ইয়াবা আমদানি বন্ধে সকল ধরনের পদক্ষেপ কঠোরভাবে গ্রহণ করা হোক

সম্পাদকীয় …

নেশা জাতীয় ওষুধ ইয়াবার আক্রমণের শিকার আমাদের সমাজ। এক ভয়াবহ মাদক যা মানুষের মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র এবং শরীরের যে কোনো অঙ্গকেই আক্রান্ত করতে পারে। আস্তে আস্তে কার্যকরহীন করে তোলে একটি সুন্দর দেহ, মন ও মানসিকতার। ইয়াবায় যারা আক্রান্ত হয়, তাদের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে। তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনেকে একে পাগলা ওষুধও বলে থাকে।

ইয়াবার আসক্তে উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো ক্ষয় হওয়া ও রক্তক্ষরণ হওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুরের প্রবণতা বেড়ে যায়। এতে পারিবারিক অশান্তিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। ক্ষণিকের ভালো লাগলেও ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা বিষণœতায় ভোগে বেশি। এমনকি কারো কারো মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দেয়।

প্রিয় সময়ে ‘বিমান বন্দর থেকে ফরিদগঞ্জের ইয়াবা মামলার আসামী আটক’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি ভয়ানক পরিস্থিতি; যা আমাদের হতবাক করেছে, যদিও অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে জানা গেছে। ফরিদগঞ্জে সাড়ে সতের হাজার পিস ইয়াবা মামলার আসামী বিমান বন্দর থেকে নুরুল ইসলাম (৫৩) নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এটি আমাদের সকলকেই বিস্মিত করেছে। তাকে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক করা হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এভাবেই আমাদের দেশে আমদানি হচ্ছে ইয়াবা নামক মরণব্যাধি! ইয়াবার ক্ষতিতে আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের দেশের হাজার হাজার মানুষ। কেননা দীর্ঘদিন ‘ইয়াবা’ সেবনে শারীরিক ও মানসিক মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়। এর মরণ ছোবলে জীবন নিঃশেষ হয়ে যায়।

শোনা যায়, পাহাড়ে কোনো গাড়ি সহজে টানতে চাইত না বলে ঘোড়াকে পাগল করে দিতে মিয়ানমারের শান প্রদেশে বার্মিজরা এই ড্রাগ তৈরি করে ঘোড়াকে খাওয়াত। পরে প্রচ- কায়িক শ্রমে জড়িত মানুষও এই ঘোড়ার ট্যাবলেট নেয়া শুরু করে। পর্যায়ক্রমে এটি যৌনকর্মীরা সেবন করতে শুরু করে। এখন এই মরণ নেশা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে এবং আমদানিকৃত এই বিষয় আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত গতিতে।

আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের বেশি আকর্ষণ করছে ইয়াবা। ইয়াবা নামের ছোট্ট এ ট্যাবলেট দেখতে অনেকটা ক্যান্ডির মতো, স্বাদও তেমনই। ফলে আসক্তরা এর প্রচ- ক্ষতিকর প্রভাবটুকু প্রথমে বুঝতে পারে না। আর একবার আষক্ত হয়ে গেলে ফিরে আসতে পারে না কেউ। ক্ষতিকারক এই মাদক দীর্ঘদিন গ্রহণ করার কারণে দ্রুতগতিতে মানুষের জীবনধারার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া এই আসক্তির কারণে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের মারাত্মক ক্ষতিও হয়। প্রচ- রকমের যৌন উত্তেজক ক্ষমতা রয়েছে বলেই অনেকে এই ইয়াবা ব্যবহার করে। তখন আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে এটি ছেড়ে দেয়া অসম্ভব হয়ে যায়। ইয়াবা গ্রহণের শুরুর দিকে সাময়িক যৌন উত্তেজনা বাড়ে ঠিকই; তবে ধীরে ধীরে যৌনক্ষমতা লোপ পায়; এমনকি একেবারেই ধ্বংস হয়। তাছাড়া শুক্রাণুরও ক্ষতি হয় এবং সন্তান জন্ম দেয়ার সক্ষমতা বিনষ্ট হয়। অপরদিকে নারীদেরও ঋতুস্রাবে সমস্যা হয় এবং ক্রমান্বয়ে তাদের যৌন চাহিদা, দক্ষতা বা সেক্স পাওয়ার কমে যায়। এমনি করে অনেক ক্ষতির দিক রয়েছে ইয়াবা সেবনের কারণে।

সুতরাং ইয়াবা আমাদের সমাজকে করে কলুষিত এবং দেশকে করে পঙ্গু। পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরে। এই মাদক জীবন থেকে জীবন এবং হৃদয়ের আবেগ অনুভূতি কেড়ে নেয়। আলোর পথ ছেড়ে নিয়ে যায় অন্ধকার পথে। স্বাধীন হৃদয় পরিণত হয় নেশার দাসে। সুতরাং এই ইয়াবা থেকে বাঁচতে আমাদের দ্রুত পদত্যাগ নেয়া দরকার।

আমরা আশা করবো, এভাবে ইয়াবা গ্রহণকারী সকলকে আটক করা হোক এবং তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। আমাদের দেশে ইয়াবা আমদানি বন্ধের জন্যে সকল ধরনের পদক্ষেপ কঠোরভাবে গ্রহণ করা হোক। তাহলে আমাদের তরুণরা রক্ষা পাবে।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

আপডেট সময় : ১১:৪২ এএম

১৯ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪২ হিজরি, বৃহস্পতিবার