চান্দিনায় হিন্দু ব্যবসায়ীর মরদেহ সৎকার করল মুসলিম সম্প্রদায়

চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি :

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সামাজিক বন্ধনের দূরত্ব সৃষ্টি করলেও কুমিল্লার চান্দিনায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক সম্পৃতির সেতুবন্ধন তৈরি করারও দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।

চান্দিনায় বিশিষ্ট ওষুধ ব্যবসায়ী কিংকর সাহা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর মরদেহ সৎকারে এগিয়ে আসে কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. লিটন সরকারের নেতৃত্বাধীন একদল যুবক।

বুধবার (১০ জুন) দিবাগত রাত ১২টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকাল ১১টায় মরদেহ আনা হয় চান্দিনার মহাশ্মশানে।

স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন শ্মশানের চুলা প্রস্তুত করলেও এগিয়ে আসেনি তাদের নিজস্ব পুরহিত। খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন মো. লিটন সরকারের নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবী টিম। তারা এসে অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ শ্মশানের চুলায় তোলেন এবং ফোন করে অন্য জায়গা থেকে পুরহিত এনে ধর্মীয় রীতি-নীতিতে সৎকার কাজ সম্পন্ন করেন।

করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সনাতন ধর্মীবলম্বী এক ব্যবসায়ীর মরদেহ সৎকারে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের এগিয়ে আসাকে ইতিবাচক দিক হিসেবে মন্তব্য করেছেন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়।

চান্দিনা সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও চান্দিনা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক শ্রীধর বণিক জানান, নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় এবং মানবিক উদ্যোগ। মো. লিটন সরকারের এমন উদ্যোগকে আমরা সাদুবাদ জানাই।

করোনা মহামারিতে নিজেদের জীবন বাজি রেখে তারা মুসলিম ধর্মীবলম্বীদের দাফন কাজের পাশাপাশি সনাতন ধর্মীবলম্বীদের সৎকারে এগিয়ে আসাকে মানবতার জয় বলে মনে করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই স্বেচ্ছাসেবী টিমের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও তাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

 

কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা লিটন সরকার জানান, করোনায় মৃত বা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফন কাজে আমরা কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ ১০১ সদস্যবিশিষ্ট টিম গঠন করেছি। করোনায় যাদের মৃত্যু হয় তাদেরকে আমরা ধর্ম নিয়ে বিবেচনা করি না। মানবিক দায়িত্ব বলে মনে করি। সেই দায়িত্ব থেকেই ব্যবসায়ী কিংকর সাহার সৎকারে এগিয়ে এসেছি।

শুধু কিংকর সাহার মরদেহই নয়, বিকেলে সাংবাদিক গোলাম মোস্তফার মরদেহ দাফনসহ এ পর্যন্ত আমরা অন্তত ১০টি মরদেহ দাফন করেছি। করোনায় মৃত ব্যক্তির পাশে কেউ না থাকলেও আমরা আছি।