হাসির আড়ালে : ক্ষুদীরাম দাস

ছোট গল্প

হাসির আড়ালে
ক্ষুদীরাম দাস

হোটেলের রিসিপসন থেকে রুমের চাবি নিয়ে বিটু ও রমা লিফটে করে সোজা অষ্টমতলার ৮০৪ নম্বর রুমে প্রবেশ করলো। বেলা তখন সাড়ে বারটা বাজে মাত্র। জার্নিতে ক্লান্তি থাকায় দু’জনে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলো। কখন যে দু’জনে গভীর ঘুমে ডুবে গেলো বুঝতেই পারলো না। দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেয়ে রমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। উঠে দেখে তাদের দরজা ঠিকই বন্ধ আছে।
কিছুসময় বিছানায় বসে রইলো। বোঝার চেষ্টা করলো তাহলে কি শব্দ শোনাটা ভুল ছিলো। বিছানা থেকে উঠে দরজাটা খুললো। দেখলো ৮০৫ নম্বর রুমে অন্য দু’জন দম্পতি এই মাত্র প্রবেশ করছে।

রমা কিছুই জিজ্ঞাসা করলো না। জিজ্ঞাসা করার প্রশ্নও আসে না। অচেনা মানুষ কথা না বলাই ভালো। রুমা একটু হেঁটে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো।


বাহ্! কী চমৎকার! হোটেল থেকেই কক্সবাজারের সমুদ্র সৌকতের তীর দেখা যাচ্ছে। সেখানে অগণিত মানুষ। সমুদ্রের ঢেউ একটার উপর একটা আছড়ে পড়ছে। প্রকৃতি কতো অপরূপ সাজে সেজেছে। কী সুন্দর চারিদিকটা। মনটা উদার হয়ে যায় সমুদ্রের কাছে আসলে। সমুদ্রের যতই দূরে তাকানো যাক না কেন কোনো কূল দেখা যায় না। রমা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলো সমুদ্রের দিকে। রমা আবার দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো। শব্দ কানে আসতেই রুমের দিকে তাকালো। দেখলো সেই রুম থেকে একজন পুরুষ বের হয়ে আসছে। বুঝতে পারলো হয়তো স্ত্রীকে রুমে রেখে সমুদ্র দেখতে আসছেন। মোবাইল চাপতে চাপতে মাথা নিচু করে তিনি হেঁটে আসছেন। একটু পর তাকিয়ে যখন রমাকে দেখলো তখন সেই অচেনা লোকটি থমকে দাঁড়ালো। রমাকে দেখে আর এগিয়ে আসলো না। লোকটা আবার ফিরে গেলো নিজের রুমে। রমা বুঝতে পারলো, তার জন্যেই লোকটা বারান্দায় আসেনি। এটা অবশ্য ভদ্রতা। যদি অভদ্র হতেন, তাহলে কাছেই চলে আসতেন।

রমা আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো। রমা একটু পর ভাবলো, একা একা এই সৌন্দর্য উপভোগ করাটা স্বার্থপরের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু বিটু তো আমার জীবনে মনের মতো হয়নি। একটা দীর্ঘশ^াস ছেড়ে রমা আবার রুমের ভেতর প্রবেশ করলো। দেখলো বিটু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। মনে মনে ভাবলো, থাক বেচারাকে ঘুম থেকে উঠানোর দরকার নেই। ঘুমিয়ে নিক যত খুশি। শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাক।

দেড়টার দিকে বিটুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখে তখন দেড়টা বাজে। রমাকে ঘুম থেকে উঠার জন্যে ডাকলো। ডেকেই সে ফ্রেস হবার জন্যে বাথরুমে চলে গেলো। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখলো, রমা তখনও ঘুমাচ্ছে। মনে মনে বললো, কুমড়ো কোথাকার। অলসের মতো এখনো ঘুমাচ্ছে। বিটু আবার তাকে ডাকলো। সাথে সাথে রমা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হতে বাথরুমে ছুটে গেলো।

