখার জন্যে এধরনের লোকদের থেকে দূরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। হিতোপদেশ ২৫ অধ্যায় ২৭ পদে রয়েছে, “অধিক মধু খাওয়া ভাল নয়, ভারী ভারী বিষয় অনুসন্ধান করা ভারী কথা।” লূক ১২ অধ্যায় ৫ পদে রয়েছে, “তবে কাহাকে ভয় করিবে, তাহা বলিয়া দিই; বধ করিয়া পশ্চাৎ নরকে নিক্ষেপ করিতে যাঁহার ক্ষমতা আছে, তাঁহাকেই ভয় কর; হাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাঁহাকেই ভয় কর।” ইব্রীয় ১৩ অধ্যায় ১০ পদে রয়েছে, “আমাদের এক যজ্ঞবেদি আছে, তাহার সামগ্রী ভোজন করিবার ক্ষমতা তাহাদের নাই, যাহারা তাম্বু সম্বন্ধে আরাধনা করে।” ১ করিন্থীয় ৮ অধ্যায় ৯ পদে রয়েছে, “কিন্তু সাবধান, তোমাদের এই ক্ষমতা যেন কোন ক্রমে দুর্বলদের ব্যাঘাতজনক না হয়।” হিতোপদেশ ৩ অধ্যায় ২৭ পদে রয়েছে, “যাহাদের মঙ্গল করা উচিত, তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিও না, যখন তাহা করিবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকে।”
আত্মপ্রেমী মানুষরা অদ্ভূত রকমের হয়ে থাকে। ১ করিন্থীয় ১০:২৪ পদে রয়েছে, “কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।” ওদের চলা বা মেশাটা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। ইংরেজিতে যাদের বলে ‘নারসিসিস্ট’ তাদের থেকে দূর থাকা উচিত। নিজেকে ভালোবাসার স্বাস্থ্যকর। তবে অতিরিক্ত আত্মপ্রেমীদের আশপাশে থাকা মানুষদের গুণতে হয় চরম মূল্য। এটা আমাদের জন্যে অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। ‘নারসিসিস্ট’দের প্রথমে বেশ মনোহর মনে হবে। তবে তারা হবে ধান্দাবাজ, একগুয়ে, সহজেই অন্যকে দোষ দেবে এবং নিজের পছন্দমতো কাজ না হলে দেবে শীতল মনোভাব। যদি কাছের কোনো মানুষের মাঝে এই ধরনের বৈশিষ্ট লক্ষ্য করেন তবে উচিত হবে তাদের থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রেখে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া। আত্মপ্রেমী মানুষের সঙ্গে থাকলে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতেই হবে। তবে তারা হবে ধান্দাবাজ, একগুয়ে, সহজেই অন্যকে দোষ দেবে এবং নিজের পছন্দমতো কাজ না হলে দেবে শীতল মনোভাব। যদি কাছের কোনো মানুষের মাঝে এই ধরনের বৈশিষ্ট লক্ষ্য করেন তবে উচিত হবে তাদের থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রেখে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া। সফনিয় ১:১২ পদে রয়েছে, “তখন তিনি প্রদীপ জ্বেলে জেরুশালেমের কোণে কোণে খুঁজবেন তাদের। যারা আত্মতুষ্টির নেশায় বিভোর হয়ে নিরুদ্বেগে কাল যাপন করে আর ভাবে, পরমেশ্বর ভাল কি মন্দ কিছুই করেন না,তাদের উপর নেমে আসবে তাঁর মহাদÐ।”
আত্ম-ধ্বংসাত্মক মানুষ হঠাৎ করে বিপদের কারণ হতে পারে-তাদেরকে এড়িয়ে উচিত। তীত ১:৭ পদে রয়েছে, “কেননা ইহা আবশ্যক যে, অধ্যক্ষ ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষ বলিয়া অনিন্দনীয় হন; স্বেচ্ছাচারী কি আশুক্রোধী কি মদ্যপানে আসক্ত কি প্রহারক কি কুৎসিত লাভের লোভী না হন,” যেমন-অতিরিক্ত মদ্যপান, নেশাখোর, আক্রমণাত্মক আচরণকারী-এ ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষরা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কারণ হতে পারে। তাদের ধ্বংসাত্মক মনোভাব মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই অবশ্যই তাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। হোশেয় ৪:১৮ পদে রয়েছে, “তাহাদের মদ্যপান শেষ হইলে তাহারা অবিরত বেশ্যাগমন করে; তাহার ঢালেরা অপমান অতিশয় ভালবাসে।” ১ পিতর ৪:৩ পদে রয়েছে, “কেননা পরজাতীয়দের বাসনা সাধন করিয়া, লমপটতা, সুখাভিলাষ, মদ্যপান, রঙ্গরস পানার্থক সভা ও ঘৃণার্হ প্রতিমাপূজারূপ পথে চলিয়া যে কাল অতীত হইয়াছে, তাহাই যথেষ্ট।”
