হাজীগঞ্জ ডাকাতিয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ ৪ বছরে অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি

জহিরুল ইসলাম জয়:

হাজীগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতিক্ষিত সেতুর নির্মাণ কাজ গত ৪ বছরে অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি।

২০১৯ সালের জুলাই মাসের ২০ তারিখে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ সম্পন্ন না হওয়া স্থানীয়দের মধ্যে এক প্রকার আশংঙ্কা বিরাজ করছে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ ভূমি অধিগ্রহন জটিলতায় নির্ধারিত সময়ের বাহিরেও নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছেনা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হাজীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি মানুষের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে এবং তাদের স্বাক্ষর নিয়ে উল্লেখিত সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি অনুমোদন ও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ২০১৭ সালের ১৪ মে ২৬৭ মিটার ব্রীজের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করা হয়। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ১৪ টাকা।

এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা-আরবিএল জেভী কাজ শুরু করলে শুরু হয় নানান জটিলতা। প্রথমে বড়কুল ইউনিয়নের বড়কুল গ্রামের ভূমির মালিক পরবর্তীতে পৌর এলাকার টোরাগড় গ্রামের ভূমির মালিকগন নির্মাণ কাজে বাঁধা প্রদান করেন। এমনকি তারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত প্রকৌশলী (সাইট ইনচার্জ) আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল-আলম লিপনসহ স্থানীয় রাজনীতিবীদগন জমির মালিকদের নিয়ে বিষয়টির সুরাহা করার পর কাজ শুরু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত জমির মালিকগনা তাদের পাওনা বুঝে পায়নি।

সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন টোরাগড় এবং বড়কল পূর্ব ইউনিয়ন সংযোগ ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত টোরাগড়-বড়কুল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরো ১ বছর সময় চেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ব্রীজের দুই পাশের ভূমির মালিকদের মামলা, নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়া জটিলতায় প্রকল্পের ওয়াক ওয়ার্ডারের ছয় মাস পর কাজ শুরু করে তারা। কাজ শুরুর পর বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্মাণ কাজ আরো চার মাস পিছিয়ে পড়ে। মাঝপথে থেমে থেমে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নদীর বাইরের পিলার নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলেও নদীর অংশে পিলার নির্মাণ এখনো শুরুই হয়নি। বর্ষা শেষ এবং নদীর পানি কমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে পিলারের উপর গার্ডার নির্মাণ কাজ করবে বলে জানান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট ইনচার্জ।

পৌর এলাকার ভূমির মালিকদের মধ্যে আব্দুর রব, মেন্দু মিয়া, শহীদ উল্যাহ ফকির ও মো. মোস্তফা জানান, তাদের বসতবাড়ীসহ গুরুত্বপূর্ণ জমি সেতুর সড়কে পড়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ না দিলে পথে বসতে হবে। তাই তারা ক্ষতিপূরণ দাবী করেছেন। ক্ষতিপূরণ পেলে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না।

এ দিকে নির্ধারিত সময়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নদীর দক্ষিণ পাড়ের সাধারন মানুষ দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়া তারা দু:শ্চিন্তায় রয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভূমির মালিকদের সাথে বিষয়টির সুরাহা করে আগামি ১ বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার জোর দাবী জানান তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুরুজ মিয়া জানান, ডাকাতিয়া নদীর এ স্থানে খেয়াঘাট আছে। উপজেলা সদরে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ন কাজের জন্য বড়কুল, সর্বতআরা, মৈশামূড়া, গর্ন্ধব্যপুর দক্ষিন, গর্ন্ধব্যপুর উত্তর ইউনিয়নসহ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের মানুষ খুবই দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসা নিতে আসা গর্ভবতী মা এবং গুরুতর অসুস্থ রোগিদের বিড়ম্বনার ছিলো সবচাইতে বেশী। ব্রীজটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতসহ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান আরো বাড়বে। তাই ব্রীজটি দ্রুত নির্মাণের দাবী জানাচ্ছি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা-আরবিএল জেভী’র প্রকৌশলী (সাইট ইনচার্জ) আব্দুল আউয়াল জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সেতু নির্মানের জন্য নিস্কন্টক জমি চায়। নির্মাণ কাজ শুরু করলে প্রথমে ভূমি অধিগ্রহন জটিলতা এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরানোর ফলে ওয়াক ওয়ার্ডারের ৬ মাস পর কাজ শুরু করি। তারপর বর্ষা মৌসুম হওয়ার কারণে ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পায়, এতে করে কাজ বন্ধ থাকে। যে কয়মাস সময় পেয়েছি তাতে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দুই পাশের সড়কসহ বাকী কাজ সম্পন্ন করার জন্য আরো ১ বছর সময় লাগবে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও ভূমি অধিগ্রহণ না হলে এবং ভূমির মালিকরা বাঁধা দিলে তাও করা সম্ভব হবে না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভূমি অধিগ্রহনের জটিলতা খুব শীঘ্রই শেষ হবে। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য মৌজা মূল্যের ৩ গুন অতিরিক্ত টাকা দেয়া হবে। আর এ জন্য ১২ কোটি টাকার অনুমোদন পেয়েছি। ব্রীজের মাঝখানের অংশে কাজ শুরু হয়েছে। এ্যাপোস সড়কের জন্য নির্মানাধীন কাজ দক্ষিন পাড়ের অংশ শুরু হয়েছে এবং উত্তর পাড়ের কাজ শুরু হবে। আশা করি আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়ে উঠবে।