আমাদের কি অনুভূতি ভোঁতা হতে চলেছে?

১৬ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
০১ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
২৫ জ্বিলহজ্ব ১৪৪১ হিজরি

প্রকাশিত : রোববার

সম্পাদকীয়

চারিদিকের ঘটনার প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে, মানুষের জীবন কতোই না সস্তা হয়ে গেছে! মানুষের জীবনের মূল্য নেই বললেই চলে! প্রায় দিনই ঘটে চলেছে হত্যা, আত্মহত্যার মতো নানাহ্ ঘটনা! আর আমরা শুনতে শুনতে, জানতে জানতে আমাদের কান ঝালাপালা হয়ে গেছে, আমরাও অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমাদের গা হওয়া হয়ে গেছে সবকিছু, সব ঘটনা!

কিন্তু না, আমাদের জীবনের মূল্য অবশ্যই রয়েছে। আমরাই আমাদের জীবনের মূল্য অর্থহীন করে তুলেছি। আর যেসব ঘটনা আমরা শুনি, শুনতে শুনতে আমাদের আর সেসব ঘটনাকে হতবাক করেই না। সবই যেন মামুলি ব্যবহার হয়ে গেছে!

আর যারা এসব ঘটনা ঘটায় বা যাদের কারণে এসব ঘটনা ঘটে তাদের কাছে এসব ঘটনাকে ডালভাত বলে মনে হয়। তাদের কাছে এসব কিছুই না, নাথিং। তাই তো তারা সাহস সঞ্চার করে ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে।

গত ১১ আগস্ট প্রিয় সময়ে ‘রায়পুরে বিয়ের তিন দিনের মাথায় নববধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার’ শিরোনামে মর্মান্তিক ঘটনাটি মামুলিভাবেই ঘটে গেছে। যদিও ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। অবশ্য এসব ঘটনা বিজ্ঞজনদের কাছে হতাশার, কান্নার, বেদনার ও যাতনার ঘটনা।

প্রকাশিত সংবাদের ল²ীপুর রায়পুরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, বিয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই তানিয়া আক্তার (২০) নামে এক নববধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের চিন্তাচেতনাকে নির্মমভাবে হত্যা করে চলেছে প্রতিনিয়তই। এভাবে বহু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে বাংলাদেশের আনাচেকানাচে! এতো ঘটনার পরেও আমরা সতর্ক হতে পারছি না, পারছি না এসব ঘটনা ঠেকাতে; কিন্তু কেনো?

‘কিন্তু কেনো?’এর উত্তর আমরা খুব কমই পাই। আর পেলেও আমরা এভাবে আত্মহত্যা বা হত্যার ঘটনার সুরাহা করতে পারি না। সমাধানহীন এসব ঘটনা নিত্যদিন আমাদের আরো কাঁদিয়ে থাকে। আমরা মর্মাহত হই; এভাবে মর্মাহত হতে হতে আমাদের সকলেরই জেগে উঠা চেতনাবোধ একসময় ঘুমিয়ে যায়। যদিও কষ্টদায়ক ঘটনা; তবুও এসবকে আমরা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই একসময় ভুলে যাই। কারণ, আজ যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো, হয়তো আগামীকাল আরেকটা ঘটনা ঘটেছে, তখন আমরা অনায়াসে আগের দিনের ঘটনা একেবারেই ভুলে যাই।

আমরা যারা প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস, অন্তত তাদের কাছে এসব ঘটনা পড়তে পড়তে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে যাই যে, পরবর্তী ঘটনা পুরোটা কেউ কেউ পড়েই না। শুধুমাত্র শিরোনাম পড়েই বুঝে যায় যে, ভেতরে কী আছে? আর ভেতরের ঘটনা এভাবেই ভেতরেই থেকে যায়। হারিয়ে যায় একসময় ঠিক মুহূর্তের মধ্যে সেসব মর্মান্তিক ঘটনাগুলো। এসব নির্মমতা জানতে জানতে, শুনতে শুনতে আমাদের কী অনুভূতি ভোঁতা হতে চলেছে?

যার হারায়, সেই বুঝে হারানোর বেদনা কতোটা কষ্টের! তেমনি যে তার সন্তানকে হারায়, যে তার মাকে হারায়, যে বাবা তার একমাত্র ছেলেকে হারায়, যে বোন তার বোনকে হারায়, অথবা যে মা তার মেয়েকে হারায়, মেয়ে তার মাকে হারায়; একমাত্র সেই বেদনার নিখুঁত কাঁটার আঘাত উপলব্ধি করতে পারে! কবে নিস্তার পাবো আমরা এসব ঘটনা থেকে রক্ষা? সত্যিই সত্যিই আমাদের অনুভূতি ভোঁতা হতে চলেছে?

 

বিজ্ঞাপণ