আবেগ নিয়ে খেলা করে এমনদের এড়িয়ে চলা উচিত। হিতোপ ২৬:১৯ পদে রয়েছে, “তেমনি সেই ব্যক্তি, যে প্রতিবাসীকে প্রতারণা করে, আর বলে, আমি কি খেলা করিতেছি না?” সমাজে এমন মানুষের অভাব নেই। মানুষের সহানুভ‚তি পাওয়ার জন্যে যারা আবেগ নিয়ে খেলে, যাকে বলা যেতে পারে আবেগের পরজীবী, তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো। এধরনের মানুষ নিজেকে খুবই ভঙ্গুরভাবে উপস্থাপন করে অন্যের সহানুভ‚তি যোগাড় করবে। তারপর নিজের কাজ হয়ে গেলে সেই মানুষকেই অগ্রাহ্য করবে। যতক্ষণ না সেই মানুষটার প্রয়োজন ফুরাচ্ছে; ততোক্ষণ পর্যন্ত তারা হয় স্বার্থপর, একগুয়ে; চাহিদা পূরণের জন্যে অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচয় থাকলে দূরে সরে যাওয়া। কেননা আবেগ বিক্রি করে যারা সম্পর্ক করে তারা ভালোবাসা চায় না; তারা মানুষের শক্তিটাই শুষে নেবে। ইয়োব ৪১:৫ পদে রয়েছে, “পক্ষীর সঙ্গে যেমন খেলা করে, তেমনি কি তার সঙ্গে খেলা করিবে? তোমার যুবতীদের জন্য কি তাহাকে বাঁধিয়া রাখিবে?” যিশাইয় ১১:৮ পদে রয়েছে, “আর স্তন্যপায়ী শিশু কেউটিয়া সর্পের গর্তের উপরে খেলা করিবে, ত্যক্তস্তন্য বালক কৃষ্ণসর্পের বিবরের উপরে হস্ত রাখিবে।”
পরশ্রীকাতর ব্যক্তি হতে দূরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ! রোমীয় ১:২৯ পদে রয়েছে, “তারা সমস্ত রকমের অধার্মিকতা, নাফরমানী, লোভ, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতায় পরিপূর্ণ। তারা হত্যা, ঝগড়া, ছল ও দুর্বৃত্তিতে পূর্ণ;” এরা খুবই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির হয়ে থাকে। তারা কখনোই পরের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। হিংসা মানুষের মধ্যে থাকতেই পারে। সাধারণ সম্পর্কে হিংসা করা অনেক ক্ষেত্রেই ভালোবাসার লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সেই হিংসার কারণে যদি কেউ কষ্ট দেয়; জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলে এবং কোনো কাজ করতে বাধা দেয় বা প্রতিযোগিতায় নামে তবে সেই মানুষ থেকে দূরে থাকাই ভালো। প্রচÐ হিংসুটে মানুষ কখনো স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। আদিপুস্তক ৩০:১ পদে রয়েছে, “রাহেলা যখন দেখলেন, তিনি ইয়াকুবের জন্য কোন সন্তান জন্ম দিতে পারেন নি, তখন তিনি বোনের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ইয়াকুবকে বললেন, আমাকে সন্তান দাও, নতুবা আমি মরবো।” দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৫৪ পদে রয়েছে, “যখন সমস্ত নগর-দ্বারে দুশমনদের কর্তৃক তুমি অবরুদ্ধ ও ক্লিষ্ট হবে, তখন তোমার মধ্যে যে পুরুষ কোমল ও অতিশয় সুখ-ভোগী, আপন ভাইয়ের, বক্ষঃস্থিতা স্ত্রী ও অবশিষ্ট সন্তানদের প্রতি সে এমন ঈর্ষান্বিত হবে যে,” দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৫৭ পদে রয়েছে, “এমন কি, তার দুই পায়ের মধ্য থেকে বের হওয়া গর্ভফুল ও তার প্রসব করা শিশুদের উপরে ঈর্ষান্বিত হবে; কারণ অবরোধের সময়কার অভাবের দরুন সে এদেরকে গোপনে ভোজন করবে।” প্রেরিত্ ১৭:৫ পদে রয়েছে, “কিন্তু ইহুদীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে, বাজারের কয়েক জন দুষ্ট লোককে সঙ্গে নিয়ে ভিড় জমাল এবং নগরে গোলযোগ বাঁধিয়ে দিল। তারপর তারা পৌল ও সীলকে খুঁজে বের করে লোকদের কাছে আনবার জন্য যাসোনের বাড়ি আক্রমণ করলো;”
