

আফজাল হোসেন :
১৯৮৬ তে মনা দিল্লীতে পড়াশোনা করতে যায়। ফিরে আসে ১৯৯০ তে। তারপর আমাদের বিয়ে হয়। ক্রমে আরও বদলালো সম্পর্কের রূপ। আমরা বাবা মা হলাম, দুই ছেলে অনেকটা বড়ও হয়ে গেলো।

লম্বা সময় পার করে দেবার পর বছর দুয়েক আগে একদিন মনে হয়, বহুকাল আমরা দুজন, শুধু দুজন কোথাও বেড়াতে যাইনি। মনা ঠিক করে, দিল্লী যাবে। তার বহু স্মৃতির শহর। সেখানে গেলে ছাত্রজীবনের পরম বান্ধবীর সাথে দেখা হবে। ভেবে, সেকি আনন্দ ও উত্তেজনা- তার মনে দিনরাত লাফায় আর ঝাঁপায়।
বান্ধবী থাকে উত্তর প্রদেশের সুলতানপুরে। সেটা লাক্ষ্নৌর কাছাকাছি। মনা দিল্লীতে আসছে জেনে সেও উচ্ছসিত হয়ে জানায়, স্বপরিবারে আসবে দিল্লী শহরে।
গেলাম আমরা। দেখা হওয়াটা ছিল- সিনেমাতে ছোটকালে কোন এক মেলায় গিয়ে দুই বোন হারিয়ে গিয়েছিল তারপর কুড়ি বছর আবার দুজনকে ফিরে পেলে, যেমন হয়, অনেকটা তেমনই।
তারা এবং দিল্লীতে বাস করা বান্ধবীর বোনের পুরো পরিবার আমাদের সন্মানে শহরের একটা নামকরা রেস্তোরাঁয় নৈশভোজের আয়োজন করে। সেই সন্ধ্যা, নৈশভোজ হয়ে ওঠে জীবনের বিশেষ অভিজ্ঞতা, অসাধারণ এক স্মৃতি।
সেদিন জানতে, বুঝতে পারি- রক্তের সম্পর্ক না থাকা মানুষদের মধ্যেও অধিক ঘনত্বের আত্মিক সম্পর্কও জগতে সংঘটিত হয়, হতে পারে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম, সে বিস্মিত হওয়ার মতো সম্পর্কের মধুর রূপ একটু একটু করে খুলছে, ফুলের মতো পাঁপড়ি মেলছে।
পরষ্পরের পাশে বসে থাকা মানুষ দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিল, বাস্তব নয়, সিনেমা বা আঁকা ছবির মতো- মনুষ্য সম্পর্ক। দেখতে দেখতে মনে হয়, জগত, দেশ ও মানুষ নিয়ে আমাদের কতরকমের ভাবনা, হতাশা, অস্বস্তি বিরাজ করে- কিন্তু প্রচলিত দেখার বাইরেও এই দুনিয়ায় সৌন্দর্য শোভা, সভ্যতা ভালোমতোই টিকে আছে, থাকে।
আমাদের দুজনের সংসারজীবন অনেক আগেই তিরিশ পেরিয়েছে। এ দীর্ঘকালে স্বামী হিসাবে স্ত্রীর বান্ধবী সম্পর্কে অনেক খবরই জানতে পেরেছি। দিল্লী থেকে পড়াশোনা শেষ করে সুলতানপুরে চলে যাওয়ার পর বান্ধবীর কবে, কিভাবে বিয়ে হলো, স্বামী কি করে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেমন- কোনও বিষয়ই বোধহয় অজানা নেই আমার।
সময়মত জেনেছি তেজী র প্রথম বাচ্চা হওয়ার খবর। দ্বিতীয়জনের জন্ম এবং তাদের বেড়ে ওঠা সম্পর্কেও বিভিন্ন সময়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। এ ও জানি- মেয়ে বড়, ছেলেটি ছোট। তাদের বয়স উনিশ ও সতেরো হবে।
সন্তানদ্বয় স্বচক্ষে সেই প্রথম মনাকে দেখলো কিন্তু পরস্পরের সম্পর্ক, হাব ভাব দেখে মোটেও মনে হচ্ছিল না- তিনজনের এই পয়লাবার দেখা হয়েছে। মনে হচ্ছিল, এরা অনেকদিন ধরে কাছের, আত্মীয়, রক্তের সম্পর্কযুক্ত।
হিন্দী ও ইংরেজিতে কথা বলে তারা। তারা জানে, তাদের মা ও মায়ের বান্ধবী এক ধর্মের নয়। দুই ধর্মের এবং দুই দেশের। সম্পর্কের আয়তন, উচ্চতার কাছে দুই পার্থক্য একটুও হালে পানি পাচ্ছিল না।