বাথরুম থেকে বের হয়ে দু’জনে একসাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্যে লিফটের সামনে দাঁড়ালো। লিফট তখন উপর থেকে নিচের দিকে নামছে। বেশ কিছুটা সময় লাগছিলো নিচের দিকে নামতে। বিটু ও রমা দাঁড়িয়ে রইলো লিফটের জন্যে। রমা হঠাৎ পিছন ফিরে দেখলো ৮০৫ নম্বর রুমের দুই দম্পতিও এসেছে, তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।

সবাই একে একে লিফটে উঠলো। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। অপরচিত বলে একে অপরের চোখে চোখ পড়ছে ঠিকই কিন্তু কোনো জিজ্ঞাসা মুখে ছিলো না। হোটেলের দ্বিতীয় তলায় খাবার ব্যবস্থা। সেখানেই সকলে গেলো দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্যে। রমা ও বিটু এক টেবিলে বসেছে; আর ঐ অপরিচিত দু’জন অন্য টেবিলে বসেছে। তাদের টেবিলগুলোতে আগেই খাবার পরিবেশন করা ছিলো। রমা খেতে খেতে তার চোখ চলে গেলো ঐ অপরিচিত মহিলার দিকে। নিজে খাচ্ছে, আর ঐ মহিলার দিকে তার তীক্ষè নজর। আহ্া! কী সুন্দর! ওরা কতো সুখী! মহিলাটি কতো ভালো স্বামী পেয়েছে। তাকে কতো দামী শাড়ি কিনে দিয়েছে। কানে কী সুন্দর দুল পড়েছে। আহ্! মহিলা কতো সখী। আর আমার কপালে সুখী হইলো না।

ঐ দিকে ঐ অপরিচিত মহিলাও তাদের দিকে লক্ষ্য করছে। তাদের দেখিয়ে মহিলা আরো সুন্দর করে হাসছে। তার স্বামীর সাথে কথা বলছে। মাঝে মাঝে হাসছে। খাবার এগিয়ে দেখছে। এসব দেখে রমার খুবই হিংসা জেগে উঠে মনের মধ্যে। ভাবে, আহ্া কতো সুখী ওরা। মাঝে মাঝে রমাও হাসি মুখে কথা বলছে বিটুর সাথে।
——–

দীপু আর শীলা দুপুরের খাবার শেষ করে নিজদের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই শীলা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো ঃ তুমি কী একটা বিষয় লক্ষ্য করেছো?
দীপু ঃ কোন সময়ের কথা বলছো?
শীলা ঃ যখন আমরা খেতে বসেছিলাম।
দীপু ঃ আমার মনে হয় তুমি রান্নার কথা বলছো। এছাড়া আর অন্য কিছু বুঝতে পারছি না. তুমি কোন বিষয়ের কথা বলছো? দুপুরের খাবার তো ভালোই রান্না হয়েছে। অনেকদিন পরে এ রকম খাবার খেলাম তো। রান্নায় কিন্তু কোনো সমস্যা ছিলো না।
শীলা ঃ আমি তোমাকে সে বিষয়ে কিছু বলছি না।
দীপু ঃ তাহলে কোন বিষয়ে বলছো?
শীলা ঃ আমি বলছি ঐ যে আমাদের টেবিলের সামনে বসেছিলো দু’জন দম্পতি।
দীপু ঃ তাতে কী হয়েছে?
শীলা ঃ হয়েছে মানে? তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো?
দীপু ঃ এভাবে বলবো না তো কীভাবে বলবো?
শীলা ঃ ভালোভাবে কথা বলতে পারো না?
দীপু ঃ না, আমি এর চেয়ে বেশি ভালো করে কথা বলতে পারি না।
শীলা ঃ দেখো, কক্সবাজার এসে তুমি বলেছো, কোনো ঝামেলা আমার সাথে করবে না। এটা তোমার প্রতিজ্ঞা ছিলো।
দীপু ঃ আমি তোমার সাথে ঝগড়া করছি না। তুমিই তো আগবাড়িয়ে কথা বলছো।
শীলা ঃ আমি আগবাড়িয় কোন কথা বললাম বলতো! তুমি শুধু শুধু আমার সাথে ঝগড়া করার চেষ্টা করছো কিন্তু।
দীপু ঃ আমি মোটেও ঝগড়া করছি না। ঝগড়া বাড়াচ্ছো তুমি। আমি তো তোমার সাথে কোনো কথাই বলতে চাই না। তুমিই তো কথা বাড়াচ্ছো।


