

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, আমরা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে, ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে স্বৈরাচার জেঁকে বসেছিল। যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, আগামী দিনে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে। জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে।

শনিবার বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে কুমিল্লায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেণে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি বক্তব্য কালে এসব কথা বলেন তিনি। ১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া। সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম।
তারেক রহমান বলেন, বক্তব্য অনেক হয়েছে। এখন আমাদের কাজ করতে হবে। আজকে সম্মেলনের শ্লোগান হোক, ঐক্য, জনগণ এবং পুনর্গঠন। আমাদের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করেছে। জেলে গিয়েছে, গুম হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখনই সময়, সকলে মিলে কাজ করে সুন্দর ঘর গঠন করি। সবাই মিলে সুন্দর ঘর নির্মাণ করতে হবে। এই বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। মিটিং করে জনগণের কাছে যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে যেতে হবে। কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তা সকল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন একটি প্রত্যাশিত দিন দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। ১৬ বছর পর এমন একটি দিন পেলাম। আমরা সুখের দিনে অতীত ভুলে যাই। আমরা যেন বিস্মৃত না হই। এই দেশ থেকে দুই লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে যে পরিমাণ ঋণ হয়েছে সেই টাকা দিয়ে ৪০ টি পদ্মাসেতু নির্মাণ করা যেত। ব্যাংকিং সেক্টর পাঁচ লক্ষ কোটি খেলাপি ঋণে জর্জরিত। এই আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটপাটের ইতিহাস। জুলাই অভ্যুত্থানে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে, ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। এ বিষয়টি আমরা যেন ভুলে না যাই। আমরা এখনো সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সংস্কারের সংগ্রাম, বিচারের সংগ্রাম মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অতীতে মানুষ ভাষণ শুনেছে, শোষণের শিকার হয়েছে। ভাষণ ও শোষণের বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার রয়েছে। এই দেশের মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। প্রত্যেকটি অপরাধের বিচার হবে। কিন্তু এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যার জন্য নির্বাচন প্রলম্বিত হতে পারে না। আজকে যারা সংস্কারের কথা বলে, তারা কি জানে ভিশন ২০৩০ এর কথা, ৩১ দফার কথা? বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মহাকাব্যের নাম ৩১ দফা। দেশের কোনো ব্যক্তি ৩১ দফার পরও গ্রহণযোগ্য কিছু বলেন, আমরা তা গ্রহণ করব। বিএনপির ইতিহাস সংস্কারের ইতিহাস। ইসলাম কোনো রাজনীতির কোটা নয়, রাজনীতি দিয়ে ইসলামকে নিয়ে আসবে, তাদের ভোটের মধ্যে প্রতিহত করবেন। তারা নাকি জান্নাতের টিকিট দেবে, নাউজুবিল্লাহ। একাত্তরের চেতনাও টেকেনি। হাসিনার ঠাঁই হয়েছে দিল্লিতে। আমরা সবাই জুলাই যোদ্ধা। তবে জুলাইয়ের চেতনাও কেউ যেন বিক্রি না করি।
ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন,যারা ৭১ কে অস্বীকার করে, যারা মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না। তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পিআর কাকে বলে চিনে না জানে না, আপনি ভোট দিবেন একজনকে, কিন্তু আপনার জনপ্রতিনিধি হবে অন্য আরেকজন। ভোট কেবল মার্কাই নয়, ভোট নেতার সাথে ভোটারদের একটি আত্মার বন্ধন।
বুলু বলেন, মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষিতেই মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে রূপান্তর করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার সৃষ্টি করেন।
স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্প বিকাশের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে ধানের শীষকে জয়যুক্ত করে তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করবে ইনশাল্লাহ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এতে বেগম রাবেয়া চৌধুরী সভাপতি, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সাধারণ সম্পাদক ও মো. মোস্তাক মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক হন। কুমিল্লার ছয়টি সংসদীয় আসনের ১০টি উপজেলা, চারটি পৌরসভা, ১০৭টি ইউনিয়ন, ৯৯৯ টি ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়। এতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শনিবারের সম্মেলনে বর্তমান আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনকে সভাপতি ও সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
