পিতার আর্তনাদ : ক্ষুদীরাম দাস

ক্ষুদীরাম দাস :

বয়স্ক লোকটি বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছে, একজন মধ্যবয়সী এখানে বট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। লোকটি বেশ সন্দেহজনক বলেই মনে হয়। কিন্তু লোকটির চেহারায় সে রকম কিছুই বোঝা যায় না।

একজন অপরিচিত ব্যক্তি এখানে কয়েকদিন পর পর এসে দাঁড়িয়ে থাকবে, এটা তো এলাকার লোকজন সন্দেহ করবেই। তাই বয়স্ক লোকটি একটু এগিয়ে যেতে চাইলো লোকটি কিছু বলার জন্যে।

পরে আবার চিন্তা করলো, একা না গিয়ে এলাকার কিছু মানুষকে বিষয়টি জানানো দরকার। লোকটি দেখলো চৌধুরী সাহেব ভরদুপুরে ছাতা মাথায় দিয়ে এদিকেই আসছেন। চৌধুরী সাহেব কাছে এসেই বললেন ঃ রাজ্জাক ভাই, কেমন আছেন? আপনাকে কেনো জানি খুবই চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে!


রাজ্জাক চৌধুরী সাহেবের হাত টেনে ধরে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলেন। তারপর ফিস ফিস করে বললেন ঃ চৌধুরী সাহেব শুনেন, আপনি বটগাছের নিচে দেখবেন একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।
চৌধুরী সাহেব ঃ তাতে কী হয়েছে? আপনার কী তাতে?
রাজ্জাক ঃ আরে ভাই, লোকটাকে আমার কেমন জানি সন্দেহ করছে।
চৌধুরী সাহেব ঃ কেন সন্দেহ হচ্ছে। লোকটা কিছু করেছে কিনা?
রাজ্জাক ঃ এর আগে কখনো এলাকায় দেখিনি লোকটিকে। আমরা তো এলাকায় থাকি। সবাই সবাইকে চিনি, ও জানি। কিন্তু এই লোকটাকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয়নি।
চৌধুরী সাহেব ঃ শুধু শুধু মানুষকে সন্দেহ করা ঠিক হবে না।
রাজ্জাক ঃ এভাবে অবহেলা করা ঠিক হবে না। একটা অঘটন ঘটে গেলে আর উপায় থাকবে না। আমার কেমন জানি সন্দেহ লাগছে।
চৌধুরী সাহেব ঃ আপনার কী সন্দেহ লাগছে?
রাজ্জাক ঃ কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে হয়তো লোকটি এখানে দাঁড়িয়ে আছে।
চৌধুরী সাহেব ঃ চলুন তো, তাহলে আমরা গিয়ে দেখি।


ওরা দু’জন আড়াল থেকে লোকটিকে লক্ষ্য করলো। দেখলো, লোকটি দুই হাতে বাদাম খাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে রাস্তার উত্তর দিকে তাকাচ্ছে। পোশাকেও ও বেশ ভদ্রলোক। কোনো সন্দেহ করার কিছুই নেই।
রাজ্জাক হাতটা টেনে ধরে চৌধুরী সাহেবের। আর বলে ঃ আপনি কিছু বুঝতে পেরেছেন?
চৌধুরী সাহেব ঃ না তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এখানে তো বোঝার কিছুই নেই। লোকটিকে আমারও চেনা চেনা বলে মনে হচ্ছে না মোটেও।
রাজ্জাক ঃ আপনি কি ভাই দিন দিন বোকা হয়ে যাচ্ছেন নাকি।
চৌধুরী সাহেব ঃ আরে ভাই, আপনি প্রতিটা মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখেন, সবাই কিছু না কিছু করছেই। সুতরাং সবাইকে তো আর আমরা সন্দেহ করতে পারি না।
রাজ্জাক ঃ কিন্তু লোকটি অন্যরকম। কিছু তো একটা গোলমাল আছেই।
চৌধুরী সাহেব চলে যেতে চায়, এমন সময় হাতটা টেনে ধরে রাজ্জাক। বলে ঃ আমরা লোকটার সাথে তো অন্তত কথা বলতে পারি।