শীলা ঃ আস্তে কথা বল। পাশের রুমে দু’জন লোক আছে। সেটা তোমার মাথায় থাকা উচিত।
দীপু ঃ মাথায় তোমার থাকা উচিত ছিলো।
শীলা ঃ হায়রে কপাল। আমার জীবনটা বরবাদ হয়ে গেলো। আমি যে কী করি এই মানুষটাকে নিয়ে।
দীপু ঃ তুমি শুধু শুধু বাড়িয়ে বলছো সবকিছু। তুমি কী জানি বলতে চেয়েছো, আর এখন সেসব কথা না বলে কথা সিরিয়ালের মতো কথা প্যাঁচিয়ে বলার কী আছে? সরাসরি বললেই তো পারো।
শীলা ঃ তোমাকে বলছিলাম, ওরা কতো সুখী দেখতে পেয়েছো। ওরা কিন্তু আমাদের মতো নয়।
দীপু ঃ হ্যাঁ, আমিও তো দেখতে পাচ্ছি ওরা কতো সুখী। ঐ মহিলা কতো সুন্দর করে তার স্বামীর সাথে বলে তুমি নিশ্চয় সেটা লক্ষ্য করেছো। ঠিক তোমার মতো কিন্তু তার স্বামীর সাথে মোটেও আচরণ করে না। ঐ মহিলা কিন্তু অনেক ভালো। স্বামীর অনেক খেয়াল রাখে। ভাগ্য ভালো যে, তোমার মতো বউ ঐ লোকটার কপালে জোটেনি।
শীলা ঃ তা মানে, ঐ মহিলার দিকে তুমি লক্ষ্য করেছো?
দীপু ঃ হ্যাঁ, আমি খেয়াল করেছি বেশ ভালোভাবেই। মহিলা কী সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে সেজেগুঁজে স্বামীকে খুশি রাখে সেটা তো আমি দেখেছি।
শীলা ঃ আসলে তোমার চরিত্রই ভালো নয়। তুমি অন্য মহিলার দিকে কোন নজরে তাকাও।
দীপু ঃ এসব তুমি কী বলছো? আমি তো ভালো দৃষ্টিতে দেখেছি, আর তোমাকে সেসব কথা বলছি।
শীলা ঃ তোমার নজর এমন হবে কেনো? মহিলাদের দিকে এভাবে তুমি তাকাবে কেনো?
দীপু ঃ তাহলে তোমারই বা এতো দরকার কী তাদের দিকে তাকানোর?
শীলা ঃ আমি তো ঐ মহিলাকে দেখেছি মাত্র। বলছি—-। বাপরে বাপ। তোমার সাথে হবে না।
দীপু ঃ অন্যের ভালো দেখার দরকার নেই। তুমি কতোটা ভালো সেটাই তুমি খেয়াল কর। তুমি কী করতে পারো, তোমার সংসার কেমন হবে, কীভাবে সংসারে সুখী হবে সেটা চেষ্টা কর। অন্যের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে হা-হুতাশ করার দরকার নেই।
———