উপহাস করা মানুষ থেকে দূরে থাকা ও এড়িয়ে চলা জীবনের জন্যে ভালো। গীত ১০:১৩ পদে রয়েছে, “দুষ্ট কেন ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করে, মনে মনে বলে, তুমি অনুসন্ধান করিবে না?” গীতসংহিতা ৮০ অধ্যায় ৬ পদে রয়েছে, “তুমি প্রতিবাসীদের মধ্যে আমাদিগকে বিবাদের পাত্র করিতেছ, আমাদের শত্রæগণ একযোগে পরিহাস করে।” এদের কারণে আমাদের মানসিক যন্ত্রণা বেড়ে যেতে পারে। এ ধরনের মানুষ হয় বিরক্তিকর। তারা নতুন অভিজ্ঞতা থেকে দূরে থাকে। শুনতে চায়না কোনো কিছু। সবসময় বিতর্কে জড়ায়। তাদের বাজে ব্যবহার খারাপ কথার কোনো অর্থ থাকে না; তারা হয় সামাজিকভাবে অন্ধ। এধরনের মানুষ যদি আশপাশে থাকে এবং অস্বস্তিতে ফেলে তাহলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কোনো কারণই নেই। খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের সঙ্গে দ্রæত কথা শেষ করে সরে পড়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আদিপুস্তক ২১:৯ পদে রয়েছে, “আর মিসরীয়া হাগার অব্রাহামের নিমিত্ত যে পুত্র প্রসব করিয়াছিল, সারা তাহাকে পরিহাস করিতে দেখিলেন।” ২ রাজাবলি ১৯:২১ পদে রয়েছে, “সদাপ্রভু তাহার বিষয়ে যে কথা বলিয়াছেন, তাহা এই, অনূঢ়া সিয়োন-কন্যা তোমাকে তুচ্ছ করিতেছে ও তোমাকে পরিহাস করিতেছে; যিরূশালেম-কন্যা তোমার দিকে মাথা নাড়িতেছে।” ২ বংশাবলি ৩০:১০ পদে রয়েছে, “ধাবকগণ ইফ্রয়িম ও মনঃশি দেশের নগরে নগরে ও সবূলূন পর্যন্ত গেল; কিন্তু লোকেরা তাহাদিগকে পরিহাস ও বিদ্রƒপ করিল।” ২ বংশাবলি ৩৬:১৬ পদে রয়েছে, “কিন্তু তাহারা ঈশ্বরের দূতদিগকে পরিহাস করিত, তাঁহার বাক্য তুচ্ছ করিত, ও তাঁহার ভাববাদিগণকে বিদ্রƒপ করিত; তন্নিমিত্ত শেষে আপন প্রজাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ উত্থিত হইল, অবশেষে আর প্রতিকারের উপায় রহিল না।” ইয়োব ৩০:১ পদে রয়েছে, “সম্প্রতি, যাহারা আমা হইতে অল্প বয়স্ক, তাহারা আমাকে পরিহাস করে; আমি তাহাদের পিতাদিগকে আমার পালরক্ষক কুকুরদের সহিত রাখিতেও অবজ্ঞা করিতাম।” ইয়োব ৩৯:৭ পদে রয়েছে, “সে নগরের কলরবকে পরিহাস করে, চালকের শব্দ শুনে না।” ১৮ পদে রয়েছে, “সে যখন পক্ষ তুলিয়া গমন করে, তখন অশ্বকে ও তদারোহীকে পরিহাস করে।” ২২ পদে রয়েছে, “সে আশঙ্কাকে পরিহাস করে, উদ্বিগ্ন হয় না, খড়্গের সম্মুখ হইতে ফিরে না,” গীত ৫৯:৮ পদে রয়েছে, “কিন্তু, সদাপ্রভু! তুমি তাহাদিগকে পরিহাস করিবে, তুমি সমস্ত জাতিকে বিদ্রƒপ করিবে।” হিতোপ ১:২৬ পদে রয়েছে, “এই জন্য তোমাদের বিপদে আমিও হাসিব, তোমাদের ভয় উপস্থিত হইলে পরিহাস করিব;” হিতোপ ১৭:৫ পদে রয়েছে, “যে দীনহীনকে পরিহাস করে, সে তাহার নির্মাতাকে টিট্কারি দেয়; যে বিপদে আনন্দ করে, সে অদÐিত থাকিবে না।” হিতোপ ৩০:১৭ পদে রয়েছে, “যে চক্ষু আপন পিতাকে পরিহাস করে, নিজ মাতার আজ্ঞা মানিতে অবহেলা করে, উপত্যকার কাকেরা তাহা তুলিয়া লইবে, ঈগল পক্ষীর শাবকগণ তাহা খাইয়া ফেলিবে।” যিশাইয় ৩৭:২২ পদে রয়েছে, “সদাপ্রভু তাহার বিষয়ে যে কথা