করোনাকালে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা!

সম্পাদকীয় …

প্রিয় সময়ে ‘করোনাকালে পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আবারো পাঠক সমাজ অবগত হয়েছে যে, এ সময়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় দারুণভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। তাদের শিক্ষায় ধস নেমেছে বলতে হয়। যদিও বিভিন্নভাবে কোনো কোনো শিক্ষার্থী কিছুটা পড়াশোনার বিষয়ে সহযোগিতা পাচ্ছে; কিন্তু গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বিষয়ে একেবারে পিছিয়ে পড়েছে বলতে হয়।

আমরা জানি, দেশের করোনা কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাড়িতে তেমন একটা পড়াশোনা করছে না। বিশেষ অসচেতন ও অশিক্ষিত দরিদ্র পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে। বিদ্যালয়ে যেতে না পেরে গৃহবন্ধী হয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বিষয়ে অলস হয়ে যাচ্ছে। আর পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়ছে তারা।

টানা ছয় সাত মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আশায় ছিলো বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। শিশুদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় বিদ্যালয় খোলা বিলম্ব হচ্ছে। করোনা আতঙ্কে থাকার পাশাপাশি দেশের মানুষ লকডাউনের আতঙ্কে ভুগছে।

কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। আদতে সেই পরিচালনায় শিক্ষার খুব একটা কার্যকরী হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না-এই অভিমত কোনো কোনো অভিভাবকের। তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনাকালে ঘরে বসেই অনলাইনে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সহায়তায় ঘরে বসে চলছে অনলাইনে পড়ালেখা। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, মফস্বলের শিক্ষার্থীরাও এখন নিয়মিতভাবেই অংশ নিচ্ছে অনলাইন ক্লাসে। মফস্বলে থেকেও শিক্ষার্থীরা ইউটিউবের মাধ্যমে রাজধানীর নামি-দামি শিক্ষকদের ক্লাস দেখতে পারছে। আবার মফস্বলের শিক্ষকরা ইউটিউবে তাঁদের ক্লাস আপলোড করে দক্ষতার প্রমাণ দেখাচ্ছেন।

এটা অবশ্য সত্য যে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই এতোদিন তথ্য-প্রযুক্তিতে খুব একটা দক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি; কিন্তু করোনাকালে তারা নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জুমের মাধ্যমে পরিচালিত ক্লাসে একে অন্যকে দেখতে পাচ্ছে ও প্রশ্ন করতে পারছে। কোথাও বোঝার সমস্যা হলে তা জেনে নেয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সরাসরি শিক্ষকদের প্রশ্ন করছে, শিক্ষকরাও উত্তর দিচ্ছেন।

তারা যারা আগে অনলাইন ক্লাসের কথা চিন্তাও করেনি, তারা এখন নিয়মিতভাবেই এই ক্লাস করছে। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ক্লাস করছে। প্রযুক্তির কল্যাণেই এই মহামারির সময়ও পড়ালেখা অব্যাহত রয়েছে। তবুও পড়াশোনায় খুব একটা এগিয়ে যাচ্ছে বলা যাবে না। কেননা স্কুলে গিয়ে যে পরিবেশে শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ তারা পায় সেটা ঘরে বসে খুব একটা পুষিয়ে উঠতে পারে না। সুতরাং বলতেই হয় যে, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে।

তবে বুদ্ধিমান শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা ঠিকই আদায় করে নিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মহামারির এ সময়ে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী এতে উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা সেটা পারছে বলে মনে হয় না। বাসার কাজের বুয়া। খুবই কর্মঠ একজন মহিলা। তার একটি মেয়ে আছে। তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল। আর এখন স্কুলও বন্ধ। কাজের সেই বুয়াকে জিজ্ঞাসা করুন তো, তার মেয়ে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয় কিনা? হয়তো সোজা উত্তর আসবে ‘স্যার আমাদের তো কোনও টিভি অথবা দামী মোবাইল নেই’! সুতরাং করোনাকালে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে দেশের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষায় যে ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তা কখনও পূরণ হবে না। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, কৃষি, ভয়াবহ বন্যা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়িয়েছে, বিদেশ হতে ভালো রেমিট্যান্স এসেছে, তৈরি পোশাক শিল্প আবার তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে, দেশের অর্থ যারা বাইরে পাচার করে তাদের তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে; কিন্তু শিক্ষার? এই করোনাকাল আমাদের জন্যে একটি দুর্যোগ। এতে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার চল্লিশের কাছাকাছি হতে পারে। একাধিক গবেষণা সংস্থা এমনটাই বলছে। এটি একটি ভয়াবহ চিত্র! করোনাকালের এই ক্ষতিটা পুষিয়ে ওঠা সহজ বা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভবও নয়!

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

আপডেট সময় : ১২:৫৬ পিএম

২৯ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪২ হিজরি, রোববার