রমা অনেকটা আগ্রহের সাথে বিটুকে জিজ্ঞাসা করে, আমরা কখন সমুদ্র সৈকতে যাবো?
বিটু ঃ তোমার যদি ইচ্ছে হয় এখনই যেতে পারো?
রমা ঃ এটা কী রকম উত্তর হলো?
বিটু ঃ তুমি কী রকম উত্তর আশা করেছিলে?
রমা ঃ আমি তোমাকে সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কখন সমুদ্র সৈকতে যাবো, আর ঢেউ দেখবো।
বিটু ঃ তোমার যদি ইচ্ছে হয়, এখনও তুমি সেখানে যেতে পারো। আমি কিন্তু এখন মোটেও যেতে পারছি না।
রমা ঃ আমার কী মাথা খারাপ হয়েছে, এই ভরদুপুরে সমুদ্র যাবো?
বিটু ঃ তাহলে কেনো জিজ্ঞাসা করছো আমাকে? তোমার কি কমন চেন্স নাই মোটেও? এই দুপুর বেলা কী কেউ যায়? তুমি গিয়ে একটু দেখে আস তো সেখানে কোনো মানুষজন আছে কিনা। আরে, আমরা যাবো বিকেল বেলা। সবাই তখনই যায়। আমরাও যাবো তখন।
রমা ঃ তো, সেই কথাটা সুন্দর করে বললে হয় না। এতো চেঁচিয়ে বলার কী আছে।
বিটু ঃ এটা তো তোমার বোঝা উচিত। শুধু শুধু আমাকে জিজ্ঞাসা করার দরকার কীঃ
রমা ঃ আমার অপরাধ হয়েছে তাহলে?
বিটু ঃ না না না, তোমার কোনো অপরাধ হয় না। তোমার কোনো ভুল হয় না। সব ভুল হয় আমার। আমিই তো সবসময় ভুল করি।
রমা ঃ দেখো, তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো। আমার মতো সুন্দরী মেয়ে তোমার কপালে জুটেছে। আর আমি বলে তোমার সংসার করছি।
বিটু ঃ এতো চেঁচিয়ো না। আশপাশে লোকজন আছে। পাশের রুমে দু’জন মানুষ আছে সেটাও খেয়াল রেখো। বাপরে বাপ, একেবারে যাত্রা দলের খল নায়িকার মতো চিৎকার করছে।
রমা রেগেমেগে অস্থির হয়ে বললো ঃ তুমি যে একটা গুÐা!
বিটু ঃ তুমি যে খল নায়িকা!
রমা ঃ তুমি যে গুÐা!
বিটু ঃ খল নায়িকা!
রমা ঃ গুÐা!
বিটু ঃ খল নায়িকা!
রমা ঃ গুÐা!
বিটু ঃ খল নায়িকা!
রমা ঃ গুÐা!
বিটু ঃ খল নায়িকা!
রমা ঃ গুÐা!
বিটু ঃ খল নায়িকা!
রমা ঃ গুÐা!
বিটু রেগে মেগে দৌঁড় দিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে, এমন সময় পা পিছলে ধপাস করে পড়ে গেলো। রমা তাড়াতাড়ি দৌঁড়ে এসে বিটুকে ধরলো। মাথা একটু আঘাত পেলো। রমা বাথরুম থেকে জল এনে মাথা দিচ্ছে। এমন সময় পাশের রুম থেকে দীপু ও শীলা দরজা খুলে ছুটে এলো। দেখলো, মহিলা তার স্বামীর মাথায় জল ঢালছে।
শীলা একটু এগিয়ে হাসিমুখে বললো ঃ দিদি, আমরা কি আপনাদের সাহায্য করবো?
রমা হাসিমুখে বললো ঃ না না না দিদি, তার দরকার হবে না। ধন্যবাদ আপনাকে।
শীলা ঃ কীভাবে হলো দিদি।
রমা ঃ বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে আছাড় খেয়েছে মাত্র। এটা তেমন কিছু নয়।
শীলা ঃ ঠিক আছে দিদি। যদি প্রয়োজন হয় আমাদের বলবেন। আমরা তো আপনাদের পাশেই আছি।
রমা ঃ দিদি, আপনাদের পরিচয়টা দেবেন কি?
শীলা ঃ আমি শীলা। আর আমার স্বামী দীপু।
রমা ঃ আর আমার স্বামী বিটু; আর আমি রমা। আমরা ঢাকা থেকে এসেছি।
শীলা ঃ আমরাও তো ঢাকা থেকে এসেছি।
রমা ঃ তাহলে তো আমরা ভালো প্রতিবেশী।
শীলা ঃ ঠিক আছে দিদি, আমরা তাহলে বিকেলে সবাই একসাথে সমুদ্র সৈকতে যাবো।
রমা ঃ ধন্যবাদ। অবশ্যই যাবো।
শীলা ঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