মনা ও তেজীকে দেখে মনে হচ্ছিল- তারা এখনও কলেজ পডুয়া। আমি অনেক অনেকদিন পর বিয়ের সময়কালের মনাকে দেখতে পাই।
সাক্ষাতের পর থেকে চারপাশের সবাইকে ভুলে গেছে মনা আর তেজী। বহু বহু বছর ধরে তাদের মনে অনেক কথা জমা হয়ে আছে, আগামী কিছু সময়ের মধ্যেই সব সেরে নিতে হবে- এমন অস্থিরতা দুই মানুষে।
তেজী র দুই সন্তান তাতে খুবই অসন্তুষ্ট। তাদের অস্থিরতা “মওসির” সাথে অনেক কথা বলার আছে, তাদেরকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
হিন্দী ভাষায় “মওসি” সম্বোধন মানে খালা। সম্বোধন হিন্দী ভাষাতে হলেও সম্পর্কের যে উষ্ণতা অনুভব করতে পারছিলাম- তাতে তিল পরিমানও বাংলা হিন্দির ছিল না, ছিলনা জাত পাত ধর্মের গন্ধও।
অতি মধুর, আনন্দময় সম্পর্কের সৌন্দর্য। যা অনেকদিন ধরে তিলে তিলে রচনা করা। মা বহুবছর ধরে একটু একটু করে ভালো লাগার গল্প শুনিয়েছে সন্তানদের। সে গল্পে গল্পে সন্তানেরা মনের মধ্যে একটা মানুষকে এঁকে রেখেছিল- যে মানুষ অন্য দেশের, অন্য ধর্মের, দূরের নয়, মায়ের অতি কাছের, প্রিয় মানুষ। কতটা প্রিয়- তা কেউ বলে বলে বোঝায় না, ভাবে, অনুচ্চারিত ভাষায় মন বিবিধ সময়ে তার প্রমান দেয়, দিতে থাকে।
মওসি, তুমি এখনও নাচ করো?
তোমাদের ছেলেরা আমাদের সম্পর্কে জানে?
মাসাল্লাহ তুমি একেবারে আগের মতোই দেখতে আছো।
মাম্মি একটু মুটিয়ে গেছে।
এখন সে নিয়মিত ইয়োগা করে,
ইনশাল্লাহ আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
তোমরা দুজনেই শিক্ষকতা করবে ঠিক করা ছিল, তুমি ছেড়ে দিয়েছিলে কেনো?
রেলের বগির মতো একটার পিছনে আর একটা প্রশ্ন ছুটতেই থাকে। প্রশ্ন বা উত্তরে নয়, অবাক হয়ে আটকে থাকি ওদের মুখে ইনশাল্লাহ ও মাশাল্লাহ উচ্চারণে। “যদি আল্লাহ চান” এবং “আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে বলে”- এ দুই ভাব প্রকাশের জন্য মনার অনেককালের অভ্যাস বাক্যের আগে ইনশাল্লাহ মাশাল্লাহ জুড়ে দেয়া।
একসাথে থাকতে থাকতে সে অভ্যাস তেজী র মধ্যেও ঢুকে পড়েছিল- মনার মুখে গল্পে গল্পে তা শুনেছিলাম। দেখতে পাই- সে শোনা কথা অনেক অনেকদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। মা থেকে ছেলেমেয়েরাও উচ্চারণ করা শিখেছে ইনশাল্লাহ, মাশাল্লাহ।
গোঁড়ামিপনা, সংকীর্ণমনা, উদার দৃষ্টিকোণ- কোনটায় মানুষ ও পৃথিবীর উপকার হয়? কোনটা টিকে থাকলে মানুষ ও জগৎব্যপী মানুষে মানুষে যে সম্পর্ক, তা আকর্ষণীয়, সুন্দর, বিশেষ মনে হয়?
পৃথিবী, দেশ, মানুষ- সবকিছুই নানা অজুহাতে এবং বেশ আগ্রহের সাথেই নিত্য ভাগ হচ্ছে। জানা কথা, ভাগ হয়ে যাওয়া মানে ক্ষুদ্র হয়ে যাওয়া- তবু ক্ষুদ্র হওয়াকেই বহু মানুষ স্বার্থকতা, প্রাপ্তি ও বিশেষ গৌরবের বলে বিবেচনা করে। পন করে ক্ষুদ্র হয়, ক্ষুদ্রতর হতে চায়।
প্রকাশ : বৃহস্পতি বার, ২৭ মার্চ ২০২৫ খ্রি.
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
