মানসিক রোগের কারণ ও প্রতিকার

মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনের পূর্বশর্ত। কিন্তু বর্তমান সমাজে মানসিক রোগ একটি নীরব মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে। কর্মব্যস্ততা, সামাজিক চাপ, পারিবারিক টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের প্রভাবে মানুষ ক্রমশ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই ফিচারে আমরা বিশ্লেষণ করব মানসিক রোগের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা।

মানসিক রোগ কী

মানসিক রোগ বলতে এমন এক অবস্থা বোঝায় যেখানে ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি, আচরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যাহত হয়। এটি ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবন, সম্পর্ক, কর্মক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, ওসিডি ইত্যাদি মানসিক রোগের অন্তর্ভুক্ত।

মানসিক রোগের কারণ

মানসিক রোগের কোনো একক কারণ নেই। এটি বিভিন্ন জৈবিক, মানসিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত উপাদানের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্টি হয়। নিচে প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো

জিনগত কারণ

পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস থাকলে একজন ব্যক্তির মধ্যে মানসিক রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে বাবা-মা বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যদি কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে উত্তরাধিকারসূত্রে সেই ঝুঁকি সন্তানের মধ্যে থাকতে পারে।

মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা

মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সেরোটোনিন, ডোপামিন, গ্যাবা ইত্যাদির ভারসাম্যহীনতা মানসিক রোগের অন্যতম কারণ। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো আবেগ, চিন্তা এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন বিষণ্ণতা, উদ্বেগ বা অন্যান্য মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

মানসিক চাপ

দৈনন্দিন জীবনের নানা চাপ যেমন কর্মক্ষেত্রের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক প্রত্যাশা ইত্যাদি মানুষের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ থেকে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং ঘুমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শৈশবের ট্রমা

শৈশবে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অবহেলা, প্রিয়জনের মৃত্যু, দুর্ঘটনা বা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা মানসিক রোগের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। এই ধরনের ট্রমা ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস, নিরাপত্তাবোধ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে।

হরমোনজনিত পরিবর্তন

গর্ভধারণ, প্রসবের পরবর্তী সময়, মেনোপজ বা থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারণে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন অনেক সময় মানসিক রোগের সূচনা করতে পারে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে।

নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার

মাদক, অ্যালকোহল বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে এবং মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় নেশা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টায় মানসিক রোগ আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

একাকীত্ব, বন্ধনহীনতা, সামাজিক অবহেলা বা সম্পর্কহীনতা মানুষের মধ্যে হতাশা এবং বিষণ্ণতা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

মানসিক রোগের লক্ষণ

মানসিক রোগের লক্ষণ ব্যক্তি ও রোগভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা মানসিক রোগের উপস্থিতি নির্দেশ করে

১. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ

২. দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্ণতা বা মন খারাপ

৩. ঘুমের সমস্যা বা অতিরিক্ত ঘুম

৪. আত্মবিশ্বাসের অভাব

৫. অস্বাভাবিক আচরণ বা চিন্তা

৬. আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা

৭. সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া

৮. অতিরিক্ত রাগ, ভয় বা অস্থিরতা

৯. খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন

১০. কাজের প্রতি আগ্রহহীনতা

প্রতিকার ও চিকিৎসা

মানসিক রোগের প্রতিকার সম্ভব, তবে এর জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ের চিকিৎসা, সহানুভূতিশীল পরিবেশ এবং সামাজিক সমর্থন। নিচে প্রতিকারমূলক কিছু ব্যবস্থা তুলে ধরা হলো

সাইকোথেরাপি

এটি মানসিক রোগের অন্যতম কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে রোগী তার সমস্যার মূল কারণ, আবেগ এবং আচরণ সম্পর্কে সচেতন হয়। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, ডায়ালেকটিক্যাল বিহেভিয়ার থেরাপি, ফ্যামিলি থেরাপি ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।

ওষুধ

মানসিক রোগের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যেমন বিষণ্ণতার জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, উদ্বেগের জন্য অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি, সিজোফ্রেনিয়ার জন্য অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ। তবে এসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়।

জীবনধারার পরিবর্তন

১. নিয়মিত ব্যায়াম

২. পর্যাপ্ত ঘুম

৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

৪. ধ্যান ও যোগব্যায়াম

৫. সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি

৬. সময়মতো বিশ্রাম

৭. প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিতকরণ

সমর্থন ব্যবস্থা

পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী এবং সমাজের সহানুভূতিশীল আচরণ মানসিক রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে বোঝা, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তাকে ভালোবাসা ও সম্মান দেওয়া মানসিক সুস্থতার পথে বড় সহায়ক।

শিক্ষা ও সচেতনতা

মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, ভুল ধারণা দূর করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। স্কুল, কলেজ, কর্মস্থল এবং গণমাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

১. শৈশব থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া

২. পরিবারে সহানুভূতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি

৩. সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা

৪. মানসিক চাপ মোকাবেলায় দক্ষতা অর্জন

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

উপসংহার

মানসিক রোগ কোনো দুর্বলতার প্রতীক নয়, এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা, সহানুভূতিশীল সমাজ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মানসিক রোগ থেকে মুক্তির পথ খুলে দেয়। আমাদের উচিত মানসিক রোগকে লজ্জার বিষয় না ভেবে, একে গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলা করা। কারণ, সুস্থ মনই সুস্থ সমাজের ভিত্তি।

যোগাযোগ

হাকীম মো. মিজানুর রহমান

📜 ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত) 

🩺 অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা 

🆔 সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ 

 চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা

📍 সততা প্লাজা, 

🏢ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার 

📌 প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন 

🛣️ রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর

 📞 প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন

📱 মোবাইল: 01762-240650

সেবাসমূহ :

শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।

 

শেয়ার করুন
শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

You might like

About the Author: priyoshomoy