চৌধুরী সাহেব ঃ সেটা মন্দ হয় না।
রাজ্জাক ঃ তবে আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে।
চৌধুরী সাহেব ঃ কেন?
রাজ্জাক ঃ যদি পুলিশের লোক হয়, তখন।
চৌধুরী সাহেব ঃ আপনি কি ডাকাতি করেছিলেন নাকি.
রাজ্জাক ঃ কী সব আবোল তাবোল কথা বলছেন, আমি ডাকাতি করতে যাবো কেন?
চৌধুরী সাহেব ঃ তাহলে আপনি ভয় পাচ্ছেন কেনো?
রাজ্জাক ঃ অপরিচিত লোক, ভয় তো পেতেই হবে, তাই না? দেখুন না, লোকটার চুল কতো ছোট।
চৌধুরী সাহেব ঃ চুল ছোট হলেই কি পুলিশের লোক হবে নাকি?
রাজ্জাক ঃ ওদের তো চুল ছোট থাকে।
চৌধুরী সাহেব ঃ আমারও তো চুল ছোট, আমি তো পুলিশের লোক নই।
রাজ্জাক ঃ সেটাও ঠিক। চলুন তো লোকটার সাথে গিয়ে কথা বলি।

দুই.
রোকন বেশ কয়েকদিন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে শুধুমাত্র নিজের সন্তানকে একনজর দেখার জন্যে। কেউ যেন সন্দেহ করতে না পারে সেজন্যে বাদাম কিনে একটার পর একটা মুখে দিতে থাকে। আর দু’টি চোখ তার সন্তানের আসার অপেক্ষা করে।
চৌধুরী সাহেব আর রাজ্জাক ধীর পায়ে এগিয়ে আসে কথা বলবার জন্যে। চৌধুরী সাহেব রোকনের সামনে দাঁড়াতেই বললেন ঃ গুড আফটার নুন। দয়া করে আপনার পরিচয়টা দিবেন?
রাজ্জাক ঃ না মানে, আপনি কোথা থেকে আসলেন, কেন আসলেন-এই সব বলবেন আর কি?
রোকন ঃ আমার নাম রোকন! আমি প্রবাসী। অনেকদিন পর বাড়িতে আসলাম। তাই ঘুরতে বের হলাম বন্ধুদের সাথে। আমি আমার বন্ধুর জন্যে অপেক্ষা করছি। সে একটু দূরে গেছে। এক্ষুণি হয়তো চলে আসবে।
রাজ্জাক ঃ আপনাকে এর আগেও দেখেছি অনকবার এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে, ঠিক এই সময়। আপনাকে এই এলাকার বলে মনে হচ্ছে না। আর আপনি যে কথাটা বলছেন, কেন জানি মনে হয় আপনি ঠিক বলছেন না।
রোকন ঃ আপনারা কী আমাকে সন্দেহ করছেন?
চৌধুরী সাহেব ঃ ঠিক, সেই রকম কিছু নয়। আপনার সম্পর্কে জানতে চাইছি, এই আর কি!
রাজ্জাক ঃ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, আপনি হয়তো কারো জন্যে অপেক্ষা করছেন।
রোকন আর কোনো কথার উত্তর দিলো না। তাদের সাথে কথা বলতে বিরক্তবোধ করছিলো। অযথা কথা বলা রোকনের একেবারে পছন্দ নয়। তাই অন্যমনস্ক হয়ে নিজের মতো করে আবার বাদাম চিবুচ্ছে। আর ওরা দু’জন বেশিক্ষণ থাকাটা প্রয়োজন মনে করলো না। রাজ্জাক চৌধুরী সাহেবের ডান হাতটা টান দিয়ে ইশারা করলেন যেন চলে আসেন। ওরা দু’জন চলে আসছে। কিছুদূর যাবার পর আবার ওরা তাকায় রোকনের দিকে। কিন্তু তেমন কিছু তারা অনুমান করতে পারলো না। চৌধুরী সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন ঃ রাজ্জাক ভাই, এভাবে একজনকে সন্দেহ করা মোটেও ঠিক নয়। অযথা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই তো হলো না।
রাজ্জাক ঃ আরে ভাই, আপনি যত কথাই বলুন না কেন, আমার কেন জানি মনে হয় লোকটি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। তা না হলে প্রতিদিন এক জায়গা দাঁড়ায় নাকি?
চৌধুরী সাহেব ঃ আপনার মাথাটাই খারাপ হলো। চলি রে ভাই, চলি।
এই বলে চৌধুরী সাহেব নিজের পথ ধরলেন। কিন্তু রাজ্জাক কোনো মতেই সন্দেহ থেকে বের হতে পারলেন না।

রোকন একজন পিতা! সত্যিই একজন পিতা! আদর্শ পিতা। ভালো পিতা। সন্তানের প্রতি মায়া মমতা তার রয়েছে। রোকন কোনোভাবেই নিজের সন্তানকে ভুলে থাকতে পারে না। সন্তানকে সে প্রচÐ রকম ভালোবাসে। তাই বিদেশ থেকে ফিরলেই সন্তানকে দেখার জন্যে এখানে ছুটে আসে। সন্তানকে না দেখতে পেলে তার মন হু হু করে কেঁদে উঠে। সমাজের কতো বাধা রয়েছে। তবুও সন্তানের কাছে পিতা হিসেবে সেসব বাধা তার কাছে কিছুই নয়। সেসব বাধার উর্ধ্বে একজন পিতার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা প্রদান করতে চায়। সন্তানের জন্যে। কোনো যুক্তি এই বাধা অতিক্রম করতে পারে না। কোনো সন্দেহ নেই। কোনো ছলচাতুরীর প্রশ্রয় নেই এখানে।

