আমার দাগগুলো ইতিহাস, আর ব্যর্থতাগুলো শক্তি

বিনোদন প্রতিবেদক :

রুকাইয়া জাহান চমকের এই উক্তিটি শুধু একটি বাক্য নয়, এটি এক ধরনের আত্মজৈবনিক দর্শন, যা একজন নারীর সংগ্রাম, আত্মপরিচয়, এবং শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতার গল্পকে ধারণ করে। এই ফিচারটি সেই বাক্যকে কেন্দ্র করে একজন অভিনেত্রীর অন্তর্দহন, আত্মপ্রকাশ, এবং সমাজের চোখে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার যাত্রাকে অনুসন্ধান করবে।

পরিচয়ের পেছনের গল্প

রুকাইয়া জাহান চমক—নামটি এখন শুধু অভিনয়ের জগতে নয়, নারীর আত্মপ্রকাশের প্রতীক হিসেবেও উচ্চারিত হয়। তার অভিনয়, তার উপস্থিতি, তার ভাষা—সবকিছুতেই আছে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস, যা সহজে তৈরি হয়নি। “আমার দাগগুলো ইতিহাস”—এই বাক্যটি তার শরীরের নয়, তার জীবনের দাগের কথা বলে। প্রতিটি ব্যর্থতা, প্রতিটি অপমান, প্রতিটি প্রত্যাখ্যান—তার কাছে ইতিহাসের অংশ। আর সেই ইতিহাসই তাকে শক্তি দিয়েছে।

দাগের সংজ্ঞা: বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণ

আমরা যখন ‘দাগ’ শব্দটি শুনি, তখন শরীরের ক্ষতচিহ্ন, দুর্ঘটনার স্মৃতি, বা অপমানের প্রতীক হিসেবে ভাবি। কিন্তু চমক এই শব্দটিকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছেন। তার দাগ মানে—অভিনয়ে প্রথম প্রত্যাখ্যান, ক্যামেরার সামনে কাঁপা কণ্ঠ, সমাজের চোখে ‘অভিনেত্রী’ হওয়ার সংকোচ, পরিবারে নারীর স্বাধীনতার প্রশ্ন, এবং নিজের ভেতরের ভয়। এই দাগগুলো তাকে ভেঙে দেয়নি, বরং গড়েছে।

ব্যর্থতার শক্তি: ভাঙনের মধ্যেই নির্মাণ

চমক বলেন, “আমার ব্যর্থতাগুলো শক্তি।” এই বাক্যটি আমাদের শেখায় যে ব্যর্থতা কোনো শেষ নয়, বরং শুরু। অভিনয়ে প্রথম অডিশনে বাদ পড়া, পরিচালকের তিরস্কার, দর্শকের সমালোচনা—সবই তার কাছে শক্তির উৎস। কারণ প্রতিটি ব্যর্থতা তাকে শিখিয়েছে, প্রস্তুত করেছে, এবং আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। তিনি ব্যর্থতার মধ্যেই নিজের শক্তির খোঁজ পেয়েছেন।

নারীর আত্মপ্রকাশ: শিল্পের আয়নায়

বাংলাদেশের বিনোদন জগতে নারীর অবস্থান এখনো চ্যালেঞ্জিং। চমকের মতো একজন নারী যখন নিজের দাগ ও ব্যর্থতাকে প্রকাশ্যে শক্তি হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন তা শুধু ব্যক্তিগত নয়, রাজনৈতিকও। এটি নারীর আত্মপ্রকাশের এক সাহসী ভাষ্য। তিনি বলেন না, “আমি নিখুঁত,” বরং বলেন, “আমি অসম্পূর্ণ, কিন্তু সেই অসম্পূর্ণতাই আমার শক্তি।”

শিল্পী হিসেবে দায়বদ্ধতা

চমক শুধু অভিনেত্রী নন, একজন শিল্পী। তার অভিনয়, তার সংলাপ, তার চরিত্রে প্রবেশ—সবকিছুতেই আছে এক ধরনের দায়বদ্ধতা। তিনি জানেন, একজন শিল্পীর কাজ শুধু বিনোদন নয়, সমাজকে প্রশ্ন করা, ভাবতে বাধ্য করা। তার দাগগুলো সেই প্রশ্নের জন্ম দেয়, আর ব্যর্থতাগুলো সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

দর্শকের চোখে চমক

দর্শকরা চমককে দেখে এক ধরনের সাহসী নারীর প্রতীক হিসেবে। তার চরিত্রগুলো—যেমন একজন নির্যাতিত নারী, একজন প্রতিবাদী তরুণী, কিংবা একজন নিঃসঙ্গ প্রেমিকা—সবই বাস্তবের ছায়া। দর্শকরা তার অভিনয়ে নিজেদের খুঁজে পান। তার দাগগুলো যেন দর্শকেরও দাগ, তার ব্যর্থতাগুলো যেন দর্শকেরও ব্যর্থতা।

আত্মজৈবনিক শিল্পচর্চা

চমকের এই উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিল্পচর্চা কখনো বাইরের বিষয় নয়, এটি আত্মজৈবনিক। একজন শিল্পী তার জীবনের দাগ, ব্যর্থতা, প্রেম, ক্ষোভ—সবকিছু নিয়েই শিল্প সৃষ্টি করেন। চমক সেই পথেই হাঁটছেন। তার অভিনয়, তার বক্তব্য, তার উপস্থিতি—সবই তার জীবনের প্রতিচ্ছবি।

সমাজের প্রতিক্রিয়া

চমকের এই বক্তব্য সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ বলেন, এটি সাহসিকতা, কেউ বলেন, এটি আত্মপ্রচারণা। কিন্তু চমক জানেন, প্রতিক্রিয়া আসবেই। তিনি বলেন, “যদি আমার দাগগুলো কাউকে অস্বস্তিতে ফেলে, তাহলে বুঝি আমি ঠিক জায়গায় আঘাত করেছি।” এটি একজন শিল্পীর সাহসিকতার পরিচয়।

ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি

চমক তার দাগ ও ব্যর্থতাকে ইতিহাস ও শক্তি হিসেবে দেখেন, কারণ তিনি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি চান, আগামী প্রজন্মের নারীরা যেন নিজের দাগ লুকিয়ে না রাখে, বরং তা নিয়ে গর্ব করে। তিনি চান, ব্যর্থতা যেন ভয় নয়, শক্তি হয়। তার এই দর্শন ভবিষ্যতের নারীদের জন্য এক ধরনের দিশা।

উপসংহার

“আমার দাগগুলো ইতিহাস আর ব্যর্থতাগুলো শক্তি”—এই বাক্যটি শুধু রুকাইয়া জাহান চমকের নয়, এটি আমাদের সবার হতে পারে। এটি আমাদের শেখায়, কিভাবে নিজের ভেতরের ভাঙনকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। একজন শিল্পী, একজন নারী, একজন মানুষ হিসেবে চমক আমাদের দেখান, কিভাবে দাগকে ইতিহাসে পরিণত করা যায়, আর ব্যর্থতাকে শক্তিতে।

শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

 

ডায়াবেট্সি হলে কি করবেন?

শেয়ার করুন
প্রিয় সময় ও চাঁদপুর রিপোর্ট মিডিয়া লিমিটেড

You might like

About the Author: priyoshomoy