মেয়েরা বা মেয়ে শিশুরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে!

০৫ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
২১ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
১৪ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি
বুধবার

সম্পাদকীয়…

মেয়ে শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মেয়েরা একটু বড় হলেই চিন্তার শেষ নেই মা বাবা হতে শুরু করে আত্মীয়দের। কারণ প্রতিদিনের সংবাদ মাধ্যমে আমরা দুঃখজনক ঘটনাগুলো শুনতে চাই। এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে যে, যে ঘটনাগুলো শুনলে আমারে গা শিউরে উঠে। আর প্রতিটা ঘটনাই মেয়ে শিশুদের নিয়ে। কিছু হিংস্র পশুরুপী পুরুষ মানুষ মেয়ে শিশুদের দেখলেই তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে দ্বিধা করে না। তাদের লজ¦া নেই, ভয় নেই। এসব ঘটনা চারিদিক রটিয়ে গেলে, অথবা সংবাদ মাধ্যমে জানাজানি হলে মেয়ে শিশু থাকা এমন পরিবারগুলোর চিন্তার শেষ থাকে না। না জানি তাদের মেয়েদের সাথেও এমন হতে পারে। তাই তাদের সন্দেহ জাগে, আশপাশের অপরিচিত পুরুষের উপর। তারা আরো অতিরিক্ত সাবধান হয়ে তাদের মেয়ে শিশুদের রক্ষার জন্যে। এতো কিছুর পরেও এ ধরনের ঘটনা আমাদের ঘটেই চলেছে।

আমরা প্রিয় সময়ে গত ৩ আগস্ট ‘চাঁদপুরে নিখোঁজের ৩দিন পর স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার’ শিরোনামে সংবাদটি পড়ে জানতে পেরেছি মর্মান্তিক শিশু নির্যাতনের ঘটনার কাহিনী। পাঠকমাত্রই ঘটনাটি পরে আঁৎকে উঠেছেন নি:সন্দেহে। মনে শুধু প্রশ্ন জাগে, আমরা এখন কোথায় আছি? কোন যুগে বাস করছি? যে এ হীন কাজ করেছে, তারও তো নিশ্চয় ছোট বোন রয়েছে, নতুবা তারও এ বয়সী মেয়ে রয়েছে, তারও এ বয়সী ভাগ্নী রয়েছে, অথবা সে নিশ্চয় একটি পরিবারের সদস্য। এখন তার এই জঘন্য কাজের জন্যে তার সাথে জড়িত তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে কীভাবে মুখ দেখাবে? কীবে সে সমাজে চলবে? এখন এই লজ¦া কোথায় গিয়ে লুকাবে? যদি কেউ তাকে চিনে থাকে, তাহলে সেও নির্লজ্ব; যদি তার পরিবার জেনে থাকে ও তাকে প্রশ্রয় দেয়, বা বাঁচানোর চেষ্টা করে তাহলেও সেও নির্লজ্জ; যদি তার আত্মীয়স্বজনও জেনে থাকে ও তাকে প্রশ্রয় দেয়, বা বাঁচানোর নোংরা চেষ্টা করে তাহলেও তারা নির্লজ্জ; যদি তার সমাজ জেনেও তাকে প্রশ্রয় দেয় ও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে তাহলে সেই সমাজই নোংরা ও নির্লজ্জ। আর সমাজই যদি নির্লজ্জ হয়, তাহলে সেখানে কোনো কথাই থাকে না। ঐ সমাজই নোংরা আবর্জনায় পূর্ণ!

আমরা মোটেও প্রত্যাশা করি না যে, এমন খারাপ লোকদের কোনো মানুষ প্রশ্রয় দেবে। বরং তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে চেষ্টা করবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে। যেন এমন নোংরা ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, ‘চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৯নং কড়ইয়া ইউনিয়নের বড়-হায়াতপুর গ্রামে নিখোঁজের ৩ দিনপর কামরুন্নাহার মিশু (১৪) নামে স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে ওই ছাত্রী বাড়ি সংলগ্ন বিলে ঘাস কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।’ এ ঘটনায় আমরা এটা পরিস্কার বুঝতে পারছি যে, মেয়েরা মোটেও স্বাধীনভাবে চলতে পারবে না। পরিবারের প্রয়োজনেও তারা বাইরে যেতে পারবে না। মেয়েদের জন্যে আলাদা পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন; যা’ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা স্পষ্ট যে, মেয়েটি তার পরিবারকে সাহায্যের জন্যে অর্থাৎ গবাদি পশু খাদ্য সংগ্রহের জন্যে বিলে গেছে। আর হয়তো সে এভাবেই প্রায় সময়ই যেতো, যা’ হয়তো তার পরিবারকে সাহায্য করতো। দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা এটা সাধারণত করেই থাকে। ধর্ষণ করে মেয়েটিকে মেরে মেলার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, হয়তো ধর্ষণকারী এক অথবা একাধিক ব্যক্তিকে মেয়েটি ভালোভাবেই চিনতো। অন্তত ধরা যে না পরে সে কারণে তাকে মেরে ফেলেছে।

এখন এটা স্বাভাবিক যে, মেয়েটির পরিবার ও আত্মীয়স্বজন মানসিকভাবে কতোটা কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে মৃত্যুর কোনো সান্ত¡না হতে পারে না। ঐ পরিবারের আত্মীয়স্বজন, এমনকি এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হবে এটা একেবারেই স্বাভাবিক। আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে, যেন হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারে। আমরাও চাই, সেই দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

এই নির্লজ্জ ও দু:খজনক ঘটনা প্রভাব শুধুমাত্র মেয়েটির পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো না। এই প্রভাব গিয়ে পড়েছে, সাদিপুরা- চাঁদপুর এম.এ খালেক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপরও। কেননা সে ঐ স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সুতরাং এই লোমহর্ষক ঘটনাটি অনেকের হৃদয়কে কাঁপিয়ে তুলেছে। চারিদিকে ঘৃণার ধ্বনি বেজে উঠেছে।

এ ধরনের ঘটনা একটি পরিবারকে কাঁদিয়ে যায়। পাশাপাশি কাঁদিয়ে যায় আত্মীয়স্বজন হতে শুরু করে শুভাকাঙ্ক্ষী সকলকে। ঘৃণিত এধরনের কার্যক্রম যারা করে তাদেরকে অবশ্যই কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত। আমরা এ ধরনের নিন্দনীয় কাজের নিন্দা জানাই। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি; কিন্তু আমাদের মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে চলতে পারে না, মেয়েরা বা মেয়ে শিশুরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে! আমাদের দাবি, তথা এখন সকলের দাবি, যেন মূল দোষী বা দোষী ব্যক্তিরা ধরা পড়ুক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তাদের দেয়া হোক। যেন আর কোনো সরল মেয়ের জীবন অকালে হারিয়ে না যায়, যেন কোনো মা বাবা তার মেয়েকে এভাবে না হারায়।