চাঁদপুরে কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি :  চক্রের ৩ সদস্য আটক

কবির হোসেন মিজি :

চাঁদপুরে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করার পর গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। অবশেষে ৩ দিন পর ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেছে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ।

চাঁদপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি ও মানবপাচার কারীর ৩ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। ৩১ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর মডেল থানার এস আই রাশেদুজ্জামান তাদেরকে আটক করেন।

আটককৃতরা হলো চাঁদপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার মৃত কাদির মাঝীর মেয়ে সোহাগী বেগম (২৬), তার বড় বোন হীরা বেগম (৩৫) ও সোহাগীর স্বামী এবং একই এলাকার আমির হোসেনের পুত্র আনোয়ার হোসেন (৩২)।
এদের মধ্যে হিরা বেগমকে মামলার আসামী না করার কারনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।

ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই কিশোরী মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশি পাহাড়ায় চিকিৎসার জন্য তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।

রঘুনাথপুর আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার মৃত চান মিয়া হাওলাদারের স্ত্রী বিধবা বিউটি বেগম জানায়, ২৮ আগস্ট শনিবার সকালে তার ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে তিনি পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাসন করেন। এতে তার মেয়ে মায়ের সাথে অভিমান করলে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একই এলাকার মৃত কাদির মাঝির মেয়ে সোহাগী বেগম ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেন, তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের অজান্তে লঞ্চে করে তাকে ঢাকায় নিয়ে একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেন। এদিকে তাকে ঢাকায় লঞ্চযোগে ঢাকায় নেওয়ার পথে একই এলাকার আলী হোসেন নামে এক যুবক তাদেরকে লঞ্চে দেখতে পান। পরবর্তীতে বিষয়টি আলী হোসেন ওই কিশোরীর পরিবার কে জানালে তারা সোহাগী বেগম কে মেয়ের খোঁজের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু সোহাগী বেগম বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করায় ভুক্তভোগী বিউটি বেগম গত ৩০ আগস্ট সোমবার চাঁদপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে থানার এস আই রাশেদুজ্জামান ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে আসামীদেরকে আটক করেন।

কিশোরী জানায় আটককৃত আসামি সোহাগী বেগম তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে যান। তারপর সেখানে আসামী আনোয়ার হোসেন তাকে একটি প্রাইভেটকারে দর্শন করার পর তাদের চক্রের অন্য পাঁচজন সদস্যদের হাতে তুলে দেন। আর ওই পাঁচজন সদস্য তাকে নির্জনে নিয়ে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেন বলে কিশোরীর জানান।

পরে ১ সেপ্টেম্বর বুধবার কিশোরীর মাতা বিউটি বেগম বাদী হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১(৯) ২১। আটককৃত আনোয়ার হোসেন ও সোহাগী বেগম কে বুধবার দুপুরে চাঁদপুর মডেল থানা থেকে আদালতে হাজির করার পর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে ছাত্র মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে।

চাঁদপুর মডেল থানার এস আই রাশেদুজ্জামান জানান, ভিকটিমের মাতা গত সোমবার তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়েছে বলে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা সে অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে আসামীদেরকে আটক করেছি। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করার পর বুধবার দুপুরে আমরা তাদেরকে থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করেছি। বর্তমানে ওই কিশোরী পুলিশি পাহারায় চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে এবং মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়া জানান, ভিকটিমের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ২ জন আসামিকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ভিকটিম পুলিশ হেফাজতে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।