রোকন দেখলো তার মেয়ে আসছে। দূর থেকে দেখেই তার মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেলো। মনে হলো, আগুনে যেন বরফের ছোঁয়া লেগেছে। হৃদয়ে তার আনন্দের বন্যা বইয়ে চলেছে। অজান্তেই তার মুখে হাসি ফুটলো। আহা! তার মেয়ে কতো বড়ো হয়েছে। ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে। কিন্তু সেটা সে পারে না। আশপাশের লোকজন সেটা ভালো চোখে দেখবে না। তাছাড়া এখানে সে সম্পূর্ণ অপরিচিত। মেয়েটি বাবাকে দেখতে পায়। দ্রæত পায়ে এগিয়ে চলে মেয়েটি। তার পেছন পেছন রোকন ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। প্রতিবারের মতো রোকন তার মেয়েকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে। এই রেস্টুরেন্টের একই জায়গায় সবসময় মেয়েটি নিয়ে বসে। বার বার আসার কারণে রেস্টুরেন্টের লোকজনের কাছে পরিচিত হয়ে গেছে। সুতরাং এই পরিচিত হওয়াটা তাদের জন্যে দারুণভাবে কাজে দেয়। তারাও জানে একজন বাবা তার মেয়েকে নিয়ে এখানে চা নাস্তা করে। কিন্তু তারা এটা জানে না বাবা মেয়ের সম্পর্কের গভীরে কতো দুঃখ তাদের রয়েছে।

কেবিনে ঢুকেই কোনো দেরী না করেই রোকন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। ঠিক ছোট বেলার মতো আদর করে মেয়েকে। আর মেয়েটিও বাবার ভালোবাসা পেতে আকাক্সক্ষী। কিন্তু অন্যের মেয়েদের মতো সে তার পিতার ভালোবাসা পায়নি ছোট বেলা থেকে। লুকিয়ে লুকিয়ে আদর, ভালোবাসার মধ্যে কষ্ট জড়ানো থাকে। যা রোকন ও তার মেয়ের মধ্যে ছিলো। রোকন তার মেয়েকে নিয়ে পাশাপাশি বসে। তারপর নাস্তার অর্ডার করে। রোকন আনন্দে কেঁদে উঠে। সেই সাথে তার মেয়ে ইভাও কাঁদতে থাকে আনন্দে। তারপর আবার জড়িয়ে ধরে বাবাকে। রোকন মেয়েকে আদর করতে করতে বলেন ঃ কেমন আছো মা তুমি?
ইভা ঃ তোমাকে ছাড়া ভালো নেই বাবা।
রোকন ঃ কিসের অভাব মামার বাড়িতে তোমার। সবই তো আছে।
ইভা ঃ সব থাকলেই কি আর হয়। যেখানে তুমি নেই। সেখানে একজন মেয়ে হয়ে আমি কীভাবে থাকতে পারি। তোমার জন্যে আমার মন কাঁদে।
রোকন ঃ তোমার মায়ের খামখেয়ালিপনা, তোমার মামাদের স্বেচ্ছাচারিতা, আর আইনের জটিলতায় আমি তোমাকে হারিয়েছি। তাই তোমাকে এক নজর দেখার জন্যে আমাকে লুকিয়ে আসতে হয়।
ইভা ঃ আমি জানি তুমি আমাকে ভীষণ ভালোবাস। তাই তো তুমি আমাকে দেখার জন্যে ছুটে আসছ। আর তোমাকে আমি প্রতিদিন মিস করি। বান্ধবীদের যখন দেখি তারা তাদের বাবার সাথে ঘুরতে বের হয়, তখন তোমার কথা খুব মনে পড়ে।
রোকন ঃ আমারও তোমার কথা মনে পড়ে। তোমার মায়ের কথাও খুব মনে পড়ে। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি, সত্যি বলছি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। কারণ, তুমি আমার সন্তান। তোমার জন্যে আমার মন কাঁদে।
ইভা ঃ জানি বাবা! তুমি আমাকে খুবই ভালোবাস। এখনো তুমি আমার মাকে ভুলতে পারছো না। কিন্তু মা তো ভীষণ জেদি।
রোকন ঃ তুমি তো মা এখন বড় হয়েছো, এখন তো তুমি সবই বুঝতে পারছো।
ইভা ঃ আমি সবই বুঝি। তুমি যদি আমাকে আর মাকে ভালো না বাসতে, তাহলে তুমি আরেকটা বিয়ে করে নিতে। এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?

রোকন আনন্দে কেঁদে ফেলে। তার নিজের সন্তান তার ভেতরের কথা বলে দিচ্ছে।
ইভা ঃ বাবা, তোমাকে অনুরোধ করার সুযোগ নেই আমার। কারণ, তোমার আর মায়ের সাথে যে সমস্যা হয়েছে, তাতে আমার মামাদের প্রশ্রয় ছিলো বেশি। আর তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বড় সহায় ছিলো। এ্টাই তাদের বড় প্রশ্রয়দাতা। এখানেই তাদের মায়ামমতা লোপ পেয়ে যায়। তবুও বলছি, তুমি কি মায়ের সাথে দেখা করতে পারো না। তাকে একবার তোমার মনের কথা বলতে পারো না?
রোকন ঃ সেই সুযোগও নেই, সেই পরিস্থিতিও নেই। আমাদের ডিভোর্সটা তোমার মা আর তোমার মামাদের কারণে হয়েছে। এখন তুমি বড় হয়েছো, তাই তোমাকে সবকিছু বলা যায়।
ইভা ঃ বাবা, তোমাকে ছাড়া আমার আর ভালো লাগে না। আমি বাঁচবো না। তুমি আমাকে নিয়ে চল বাবা।
রোকন ঃ সেটা সম্ভব নয়। তোমার মা কিছুতেই মেনে নেবে না। তোমার প্রতি আমার মায়া মমতা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু পিতা হিসেবে আমি দুর্বল ও অসহায়। আমি তোমাকে দেখতে আসি। আর তুমি আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছ-সেটাই আমার জীবনের জন্যে বড় পাওয়া। তোমার জন্যে আমার মন কাঁদে, সবসময়। যদি সুযোগ হতো, তাহলে তোমাকে আমি নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখতাম। কিন্তু একদিকে সমাজ, অন্যদিকে তোমার মা! আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। আমার অতীত আমাকে বড় কষ্ট দেয়। তোমার মামার বাড়ির লোকদের ইন্দনে আমার পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে।
ইভা ঃ আচ্ছা, এভাবে বেঁচে থাকাকে কী বলে বাবা?
রোকন ঃ জানি না রে মা!
ইভা ঃ বাবা, আমি এখন যাবো। আমি আর সময় দিতে পারছি না। আমার প্রাইভেট আছে বাবা। তাছাড়া কেউ যদি দেখে ফেলে সর্বনাশ হবে।
রোকন ঃ আরেকটু থাক, মা। কেউ দেখবে না মা। দেখলে কী হবে আর!
ইভা ঃ তোমাকে মেরেও ফেলতে পারে।
রোকন ঃ তোমার জন্যে যদি আমি মরে যাই, তাহলে আমার জীবন ধন্য হবে।
ইভা ঃ ওরা যদি আমাকেও মারধর করে তখন?
রোকন ঃ না না, আমি সেটা মোটেও সহ্য করতে পারবো না।

ইভার ফোনটি বেজে উঠে। কোনো বান্ধবীর ফোন ছিলো। ফোনে সে তার বান্ধবীকে হোটেল থেকে কিছুদূর অপেক্ষা করতে বললো। তারপর তার বাবার কাছে বলে, সেই বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যায়। দেখা করে আবার ফিরে আসবে বলে জানায়। রেস্টুরেন্টে বান্ধবীকে ডাকে না। তাহলে বাবার বিষয়টি জেনে যাবে। ইভা যাওয়ার সময় রোকন মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বান্ধবীর সাথে ইভা অনেকসময় ধরে কথা বলে। একসময় ইভার মা ও মা ইভাকে দেখতে পায়। তারা ইভার কাছে আসে। রোকন দূর থেকে জানালা দিয়ে দেখতে পায় যে, ইভার মা ও মামা ইভাকে দেখে ফেলেছে। কিন্তু ইভা তার বান্ধবীর সাথে কথা বলছে দেখে রক্ষা। তারা ইভাকে কিছুই মনে করেনি। রোকনের হৃদয়টা হু হু করে কেঁদে উঠে। জানালার ফাঁক দিয়ে তাকে দেখে ইভা তার মা ও মামার সাথে চলে যাচ্ছে। আহা! পিতা রোকন অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে।

ইভা বলেছিলো, বান্ধবীর সাথে কথা শেষ করেই আবার ফিরবে। কিন্তু আর আসতে পারলো। এদিকে পিতার জন্যে মেয়ের মন কাঁদে; আর এদিকে পিতার মনটা আর্তনাদ করে মেয়ের জন্যে! ইভার ফিরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে দীর্ঘসময়। রোকন কষ্টে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; আর দু’চোখে জল গড়িয়ে পড়ে।