নায়িকা দিঘী: শিশুশিল্পী থেকে পূর্ণাঙ্গ নায়িকা হয়ে ওঠার গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক :

নায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, যিনি সবার কাছে শুধু “দিঘী” নামে পরিচিত, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নাম। শিশুশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করে তিনি আজ পূর্ণাঙ্গ নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার অভিনয় জীবন, পারিবারিক পটভূমি, সংগ্রাম, সাফল্য এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন—সব মিলিয়ে দিঘীর গল্প এক অনুপ্রেরণার নাম।

শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি

দিঘীর জন্ম ২৬ অক্টোবর ২০০২ সালে, চট্টগ্রামের লক্ষ্মীপুরে। তার বাবা সুব্রত চক্রবর্তী এবং মা দোয়েল—উভয়েই ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত মুখ। মা দোয়েল ছিলেন একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, যিনি বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বাবাও ছিলেন একজন সফল অভিনেতা। এই সাংস্কৃতিক পরিবেশেই দিঘীর শৈশব কেটেছে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়, যা পরে তাকে পরিণত করে একজন সফল শিশুশিল্পীতে।

শিশুশিল্পী হিসেবে উত্থান

দিঘীর প্রথম পরিচিতি আসে একটি গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপন থেকে, যেখানে তার অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়। এরপর কাজী হায়াৎ পরিচালিত “কাবুলিওয়ালা” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। এই ছবিতে তার অভিনয় এতটাই প্রশংসিত হয় যে, তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর “চাচ্চু”, “দাদী মা”, “এক টাকার বউ”, “অবুঝ শিশু”, “বাবা আমার বাবা” সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় করে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

মায়ের মৃত্যু ও বিরতির সময়

২০১১ সালে দিঘীর মা দোয়েল মারা যান। এই ঘটনা তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। মায়ের মৃত্যু এবং পড়াশোনার কারণে তিনি অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। এই সময়টায় তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেন ভবিষ্যতের জন্য। মিডিয়া থেকে দূরে থাকলেও তার জনপ্রিয়তা কমেনি।

নায়িকা হিসেবে পুনরায় আত্মপ্রকাশ

দীর্ঘ বিরতির পর ২০২১ সালে “তুমি আছো তুমি নেই” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দিঘী পূর্ণাঙ্গ নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন। এই ছবিতে তার অভিনয় ছিল পরিণত, আত্মবিশ্বাসী এবং দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য। এরপর “টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই”, “মুজিব: একটি জাতির রূপকার”, এবং “শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়” ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করেন যে, তিনি শুধু শিশুশিল্পী নন, একজন পূর্ণাঙ্গ নায়িকা।

ব্যক্তিগত জীবন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

দিঘী বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সক্রিয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব—সব জায়গাতেই তার উপস্থিতি রয়েছে। তার ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য তিনি নিয়মিত ছবি, ভিডিও এবং লাইভ শেয়ার করেন।

তৌহিদ আফ্রিদির সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও দিঘী সবসময় ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যক্তিগত রাখার চেষ্টা করেন। মিডিয়ার চাপে থেকেও তিনি নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

নায়িকা হিসেবে দিঘীর যাত্রা সহজ ছিল না। শিশুশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে ওঠার পথে তাকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেকেই তাকে শিশুশিল্পীর ছাঁচে দেখতে চেয়েছেন, কিন্তু তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে সেই ছাঁচ ভেঙে দিয়েছেন। সমালোচনার মুখেও তিনি হাসিমুখে এগিয়ে গেছেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

দিঘী এখন আরও পরিণত চরিত্রে অভিনয় করতে চান। তিনি চান এমন গল্পে কাজ করতে, যেখানে নারীর শক্তি, সংগ্রাম এবং সাফল্য ফুটে ওঠে। তার স্বপ্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে কাজ করার, এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার।

দিঘীর জীবন এক চলমান গল্প। শিশুশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে ওঠার এই যাত্রা শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব এবং সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন—যদি ইচ্ছা থাকে, তবে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব।

বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

ডায়াবেট্সি হলে কি করবেন?

শেয়ার করুন
প্রিয় সময় ও চাঁদপুর রিপোর্ট মিডিয়া লিমিটেড

You might like

About the Author: priyoshomoy