দীপু আর শীলা নিজেদের রুমে চলে গেলো। দীপু বললো ঃ আহা রে! কী ভালোবাসা। ইস! ঐ ভদ্র লোকটা কী ভালো স্ত্রী পেয়েছে। স্বামীর কতো খেয়াল রাখে। যতœ করে মাথায় জল ঢেলে দিচ্ছে। সবই কপাল, সবই কপাল!
শীলা তেলেবেগুনে জ¦লে উঠলো। বললো ঃ তার স্বামী তাকে কতো ভালোবাসে তুমি সেটা দেখেছো। কতো সুখী রেখেছে। তাইতো এতো বড় আঘাত পাওয়ার পরও মহিলা কতো হাসিমুখে স্বামীর যতœ করছো। মুখের হাসি তো আর এমনি এমনি বের হয় না। সুখে বের হয়।
দীপু ঃ আমি মনে হয় তোমাকে সবসময় জ¦ালাতন করি।
শীলা ঃ তুমি তো ঝগড়াটে।
দীপু ঃ আমি ঝগড়াটে না। তুমি ওদের জীবন আর ভালোবাসা দেখে শেখো। তোমার শেখার অনেক কিছু দরকার আছে।
শীলা ঃ তুমি আর আমাকে রাগিও না তো। তোমার কথাবার্তা ভালো লাগে না।
দীপু ঃ ভালো লাগবে কোনো, আমি যে উচিত কথা বলছি তাই তোমার ভালো লাগার কথা নয়। সবসময় উল্টা পাল্টা কথা বললো।
শীলা ঃ আমি কোন কথাটা উল্টাপাল্টা বলেছি?
দীপু ঃ তমি না বলেছো, বিকেলে মার্কেট করতে যাবে?
শীলা ঃ হুম! বলেছিলাম তো।
দীপু ঃ তাহলে, ঐ মহিলাকে বললে কেনো আমরা সকলে একসাথে সমুদ্র সৈকতে যাবো।
শীলা ঃ ও, এটা তো ভুল হয়ে গেলো। ঠিক আছে, আমরা আগামীকাল সমুদ্র সৈকতে যেতে পারবো। তাতে তো কোনো সমস্যা নেই।
দীপু ঃ কথাটা তুমি বলেছো তো তাই কোনো সমস্যা নেই। যদি আমি বলতাম, তাহলে তো তুমি আমাকে অনেক সমস্যার কথা বলতে।
——————-

বিকেলে বিটু ও রমা সমুদ্র সৈকতে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়েছে। অপরদিকে দীপু ও শীলাও যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়েছে। তারা সকলে পরস্পরের সাথে বেশ হাসিমুখে সমুদ্র সৈকতের দিকে সৌন্দর্য উপভোগের জন্যে যাচ্ছে। আহ্া! কতো আনন্দ ওদের মনে। কিন্তু তারা পরস্পরের বিষয়ে মোটেও জানে না। এপারের দম্পতি বিটু ও রমা ভাবছে, আহা! ওরা কতো সুখী। কতো সুন্দর ওদের সংসার। ইস্! যদি তাদের মতো আমাদের জীবন হতো। তাহলে কতো ভালো হতো। অপরদিকে দীপু ও শীলাও একই ভাবে ভাবছে, তাদের মতো সুখী যদি আমরা হতে পারতাম তাহলে কতো ভালো হতো। জীবনকে কতো সুন্দর করে উপভোগ করতে পারতাম।

কিন্তু দূর থেকে সবকিছু সুন্দর লাগে। সবাইকে সুখী মনে হয়। সুখের অভিনয় সকলেই করে। হাসি দিয়ে অপরকে বোঝাতে চায়, আমরা কতো সুখী। এভাবে শিক্ষিত পরিবারগুলো দিনগুলো পার করে দিতে চায়। কেউ কাউকে বুঝতে দেয় না যে, আসলে কেউ সুখী নয়। কারণ, হাসির আড়ালে জীবনের সবকিছু সুন্দর করে উপস্থাপন করতে চায়।

ওরা সবাই হেঁটে চলে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্যে। হাঁটতে হাঁটতে দুই দম্পতি নিজেদের দিতে তাকায়। আর চোখ রাঙিয়ে নিজেদের বিরক্তি দেখায়। কিন্তু সদ্য পরিচিত মানুষ দু’টোর দিকে হাসি দিয়ে বোঝাতে চায় আমরা স্বামী-স্ত্রী কতো সুখী।