কুমিল্লার দেবিদ্বারে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করায় কিশোরী ও তার পরিবারকে লাঠিপেটা!

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা ব্যুরো: ২৬ আগস্ট ২০২১

কুমিল্লার দেবীদ্বারে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আদালতে দায়ের করা মামলা তুলে না নেওয়ায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক কিশোরী (১৪) ও তাঁর মা জেসমিন আক্তার (৩৫), পিতা জামাল হোসেনকে (৪৫) ঘর থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলা সুলতানপুর ইউনিয়নের কুরছাপ পূর্বপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের এ ভিডিওটি বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক যুবক ফেইসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামী মো. হাসানের বড় ভাই কাউছার আহম্মেদ ভিকটিম কিশোরীর মাকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে লাঠিপেটা করছে। এসময় তাকে স্থানীয় কয়েকজন থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে ওই কিশোরীর মা অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে উপ-পরিদর্শক (এস,আই) ওমর ফারুক, উপ-পরিদর্শক (এস,আই) আলমগীর হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এস,আই) শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ভিকটিমের পরিবারকে থানায় এসে অভিযোগ দেয়ার জন্য বলেন।

বৃহস্পতিবার (২৬আগস্ট) রাতে ভুক্তভোগী কুরছাপ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ওই কিশোরীর বাবা মোঃ জামাল হোসেন বাদী হয়ে কুরছাপ গ্রামের একই পরিবারের ৮জনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্তরা হলেন, মোঃ নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ কাউছার (৩৫) ও মোঃ হাসান (২৫), প্রয়াত আলী হোসেনের ছেলে মোঃ নুরুল ইসলাম (৬৫), মোঃ কামাল (৫৫) ও মোঃ সফিকুর রহমান (৬০), মোঃ কাউছারের স্ত্রী মোসাঃ নারগিছ (৩০), মোঃ হাসানের স্ত্রী মোসাঃ আনিকা (২৫), মোঃ কামাল হোসেনের স্ত্রী মোসাঃ কুলছুম (৪০)।

মামলা নং-১৯. তারিখ-২৬/০৮/২০২১ইং।

বৃহষ্পতিবার রাতে দেবিদ্বার থানায় দায়ের করা এসংক্রান্ত মামলার বিবরণে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ মে বিকাল ৩টায় ওই কিশোরীকে একটি খালি ঘরে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় হাসান।

এ ঘটনা হাসানের চাচী কুলসুম আক্তার দেখে ফেললে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। পরে অচেতন অবস্থায় স্থানীয় লোকজন এসে ওই কিশোরীকে ঘর থেকে উদ্ধার করেন।

পরদিন ওই কিশোরীর বাবা মো. জামাল হোসেন কুমিল্লা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় হাসানের পরিবার।

স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর সহযোগিতায় মামলা তুলে নিতে ওই কিশোরীর পরিবারকে চাপ প্রয়োগসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকী দিতে থাকে। পরে গত ২০আগস্ট দুুপুরে হাসানের বড় ভাই কাউছার ওই কিশোরীর মাকে রাস্তায় পেয়ে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন।

ভিকটিম ওই কিশোরী ও তার মা জেসমিন আক্তারের উপস্থিতিতে বাবা মোঃ জামাল হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে জানান, মোঃ হাসান তার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা করে। তিনি কুমিল্লা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে তা তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি মামলা না তুলায় তাদের উপর এই নির্যাতন করা হয়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের পারিবারিক বিরোধ মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। মিমাংসা করতে পারেননি। ওই মামলার বাদী-বিবাদী আপন চাচাতো ভাই বোন। ওদের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল।

স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের চেষ্টায় তাদের পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়। সত্যটা পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসবে। তবে গত ২০ আগস্ট মোঃ জামাল হোসেনের স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যদের উপর যে বর্বরোচিত হামলা করেছে তা অত্যন্ত দুঃখ জনক বলেও মন্তব্য করেন তারা।

অভিযুক্ত মোঃ হাসান জানান, আদালতে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলার ঘটনাটি ছিল মিথ্যা সাজানো। জামাল চাচার সাথে আমাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ওরা এ মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাদের দুর্বল করতে চেয়েছিল। মিথ্যা মামলা তুলে না নেয়ায় রাগের মাথায় চাচির উপর হামলা করেছি।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ৯টায় জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়েছি। ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাবা মোঃ জামাল হোসেন দেবীদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। দোষীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হবে। এঘটনার পূর্বে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটিরও তদন্ত চলছে।

এদিকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) জানন, তিনি এ বিষয়টি জেনেছেন। দেবিদ্বার থানাকে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনা যাইহোক না কেন, তা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তবে, এভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে কারো উপর নির্যাতন করাটা অপরাধ।

এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।