মহাধুমধামে মাদারীপুরে ২ প্রতিবন্ধীর বিয়ে দিলেন এলাকাবাসী

মাজহারুল ইসলাম (রুবেল) : বিয়ের গেট সাজিয়ে, প্যান্ডেল নির্মাণ করে,গায়ে হলুদসহ ধুমধাম আয়োজনে মাদারীপুরের শিবচরে দরিদ্র দুই প্রতিবন্ধী যুবক যুবতীর বিয়ে দিলেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর এই প্রশংসনীয় উদ্যোগে খুশি নব দম্পত্বি। ভালবাসার স্বীকৃতি পেয়ে তারা কৃতজ্ঞতা সাধারনের মতো জানাতে না পারলেও তাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দ উচ্ছাস।

জেলার শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা গ্রামের হতদরিদ্র সিরাজ শিকদার ও মমতাজ বেগম দম্পতির ৬ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সুমা আক্তার (২১) জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ছেলে বিয়ের পর থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় দিনমজুরী করে বসবাস করছেন। নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাবা মা ও বোনদের ভরন পোষনে সামান্য পরিমানের অর্থই দিতে হিমশিম খান। তাইতো এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সিরাজ শিকদার ৫ মেয়ের বিয়ে আরো আগেই সম্পন্ন করেছেন।

সবচেয়ে ছোট মেয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় খুব চিন্তার মধ্যেই ছিলেন হতদরিদ্র বৃদ্ধ সিরাজ শিকদার ও মমতাজ বেগম। একই গ্রামের আলী আহম্মদ মৃধাকে মামা বলে ডাকতো সুমা। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আলী আহম্মদ তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের খুবই খেয়াল রাখে। সুমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল মামা আলী আহম্মদের বাড়িতে। এদিকে আলী আহম্মদ মৃধার বাড়িতে থেকে এলাকায় রঙ্গের কাজসহ দিনমজুরী করে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার বাবুরচর গ্রামের নোয়াব আলী খালাসীর ছেলে মোহাম্মদ খালাসী। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে মোহাম্মদ খালাসী সবার বড়। সে জন্ম থেকেই কিছুটা সহজ সরল অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন। এক পায়েও রয়েছে তার সমস্যা।

ফলে অনেকটা খুঁড়িয়েই হাটাচলা করেন তিনি। আলী আহম্মদের বাড়িতে সুমার যাতায়াতকালে মোহাম্মদ খালাসীর সাথে সুমার ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। এটা বুঝতে পেরে পরিবারের মুরব্বীরা সুমা ও মোহাম্মদের কাছে জানতে চায় তারা দুজন দুজনকে বিয়ে করবে কিনা। একথা শুনে দুই প্রতিবন্ধী যুবক যুবতী খুবই খুশি মনে বিয়েতে সম্মতি দেয়। এবং ধুমধামের সাথে তাদের বিয়ের দাবী জানায়। এটা শুনে ছেলের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দুজনের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।

বিজ্ঞাপণ

পরে মামা আলী আহম্মদ মৃধা দায়ীত্ব নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদারসহ স্থানীয় ব্যাক্তিদের সহযোগিতায় প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে শুক্রবার সুমাদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করে। বিয়ে উপলক্ষে আগের দিন হয় গায়ে হলুদ। নেচে গেয়ে আনন্দ পালন করে বর বধু। নির্মান করা হয় গেট, বড় প্যান্ডেল, বাজনা, মাইকসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। ২ শতাধিক অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য পোলাও, গরুর মাংস, মুরগীর রোস্ট, মুগ ডাল, পায়েসসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। কাজী ডেকে বিয়ের কার্য সম্পন্ন করা হয়।

নব এই দম্পত্তি¡কে দোয়া করেন স্থানীয়রা। কনের মা বাবা মেয়ে ও জামাইকে নিজ বাড়িতেই রাখবেন বলে জানান। কৃতজ্ঞতা জানান আয়োজকদের প্রতি।