চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যে কোণঠাসা রোগীরা

একই অভিযোগ প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে-ও

টিকিটের পেছনে কমিশনের জন্য নিজ সাক্ষর সিল:
চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা না করালে রির্পোট দেখতে নারাজ: রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার : বাধ্য হয়ে পুনরায় পছন্দের ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা রোগীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদক :

চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যে কোণঠাসা হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের বাহিরে থাকা প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা করাতে গিয়ে চিকিৎসকদের এমন কমিশন বাণিজ্য থেকে রেহাই পাচ্ছেনা কোনও রোগী। ধনী কিংবা গরিব হোক তাতেও কোনও ছাড়া নেই।

প্রত্যেক রোগীদের পরীক্ষা লিখে দেয়া প্রেসক্রিপশনে (টিকিটে) কমিশনের জন্য চিকিৎসকদের নিজস্ব সিল সাক্ষর দেয়া থাকে। আর সেই সাক্ষর এবং নিজস্ব সিল দেয়ার অর্থই হচ্ছে বাহিরের যেসব প্রাইভেট ডায়াগনস্টিগকে পরীক্ষা করাবে সেই ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ ওই চিকিৎসকের জন্য আলাদা ভাবে কমিশন রেখে দিবে। বিগত বছর গুলোতে এভাবেই নিরবে চলে আসছে কিছু ভদ্রবেশি চিকিৎসকদের টিকিট কমিশন বানিজ্য। শুধু সরকারি হাসপাতালেই নয়। এমন টিকেট কিংবা প্রেশক্রিপশন বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে চাঁদপুরের বেশ কিছু প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও।

গত কয়েক মাস ধরে অনুসন্ধ্যান করে দেখা গেছে, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের একাধিক মেডিকেল অফিসার এবং আউটডোরের চিকিৎসকরা টিকিটের গায়ে নিজস্ব সিল সাক্ষর দিয়ে নিয়মিত কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাহেদ আহমেদ, ডাঃ বেনজীর আহমেদ, ডাঃ মোঃ ফরহাদুল করিম, ডাঃ নুর হোসাইন বান্না, ডাঃ রায়হান মোঃ ওমর ফারুক রূপক, ডাঃ সৈয়দ আহমেদ কাজল, গাইনী চিকিৎসক ডাঃ শামসুন্নাহার তানিয়া,বিউটি রানী সরকার সহ হাসপাতালের আরো বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। অনুসন্ধ্যান করে দেখা গেছে উল্লেখ্যিত এসব চিকিৎসকরা তাদের ডিউটি করার সময় যে সকল রোগী বিভিন্ন সমস্যা জনিত কারনে তাদের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তখন তারা রোগীর রোগ নির্নয় করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করতে দেন। ওই সময় তারা টিকিটের পেছনের অংশে তাদের নিজস্ব সিল সাক্ষর দিয়ে রোগীকে পরীক্ষা করতে তাদের পছন্দের নির্দিষ্ট প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক গুলোতে পাঠান। অসহায় রোগীরা একজন চিকিৎসককে দেবতা ভেবে এমন নিরব প্রতারণার কিছুই বুঝতে পারেননি।

চিকিৎসকদের কমিশনের জন্য দেখা গেছে, একজন রোগী যেখানে ৫,শ টাকায় যে পরীক্ষাটি করানোর কথা। সেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো ও চিকিৎসকদের কমিশন রাখতে নিরুপায় হয়েই রোগীদের কাছ থেকে নিদ্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে কিছুটা মুল্য বাড়িয়ে রাখছেন। এতে করে আর্থিক সংকট এবং চিকিৎসকদের কাছে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

চিকিৎসকদের এমন নিরব কমিশন বানিজ্যের প্রমান মিলে তখনই। যখন কোন চতুর রোগীর লোকজন তাদের পছন্দের নির্দ্দিষ্ট ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা না করিয়ে অল্প খরছে অন্যত্র পরীক্ষা করিয়ে সে রির্পোট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। কারন চিকিৎসক যখন দেখেন রোগ পরীক্ষার রির্পোটার খামে যখন অন্য ডায়াগনস্টিকের নাম লেখা। তখনই রোগীদের সাথে খারাপ আচরন করে শুরু করেন। কেনো পরীক্ষার রির্পোট নিয়ে এত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, রোগীদের সাথে এত খারাপ আচরণ…? পরবর্তীতে জানা যায় চিকিৎসকদের দেয়া নিদ্দিষ্ট ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা না করানোর জন্য রোগীদের সাথে এমন আচরনের মুল কারন।

উল্লেখ্যিত এসব চিকিৎসকরা সহ আউটঢোরের আরো বেশ ক,জন চিকিৎসকরা প্রায়ই রোগীদের সাথে এমন খারাপ আচরনের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক বছরে যার অভিযোগও রয়েছে ব্যাপক।

শুধু চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালই নয়। এর বাহিরেও চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও এমন কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। মাস খানেক পূর্বে চাঁদপুরের পুরান বাজার এলকার রাজীব দাস নামে এক ব্যক্তি জানান, তার একজন আত্মীয়কে শহরের রেইনবো হাসপাতালে ডাঃ সিরাজুম মনিরকে দেখান। তিনি কিছু পরীক্ষা দিলে ভুক্তভোগী রাজিব দাস বাহিরে থেকে তার পছন্দের নিজস্ব একটি ডায়াগনস্টিক থেকে পরীক্ষা করিয়ে রির্পোট দেখাতে ডাঃ সিরাজুম মনিরের কাছে গেলে তিনি কোন ভাবেই সে রির্পোট দেখতে রাজি হননি। একই ভাবে বিভিন্ন হাসপাতাল গুলোতে এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে রোগীরা।

এমন সুবিদাভোগী, মুনাফা লোভী, অসাধু চিকিৎসকদের হাত থেকে রেহাই পেতে চাঁদপুর স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা হয়না। তাই কিছু কিছু পরীক্ষা বাইরের থেকে করতে হয়। সেক্ষেত্রে হয়তো ডাক্তাররা নিজস্ব স্বাক্ষর সিল ব্যবহার করে থাকেন। তারপরও যদি কেউ এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে নিজস্ব নীতি-নৈতিকতার বিষয়। বিষয়টি যেহেতু জেনেছি আমি এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করবো। এছাড়াও যদি কোনো রোগী এরকম বিষয় নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।