

সম্পাদকীয়
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম দখল করেছে সংবাদটি। আমরা আঁতকে উঠেছি সংবাদটি পড়ে। তবে গতবারও একই অবস্থানে ছিলাম আমরা। তখনই অবশ্যই আমাদের উদ্যোগীহওয়া উচিত ছিলো বায়ুদূষণরোধে পদক্ষেপের। কিন্তু আমরা তা’ করতে পারিনি।
আর ঢাকার অবস্থা বিস্তারিত আলোচনা না করলেও চলবে-সেটা আমাদের সকলেরই জানা কথা। বাংলাদেশের গড় বায়ুদূষণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে ১৫ গুণ। এটা আমাদের আরো বেশি হতবাক করে। আমাদের পদক্ষেপ নেয়া দ্রুত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক গবেষণা করে। ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪-এ আমরা তেমন কোনো উন্নতি করতে পারিনি। আমরা দেখেছি, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস আগের ৯ বছরের চেয়ে বেশি দূষিত ছিল। চলতি বছরে বায়ুদূষণ আরও বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে দেশের বায়ুমান নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, পিএম ২.৫ মূলত ধূলিকণা। এটি স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। কণাগুলো ফুসফুস ও রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে থাকে। দেশের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে যারা দায়িত্বে, তাদের এখন অনেক বেশি সজাগ হওয়ার দরকার। নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক দুর্বিষহ অবস্থা অপেক্ষা করছে।

আমাদের নগরসহ পুরো দেশের জন্যই জরুরি ভিত্তিতে বায়ুদূষণরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব উৎস থেকে দূষণ হচ্ছে, সেখানে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর সময় এসেছে। এখানে কোনো আপসের সুযোগ নেই। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলায় পথ চলাই কঠিন।
সার্বিকভাবে বায়ুদূষণে আগের বছরের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। শীর্ষ অবস্থান থেকে বাংলাদেশের স্থান হয়েছে দ্বিতীয়। আর নগরীগুলোর মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন না পরিবেশবাদী ও গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, দূষণ আরও বিস্তৃত হচ্ছে, এবারের প্রতিবেদন সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। কারণ, আগে দেখা গেছে যে রাজধানীর তুলনায় দেশের সার্বিক গড় বায়ুমান কিছুটা ভালো থাকত। কিন্তু এবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ এবং দেশের সবচেয়ে দূষিত নগরী ঢাকার বায়ুর মান প্রায় একই। ঢাকায় বায়ুদূষণ বাড়ছেই, বাড়ছে কাশি, শ্বাসকষ্ট। বায়ুদূষণ মানব স্বাস্থ্যের প্রতি একটি বড় হুমকি। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ বায়ুদূষণ। আর পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের মৃত্যুরও দ্বিতীয় কারণ এটি। বাংলাদেশেও দূষণে ক্ষতি কম নয়। বায়ুদূষণ শুধু নাগরিক জীবনে স্বাস্থ্যগত সমস্যাই তৈরি করে না। এর মাধ্যমে এই দেশ এবং নগর সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণারও সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বায়ুদূষণ বিনিয়োগ ও পর্যটনের মতো খাতেও প্রভাব ফেলে। দূষণ রোধে সরকারি যেসব তৎপরতা আছে, সেগুলো কার্যকর নয়। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বায়ুদূষণ হল বায়ুম-লে এমন সব পদার্থের উপস্থিতির কারণে হওয়া দূষণ যা মানুষ এবং অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিংবা জলবায়ু বা পদার্থের ক্ষতি করে। বায়ুর গুণমান পৃথিবীর জলবায়ু এবং বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। বায়ুদূষণের অনেক প্রভাবক বা উৎস একইসঙ্গে গ্রীনহাউজ নির্গমনেরও উৎস, যেমন- জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো। বায়ুদূষণ শ্বাসনালির সংক্রমণ, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি, স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ক্যান্সার সহ দূষণজনিত বেশ কয়েকটি রোগের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির কারণ। ক্রমবর্ধমান প্রমাণগুলো থেকে ধারণা করা হয় যে বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আইকিউ স্কোর বা বুদ্ধ্যঙ্ক হ্রাস, মেধার দুর্বলতা, মানসিক ব্যাধি যেমন বিষণœতা[৮] এবং প্রসবকালীন ক্ষতিকারক স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে যুক্ত হতে পারে। মানুষের স্বাস্থ্যের উপর নিম্নমানের বায়ুর প্রভাব সুদূরপ্রসারী, এটি প্রধানত শরীরের শ্বসনতন্ত্র এবং সংবহন তন্ত্রকে প্রভাবিত করে। বায়ুদূষক পদার্থ বা উৎসগুলোর প্রতি ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে একজন ব্যক্তি কোন ধরনের দূষকের সংস্পর্শে আসছে, প্রভাবকের মাত্রা, ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং বংশগতির উপর।
তাছাড়া আরো বিভিন্ন খাতে আমরা ক্ষতির শিকার হচ্ছি বায়ুদূষণের কারণে। বায়ুদূষণের কারণে উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং জীবনমানের অবনতি হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতি বছর ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে অনুমান করা হয়।স্বাস্থ্য ও মৃত্যুহারের উপর প্রভাবের পাশাপাশি সমসাময়িক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এটি একটি অতিরিক্ত খরচ, যদিও ক্ষেত্রবিশেষে এটি কিছু নিয়ন্ত্রিত বা নিরীক্ষিত হতে পারে। মানুষের কার্যকলাপ, যদিও কখনও কখনও মাঝারিভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং নিরীক্ষণ করা হয়। বায়ুদূষণ কমানোর জন্য বিভিন্ন দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং কৌশল পাওয়া যাচ্ছে। বায়ুদূষণের নেতিবাচক প্রভাব সীমিত করার জন্য বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় আইন ও প্রবিধান তৈরি করা হয়েছে। যেসব জায়গায় স্থানীয় নিয়মগুলো সঠিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে সেখানে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
আমরা মনে করি, বায়ুদূষণরোধের জন্যে এখন থেকে আমাদের শিক্ষা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজের শিশুদের এ বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো বলে মনে করি।
প্রকাশ : বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ খ্রি.
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
