ডাক্তারের দেখা পাওয়া কঠিন শিশু হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছোট্ট শিশু সায়মা। কয়েক দিন হলো জ্বর, পেটব্যথ্যায় ভুগছে। বাবা তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এনেছেন। কিন্তু ডাক্তার দেখানোর জন্য অনেক সময় বসে থাকতে হবে বলে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার চিন্তা করছেন তিনি। তার বাবা বলেন, সকালে এসেছি। ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তাই ভাবছি অন্য কোথাও যাওয়া যায় কি না। শিশু আয়মান কয়েক দিন থেকে ভর্তি রয়েছে এ হাসপাতালে। তার বাবা হাসপাতাল গেটে দাঁড়িয়ে আছেন। অপেক্ষা করছেন বাসা থেকে খাবার আসবে তা নেওয়ার জন্য। গেটে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।

এ অভিভাবক জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার ভোগান্তির কথা। তিনি বলেন, জটিল রোগ নিয়ে তার ছেলেকে এখানে ভর্তি করান। কিন্তু তারা ডাক্তার পাননি। মাঝে মাঝে নার্স এলেও তারা তেমন সেবা দিতেন না। ক্যানোলা লাগাতেও ঘুরতে হয়েছে নার্সদের পিছু পিছু। কিন্তু তার চিকিৎসা শেষ না হতেই এ শিশু ওখানেই করোনায় আক্রান্ত হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তরের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৮০ ভাগ শিশুই চিকিৎসা পাচ্ছে না।

যাদের লোকজন আছে তারা একটু চিকিৎসা পেলেও যাদের কেউ নেই তাদের চিকিৎসাও নেই। গতকাল সরেজমিন এ হাসপাতাল ঘুরে নানা ভোগান্তি দেখা গেছে। রোগীর স্বজনরাও ভোগান্তির নানা কথা তুলে ধরেছেন। তারা বলেন, শিশু হাসপাতালে সেভাবে চিকিৎসা নেই। করোনার কারণে ডাক্তারের দেখা পাওয়া কঠিন। নার্সরাও ভালো আচরণ করেন না। অনেক শিশুকে ভর্তি করেই রাখা হচ্ছে মাত্র। তেমন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।

হঠাৎ কোনো শিশু বেশি অসুস্থ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতাল নয়, শিশুদের চিকিৎসা নিয়ে রাজধানীর সবখানে ভোগান্তি পোহাতে হয় পরিবারকে। বাবা-মায়েদের চিন্তায় থাকতে হয় কোথায় গেলে ভালো শিশু ডাক্তার পাবেন। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। তার মেয়ে কয়েক দিন থেকে ঠিকভাবে প্রস্রাব করছে না। তিনি তার সন্তানকে নিয়ে করোনাকালে অনেকটা বিপাকে পড়েন। তিনি জানান, মিরপুরের এমআর খান শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু দেখি ডাক্তার অনেক দূরে থেকে শিশুদের দেখছেন। দূর থেকে টর্চ লাইট মেরে শিশুর মুখের ভিতর দেখেন ডাক্তার। এতে করে ডাক্তার কী বুঝবেন শিশুর সমস্যা। তাই এখানে আর ডাক্তার দেখাইনি।

মিরপুর থেকে উত্তরা গিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। এরপরে টেস্টের জন্য আবার এমআর খানে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম দিন গিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা করাতে পারলেও আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। সংশ্লিষ্টরা তাকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার ছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো যাবে না। তাই টেস্টের জন্য এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, করোনায় ডাক্তার দেখানো যেমন সমস্যা। তেমনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হয়।