চাঁদপুরের হাইমচরে নিম্ন মধ্যবিত্তের তালিকা নিয়ে তালবাহানা

নিজস্ব প্রতিনিধি :
চাঁদপুর জেলার হাইমচরের করোনায় কর্মহীন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্রদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক সহায়তা তালিকা নিয়ে চলছে নানাপ্রকার তালবাহানা। উপজেলা প্রশাসন, ত্রাণ শাখা ও ইউনিয়ন পরিষদ দায়িত্বশীল কর্তারা তালিকা প্রকাশ না করায় কারা পাচ্ছেন মানবিক সহায়তা এখনো অন্ধকারেই রয়ে গেল।

হাইমচর উপজেলার ৬ ইউনিয়নে কর্মহীন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্রদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৫শ’ টাকা আর্থিক সহয়তার তালিকায় আত্মীয়করণ, পরিবার করণসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠায় তালিকার জন্যে হাইমচরে কর্মরত সাংবাদিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে গেলে তালিকা দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তালিকার বিষয়ে কথা বলতে নারাজ।

চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা তালিকা প্রণয়নের সময় আত্মীয়করণ ও পরিবার করণসহ সুবিধাভোগীদের নামের পাশে নিজের মোবাইল নম্বর দেয়াসহ নানাপ্রকার গোঁজামিল রয়েছে বলে গুঞ্জন চলছে।

ইতোমধ্যেই উপজেলার ৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার বিল্লাল আখন ২৫জন সুবিধাভোগীর নামের পাশে তার মোবাইল নম্বর দেয়ায় আলোচনার শিরোনাম হয়েছে।

পত্রপত্রিকায় ও সামজিক মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা সংশোধন করে প্রেরণ করার সংবাদ পাওয়া গেছে।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত তালিকা ও পরবর্তীতে সংশোধিত তালিকাসহ কোনো তালিকাই প্রকাশ করা হয়নি অজ্ঞাত কারণে। বিশেষ করে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমে এ তালিকা না দেয়ার জন্য রয়েছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা।

তালিকা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার অংশ হিসেবে হাইমচরেও তুমূল সমালোচনার ঝড় বইছে।

প্রথমে তালিকায় বিভিন্ন লোকজনের নামের পাশে মেম্বার ও নেতাদের নম্বার থাকায় তা সংশোধন করার জন্য ফেরত পাঠিয়ে পুনরায় সংশোধন করে চূড়ান্ত তালিকা করা হয়। কিন্তু নাম্বার সংশোধন করা হলেও আত্মীয়করণ সংশোধন করা হয়নি এমন অভিযোগ রয়েছে।

১৮ মে ২০২০ (সোমবার) সকাল ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও তালিকার কোনো হদিস পাননি হাইমচর উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে তালিকার তথ্যের জন্যে এ প্রতিনিধি গেলে তাকে ইউএনও স্টাফ তাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমর্ককর্তার অফিসে কর্মহীন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্রদের তালিকা রয়েছে; আপনি সেখান থেকে তালিকা নিতে হবে।

all

উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা আমিনুর রশিদ বলেন, আমাদের অনলাইলে তালিকা সেটআপ করা রয়েছে। তা থেকে প্রিন্ট কিংবা মেইল করার কোনো ব্যবস্থা নাই। যেহেতু ইউএনও অফিস থেকে মেইলগুলো পাঠানো হয়েছে আপনি সেখানে যোগাযোগ করে দেখেন।

ইউএনও সিএর কৃষ্ণ রায় সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনওর সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগমের কাছে তালিকা বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়ার জন্য বলেন। অনুরোধক্রমে তিনি তার স্টাফ তাজুল ইসলামের কাছ থেকে মেইল ফরওয়ার্ড করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন।

পরবর্তীতে তাজুল ইলামে কাছে তথ্যের জন্য গেলে তাজুল ইসলাম ইউএনওর সাথে যোগাযোগ করে বলেন, আপনি কষ্ট করে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তাদের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করার জন্য ইউএনও স্যার বলেছেন।

পুনরায় আবারও এ প্রতিনিধি ফোন করেন ইউএনও ফেরদৌসী বেগমকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, আমাদের এখান থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্রদের তালিকা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আমি সকল ইউনিয়ন পরিষদে তালিকা প্রেরণ করে দিয়েছি। আপানারা সেখান থেকে তালিকা সংগ্রহ করে নিয়ে নেন।

১নং গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান গাজী জানান, আমি আমার ইউনিয়নের চূড়ান্ত তালিকা উপজেলা পরিষদে জমা দিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে এখনো উপজেলা পরিষদ থেকে কোন তালিকা আসেনি। আমি এসম্পর্কে আর কিছু বলতে পারবো না।

৪নং নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদে তালিকা জমা দিয়ে দিয়েছেন বলে তিনি বলেন, আমার কাছে এখনো কোন তালিকা উপজেলা পরিষদ থেকে আসছে কিনা আমি জানি না। আপনি আমার সচিবের সাথে যোগাযোগ করে দেখেন।

৫নং হাইমচর ইউনয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা দেয়া যায় না। আপনাদের প্রয়োজন হলে আপনারা উপজেলা পরিষদ থেকে নিয়ে নেন।

কথা হয় ৬নং চরভৈরবী ইউনিয়ন পিরষদ চেয়ারম্যান আহমেদ আলী মাষ্টারের সাথে তিনি বলেন আমি চূড়ান্ত তালিকা উপজেলা পরিষদে জমা দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছি। আপানার উপজেলা থেকে নিয়ে নিয়েন।

৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল জলিল ও ২নং আলগী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির আহমেদ দুলালের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায় নি।