

সম্পাদকীয়
প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ, স্পিডবোট’সহ নদীপথের ত্রাস কিবরিয়া গ্যাংয়ের ৫ সহযোগী গ্রেপ্তার’ শিরোনামে সংবাদটি পাঠককূল হতবাক হয়েছে। বারংবার একই ঘটনা ঘটে চলেছে; যা’ আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি, নদীপথে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমরা জানি, নদীমাতৃক বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় অভ্যন্তরীণ নৌপথের ভ‚মিকা অপরিসীম। লাখ লাখ মানুষ এবং কোটি কোটি টাকার পণ্য প্রতিদিন এ জলপথ ব্যবহার করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী, বিশেষ করে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মোহনপুর সংলগ্ন জলপথ, কুখ্যাত ডাকাত চক্রের ত্রাসের শিকার ছিলো। সম্প্রতি বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মোহনপুর আউটপোস্ট কর্তৃক কুখ্যাত কিবরিয়া মিয়াজি গ্যাংয়ের পাঁচ সহযোগী গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছ থেকে বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও স্পিডবোট উদ্ধার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ।

এ সফল অভিযানটি দু’টি মৌলিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রথমত, নদীপথে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা আধুনিক সরঞ্জাম, যেমন স্পিডবোট ও ওয়াকি টকি ব্যবহার করে অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অস্ত্রের মুখে চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপহরণের মতো অপরাধমূলক কর্মকাÐ সাধারণ নৌ-যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের জন্যে এক বিভীষিকা সৃষ্টি করেছিলো। এ অভিযান প্রমাণ করে যে, জলদস্যুতা বা জলপথের সন্ত্রাস কেবল কল্পকাহিনী নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার জন্যে এক বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ গ্রেপ্তার কোস্ট গার্ডের দৃঢ় সংকল্প এবং সক্ষমতার প্রমাণ দেয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের হাতেনাতে আটক করা এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা অভ্যন্তরীণ নৌপথকে নিরাপদ রাখার বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রæতির প্রতিফলন। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হকের বক্তব্যÑ“অভ্যন্তরীণ নৌপথকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে। নদীপথে কোনো সন্ত্রাসী বা অপরাধীচক্রকে ছাড় দেওয়া হবে না”Ñএ দৃঢ়তা জলপথ ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করে। এ সাফল্যের পরও আমাদের মনে রাখতে হবে, কেবল কয়েকজন সহযোগীকে আটক করাই চ‚ড়ান্ত সমাধান নয়। এ গ্যাং-এর মূল হোতা কিবরিয়া মিয়াজিসহ অন্যান্য অপরাধীদের দ্রæত আইনের আওতায় আনা অপরিহার্য। পাশাপাশি, এ চক্রগুলি কোথা থেকে এ ধরনের আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে, সেই উৎস খুঁজে বের করে তা’ বন্ধ করাও জরুরি। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবশ্যই জলপথের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কোস্ট গার্ডকে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম, জনবল এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে। একই সাথে, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে তারা কোনো প্রকার ভয়ভীতি ছাড়াই অপরাধমূলক কর্মকাÐের তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারে। জলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়বে এবং নদীপথ ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ও নিরাপদ হবে। কোস্টগার্ডের এ উদ্যোগের পথ ধরে, আমরা আশা করি, খুব দ্রæতই নদীমাতৃক বাংলার জলপথ সবধরনের ত্রাসমুক্ত হয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫






