

মো. আলামিন হোসেন :
বর্তমান সময়ে অনলাইন গেম, বিশেষ করে ‘ফ্রি ফায়ার’ আমাদের যুবসমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ও খেলাধুলা বাদ দিয়ে দিনের পর দিন মোবাইল ফোনে বুঁদ হয়ে থাকছে, যা তাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মোবাইল গেমের প্রতি আসক্তি তথ্যপ্রযুক্তির জগতে ক্রমবর্ধমান একটি উদ্বেগজনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ডুবে যাচ্ছে, তখন তাদের সামগ্রিক সুস্থতা ও সামাজিক বিকাশ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। এই আসক্তি শুধু শিক্ষাগত দক্ষতাকে ব্যাহত করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। তরুণদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করাটা অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিদিনের পরিচিত পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে এক হতাশাজনক চিত্র। স্কুল ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীরা স্কুলের পরিবর্তে স্থানীয় দোকান বা জনসমাগমপূর্ণ স্থানে বসে মোবাইলে ফ্রি ফায়ার খেলতে ব্যস্ত। তাদের হাতে বই-খাতার পরিবর্তে শোভা পাচ্ছে স্মার্টফোন। একসময় যে খেলার মাঠগুলো কলকাকলিতে মুখরিত থাকত, আজ সেগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
আসক্তির কারণ ও প্রভাব: সহজলভ্যতা: স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সহজেই এই গেমের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
মানসিক প্রভাব: গেমে জেতার আনন্দ এবং পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাদের আরও বেশি আসক্ত করে তোলে।
শারীরিক ক্ষতি: একটানা মোবাইল ব্যবহারের ফলে চোখ, মাথা ও শরীরের অন্যান্য অংশে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
শিক্ষায় ব্যাঘাত: পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, ফলে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হচ্ছে এবং ঝরে পড়ার হার বাড়ছে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: খেলাধুলা ও সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে থাকছে, যা তাদের মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
অর্থনৈতিক চাপ: গেমের পেছনে অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে অভিভাবকরাও সমস্যায় পড়ছেন।
করণীয়:
অভিভাবকদের সচেতনতা: সন্তানদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়ার সময় অভিভাবকদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে এবং তাদের অনলাইন কার্যকলাপের উপর নজর রাখতে হবে।
শিক্ষকদের ভূমিকা: শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের গেমিং আসক্তির বিষয়ে সচেতন করা এবং ক্লাসে গঠনমূলক আলোচনার আয়োজন করা।
বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা: পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য সৃজনশীল কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে।
প্রচারণা: গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেমিং আসক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
সরকারি পদক্ষেপ: অনলাইন গেমের সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই সর্বনাশা আসক্তি থেকে রক্ষা করতে হলে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সময় থাকতে সচেতন না হলে, এই প্রজন্ম এক ঘোর অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।
