শিবচরে মুক্তিযোদ্ধার অসহায় জীবন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়েও আবার বন্ধ

মাজহারুল ইসলাম রুবেল, মাদারীপুর প্রতিনিধি :

মাদারীপুরের শিবচরে ১৯৭১ সালে যুদ্ধচলাকালিন সময়ে একজন রাজাকারকে বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে আলোচিত সহকারী মুক্তিযোদ্ধা ওহাব চোকিদার অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।

৭১’এর সেই বীর বৃদ্ধ বয়সে মানুষের দ¦ারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেশ কিছুদিন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও তা আবার কি কারণে বন্ধ রয়েছে? প্রশ্ন এলাকাবাসীর। ভাতা বন্ধ থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করা সহকারী মুক্তিযোদ্ধা ওহাব চোকিদার।

ওহাব চোকিদার শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি গ্রামের সিকিম আলী চোকিদারের ছেলে। উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্রেস আর ভাতার বই নিয়ে পাগলের মত এর কাছে ওর কাছে ছুটে যাচ্ছে শুধু তার সম্মানটুকু পাওয়ার জন্য। মুক্তিযোদ্ধা ওহাব চোকিদারের ভাতা পূনরায় চালু করার জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও যুদ্ধচলাকালিন তারই সহযোদ্ধারা। শিবচর সংবাদদাতা রবিউল হাসান-এর তথ্য ও ছবিতে বিস্তারিত প্রতিবেদন।

১৯৭১ সালে যুদ্ধচলাকালিন সময়ে মাদারীপুরের শিবচরে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকায় করে বিভিন্ন অপারেশনে নিয়ে যেতেন ওহাব চোকিদারকে।

কখনও জঙ্গলে, কখনও কোন নির্জন স্থানে দিন কিংবা রাতে সার্বক্ষনিক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকে যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন তিনি। যেকোন অপারেশনে গেলে বিস্তস্ত সহযোদ্ধা ওহাব চোকিদারের নৌকায় চরে পারাপার হতেন মুক্তিযোদ্ধারা এবং বিভিন্ন জায়গায় রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাতেন। সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকায় করে পারাপার করতে গিয়ে এক রাজাকারের অস্ত্রের মুখে পরেও সাহসের সাথে নৌকার বৈঠা দিয়ে এক রাজাকারকে পিটিয়ে হত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধা ওহাব চোকিদার। যুদ্ধচলাকালীন তার সহযোদ্ধারাও দাবি করেন তখনকার তার ভূমিকার কথা। রাজাকারকে পিটিয়ে হত্যা করে আলোচিত সেই সহকারী মুক্তিযোদ্ধা ওহাব চোকিদার আজ মানবেতন জীবন যাপন করছেন। ছোট একটি কুড়ে ঘরে কোন রকমে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন।

কোন দিন খেয়ে কোন দিন না খেয়ে তার জীবন চলছে। কিছুদিন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেলেও অলৌকিক কারণে তা বন্ধ রয়েছে কেন প্রশ্ন এলাকাবাসী ও সহযোদ্ধাদের মনে। ভাতা বন্ধ হয়ে পড়ায় করুণ দশায় আজ তার জীবন চলছে। স্ত্রীসন্তান নিয়ে নিদারুন কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ দাবী জানিয়েছেন তার ভাতা পুনরায় চালু করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় যেন তার সম্মানটুকু ফিরিয়ে দেন। শিবচর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো: শাহআলম জানান, মন্ত্রনালয়ের একটি নির্দেশনা রয়েছে যেটা, যাদের বামুস সনদ রয়েছে তাদের অবশ্যই ভারতীয় তালিকার গেজেট অথবা মুক্তিযোদ্ধা সনদ এই দুটির একটি তালিকায় নাম থাকতে হবে।

কিন্তু ওহবা চৌকিদারের দুই তালিকার একটিতেও নাম না থাকার কারণে কমিটি তার ভাতা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাদের কাগজপত্রে ত্রুটি রয়েছে শুধুমাত্র তাদের ভাতা আপাতত স্থগিত রয়েছে। তারা যদি সঠিকভাবে কাগজপত্র প্রদান করতে পারে তাহলে পুনরায় ভাতা চালু করা হবে।