

মাকসুমুল মুকিম :
ঢাকার দোহার উপজেলায় পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন উদ্দিন খান মাসুমের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শিকদার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রাজনৈতিক সংগঠনের দুই নেতার এমন সংঘাতে দোহারের স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ ও ভুক্তভোগী মহসিন উদ্দিন খান মাসুম ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা রহমান রূপার থেকে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে ছাত্রদল নেতা আলমগীর শিকদার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন বহিরাগত লোক নিয়ে দক্ষিণ জয়পাড়া বড় মাঠ ( কুরবানির গরুর হাট মাঠ) সংলগ্ন এলাকায় তাঁদের বসতবাড়িতে প্রবেশ করেন। এসময় তাঁরা বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেন।
রূপা অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা হুমকি না মানায় হামলাকারীরা ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। শুধু তাই নয়, ঘরে রাখা দেবীনগর হাটের ইজারার খাজনার টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়াও, গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, ৩টি চেক বই নিয়ে যায়।
মহসিন উদ্দিন মাসুম আরও জানান, আমি আমার বাবার ক্রয়কৃত এই জমিতে বসবাস করছি আজ ২৫ বছর। জমি ক্রয় হয়েছে প্রায় ৩৭ বছর। হামলার পর আলমগীর শিকদার ও তাঁর সহযোগীরা পাশের একটি দোকান এবং আরও দুটি বাড়িতে গিয়েও হুমকি প্রদান করেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
ছাত্রদল নেতার পাল্টা দাবি: জমি সংক্রান্ত বিরোধ
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শিকদার হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
তিনি দাবি করেন, মহসিন উদ্দিন খান মাসুম যে বাড়িতে থাকেন, সেই জমির মালিক তাঁর মামা। মামার দলিল রয়েছে। তিনি মামার কাছ থেকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নিয়েছেন। সেই আইনি সূত্রেই তিনি মাসুম খানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। তিনি ভাঙচুর করেননি এবং মাসুম খান বাড়িতে না থাকায় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শুধু যোগাযোগ করতে বলেছেন। পরবর্তীতে আমি ফোনে মাসুম ভাইকে বিষয়টি অবহিত করি। ভাংচুরের ঘটনাটি সাজানো এবং আমাকে ফাসাতে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে বলে আমি মনে করি।
তবে তাঁর সঙ্গে লোক থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি তাঁর সঙ্গে কয়েকজন লোক থাকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি আমার এলাকার ভাই, বন্ধুদের সাথে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে, ভাইয়ের বাসা সামনে আসায় ভাবলাম ভাইকে বিষয়টি অবহিত করি। এটাতো স্বাভাবিক, তাই না?
এই ব্যাপারে দলীয় নেতাদের অবস্থান ও বক্তব্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেছের খান জানান, মহসিন উদ্দিন খান মাসুম তাঁকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি আইনগত পদক্ষেপ নিতে বলেন। তিনি আরও বলেন, “মাসুমের বাবা মোসলেম স্যার আমাদের শিক্ষক ছিলেন।” তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, আলমগীর যদি এমন কাজ করে থাকেন, তবে তাঁর দল থেকে বহিষ্কার হওয়া উচিত। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক দেখবেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, “যেটা সত্য, আমরা সেটাই চাই। আমরা চাই ন্যায়বিচার হোক।”
মহসিন উদ্দিন খান মাসুম থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি মামলায় রুপান্তর হবে বলে জানান তিনি।
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী নিশ্চিত করেছেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি জানান, “ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
