ঈদ পরবর্তী ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এগিয়ে আসুন

০৪ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
২০ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
১৩ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি
মঙ্গলবার

সম্পাদকীয়….

ঈদের আনন্দ সবার জন্যে। কারণ, ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু ঈদের আনন্দ সবার জন্যে হয়ে উঠে না। গরীবের জন্যে ঈদ আনন্দ বয়ে আনে না। অভাবী যারা থাকে, বিশেষ করে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের জন্যে জীবনের খুশির জোয়ার বয়ে আনে না। দু:খ যাদের নিত্যসঙ্গী; সুখের জোয়ার তাদের হৃদয় স্পর্শ করে না।

প্রিয় সময়ে ‘ জীবনই বাঁচে না, আর ঈদ!’ শিরোনামে সংবাদটি নিশ্চয় পাঠকদের হৃদয়কে একটু হলেও নাড়া দিয়েছে। সচেতন মহল একটু হলেও চিন্তিত হয়ে উঠেছেন ঈদের আনন্দ নিয়ে। সত্যিই কারো কারো জীবনে সংগ্রাম করতে করতেই জীবন চলে যায়। কখন যে ঈদ আসে, আবার কখন যে ঈদ চলে যায় তারা সেই হিসেব করে চলতে পারে না।

আমাদের চারিপাশের একশ্রেণীর দু:খী মানুষ রয়েছেন, যাদের ঈদের আনন্দ স্পর্শ করে না। ঈদ করতে যে উপকরণ প্রয়োজন সেটা তারা মিটাতে পারেন না। পরিবারের প্রত্যেকের জন্যে নতুন জামা কাপড়, ভালো খাবার দাবার, ছোট সন্তানদের মুখে হাসি ফুটানোর মতো আয়োজন তাদের ভাগ্যে জুটে না। এমন দু:খী পরিবারের অভাব নেই আমাদের সমাজে। অন্যের ঈদের আনন্দ দেখে তাদের দীর্ঘশ^াস ফেলা ছাড়া উপায় নেই। মুখে তাদের হাসি হারিয়ে যায়। তিস্তা পাড়ের বাঘের চরের ষাট বছর বয়সী বৃদ্ধা প্রতিবন্ধী লাইলী বেগমের দীর্ঘশ^াসের কষ্টের কথা এভাবেই তিনি প্রকাশ করেছেন, ‘জীবনই তো বাঁচে না, আর ঈদ। হামার তো ঈদ নাই বাহে। বাড়ি-ভিটাসহ ৫ বিঘা জমি ছিল সম্বল। তাও নদীর ভাঙনে শেষ। এখন নদীত বাড়ি ভিটে হারিয়ে এই বাঁধে আশ্রয় নিয়া আছি।’

তার মতো আরো অনেক পরিবারই রয়েছে যাদের এবারের ঈদের খুশি আনন্দ বহন করে আনেনি। একসময় যাদের সুখের সংসার ছিলো, তারা এখন কষ্টের দিন গুণে পার করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পানি বৃদ্ধির কারণে মানুষজন পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। সেসব এলাকায় ঈদের আনন্দ নেই। তারা ঈদের দিন জানলেও ঈদ করার মতো সুযোগ তাদের হয়নি। তাই বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে ঈদ আনন্দ নেই, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে তাদেরকে ত্রাণের জন্যে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। ছোটাছুটি মনে কোনো আনন্দ জায়গা করে নিতে পারে না; তাই ঈদের আনন্দও তাদেরকে করতে হয়নি।

পানিবন্দী মানুষগুলো হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট নিয়ে নিরানন্দ মনে ঈদ পার করেছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ ও নদী ভাঙ্গনের শিকার করে মানুষ, অভাবী দিনমজুর পরিবারগুলো, বস্তি এলাকার খেটে খাওয়া পরিবারগুলো, ফুটপাতে বছরের পর বছর আশ্রয়হীন জীবনযাপনকারী মানুষজন ঈদ আনন্দ করতে পারে না।

এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার কারণে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা রইলো না। সেসব পরিবারগুলো জীবন রক্ষার জন্যে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে। কেউ কেউ আবার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছে। তাদের জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কারো কারো আবার নদী ভাঙ্গনে জমি বিলীন হয়েছে, ভিটে মাটি হারিয়েছে নদীগর্ভে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে ওরা কোথায় যাবে সেই চিন্তায় মানসিক যাতনায় ওরা দিন পার করছে। ওদের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।

আমরা মনে করি, অসহায় এসব মানুষগুলোকে সাহায্যের জন্যে এসময় বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। ঈদপরবর্তী তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা সার্থক হবে বলে মনে করছি।