বলিয়াছেন, তাহা এই, “অনূঢ়া সিয়োন-কন্যা তোমাকে তুচ্ছ করিতেছে ও তোমাকে পরিহাস করিতেছে; যিরূশালেম-কন্যা তোমার দিকে মাথা নাড়িতেছে।” যিরমিয় ৪৮:২৬ পদে রয়েছে, “তোমরা তাহাকে মত্ত কর, কারণ সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বড়াই করিত। আর মোয়াব বমন করিয়া লুন্ঠন করিবে, এবং আপনিও পরিহাস-পাত্র হইবে।” ২৭ পদে রয়েছে, “ইস্রায়েল কি তোমার পরিহাস-পাত্র ছিল না? সে কি চোরের মধ্যে ধরা পড়িয়াছিল? তুমি তাহার বিষয় যতবার কথা বল, ততবার মাথা নাড়িয়া থাক।” ৩৯ পদে রয়েছে, “সে কেমন ভগ্ন হইল! লোকে কেমন হাহাকার করিতেছে! মোয়াব লজ্জা প্রযুক্ত কেমন পৃষ্ঠ ফিরাইয়াছে! এইরূপে মোয়াব আপনার চারিদিকের সমস্ত লোকের পরিহাস-পাত্র ও ভয়স্থান হইবে।” প্রেরিত্ ২:১৩ পদে রয়েছে, “অন্য লোকেরা পরিহাস করিয়া বলিল, উহারা মিষ্ট দ্রাক্ষারসে মত্ত হইয়াছে।” গালাতীয় ৬:৭ পদে রয়েছে, “তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।”
প্রতিজ্ঞা করে যারা প্রতিজ্ঞা রাখতে পারে না-তাদের এড়িয়ে চলা উচিত। ২ পিতর ৩ অধ্যায় ৪ পদে রয়েছে, “এবং বলিবে, তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।” ইব্রীয় ৪ অধ্যায় ১ পদে রয়েছে, “অতএব আমাদের ভয় থাকা উচিত, পাছে তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিবার প্রতিজ্ঞা থাকিলেও এমন বোধ হয় যে, তোমাদের কেহ তাহা হইতে বঞ্চিত হইয়াছে।” যেমন-যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে সারাক্ষণ আঘাত করে, তারপর প্রতিজ্ঞা করে আর করবো না; কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা বেশিদিন রাখে না-এমন মানুষের সঙ্গে বসবাস করার চাইতে দ্রæত সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া হবে ভালো পন্থা। তাছাড়া সব আঘাতই যে শারীরিক হবে তা নয়; কেউ কেউ মানসিকভাবে আঘাত করতে ওস্তাদ। ২ পিতর ২ অধ্যায় ১৯ পদে রয়েছে, “তাহারা তাহাদের কাছে স্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু আপনারা ক্ষয়ের দাস; কেননা যে যাহার দ্বারা পরাভ‚ত, সে তাহার দাসত্বে আনীত।” নহিমিয় ৫ অধ্যায় ১৩ পদে রয়েছে, “আবার আমি আপন কোলের কাপড় ঝাড়িয়া কহিলাম, যে কেহ এই প্রতিজ্ঞা পালন না করে, ঈশ্বর তাহার গৃহ ও পরিশ্রমের ফল হইতে তাহাকে এইরূপ ঝাড়িয়া ফেলুন, এইরূপে সে ঝাড়া ও শূন্য হউক। তাহাতে সমস্ত সমাজ কহিল, আমেন, এবং সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিল। পরে লোকেরা সেই প্রতিজ্ঞানুসারে কর্ম করিল।”
অত্যাচারীর ফিরে আসলেও যদি সে পরিবর্তিত না হয়-তবে এড়িয়ে চলাই ভালো। হিতোপদেশ ১৬ অধ্যায় ২৯ পদে রয়েছে, “অত্যাচারী প্রতিবাসীকে লোভ দেখায়, এবং তাহাকে মন্দ পথে লইয়া যায়।” অত্যাচারীরা এমনই হয়। সুতরাং শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত করা ব্যক্তিরা অনেক সময় জীবনে ফিরে আসে। সেটা হতে পারে পুরানো ব্যক্তি বা নতুন কেউ। এধরনের মানুষ ফিরে আসতে চাইলে অতীতের কথা চিন্তা করা উচিত। ফিরে আসাটা যতোই প্রেমময় হোক, অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে ভালো রাখার জন্যে-তাদের থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়। হোশেয় ৫ অধ্যায় ২ পদে রয়েছে, “অত্যাচারীরা হত্যাকার্যে গভীরে নামিয়াছে, কিন্তু আমি তাহাদের সকলকে শাস্তি দিব।”
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন