মনপুরা নৌ-অ্যাম্বুলেন্স পরিত্যক্ত অবস্থায়, জেলেদের জাল ও মাছ শিকার কাজে ব্যবহার

রাকিবুল হাসান, মনপুরা প্রতিনিধি :

ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা জনগণের মাঝে দ্রুত পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতালে যুক্ত হয়েছেন নৌ এ্যাম্বুলেন্স। মুমূর্যূ রোগীদের উন্নত সেবার ব্যবস্থাসহ গর্ভবতী মহিলাদের দ্রুত জেলা সদরে স্থানান্তর ও উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে নৌ এ্যাম্বুলেন্স।

উপজেলাবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি বিচ্ছিন্ন ঘাটে পরে আছে।নৌ-অ্যাম্বুলেন্স টি প্রতি নেই মনপুরা হাসপাতালে কোন নজরদারী।এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রের সম্পদ। জেলেদের মাছ শিকারের কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই নৌ অ্যাম্বুলেন্স।

মনপুরা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। জেলা সদরের সঙ্গে এ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। প্রায় দেড় লক্ষাধিক জনবসতি জন্য একমাত্র চিকিৎসা সেবা নেওয়ার স্থান ৫০ শয্যা এই হসপিটাল।অধ্যুষিত এ উপজেলা সঙ্গে যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম হল নৌ-পথ। কোন সড়কপথ না থাকায় বাধ্য হয়ে নৌ-পথে ভোলা জেলা কিংবা পাশের উপজেলা যেতে হয়।তাছাড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এ উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগে দ্রুত চলাচলের জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে। উপকূলের দূরবর্তী মানুষের জন্য শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসেবে অ্যাম্বুলেন্সটি পাওয়ার প্রায় তিন বছর পার হতে না হতে পরিত্যক্ত অবস্থানে পরে আছে।মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর একমাত্র নৌ এম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে হাজিরহাট চরগেয়ান গ্রামের পুরাতন থানার সংলগ্ন এলাকায় জেলেদের জাল বোঝাই অবস্থা পরে থাকতে দেখা যায়।

এখনই এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

তবে এই নৌ অ্যাম্বুলেন্স মনপুরা আসার পর থেকে কোন কাজে আসেনি। এটি বেশির ভাগ সময় অযত্ন অবহেলা পরে আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপকূলের দূরবর্তী এলাকার মানুষের জরুরি প্রয়োজনে জরুরী রোগী আনা-নেওয়ার কাজের জন্য এটি উপহার দেন।অ্যাম্বুলেন্স নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫ শত টাকা। ধারণ ক্ষমতা ১৫ থেকে ২০ জন। গতিবেগ ঘন্টায় ৭ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল। ঘন্টায় ৪ লিটার ডিজেল ব্যয় হবে।দ্বীপ উপজেলা থেকে পাশের উপজেলা তজুুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় আসতে সময় লাগবে আদা ঘন্টা।

মনপুরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স টি চালানোর জন্য কোন ড্রাইভার ও ডিজেল এর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি কর্তৃপক্ষকে।তাই এই অ্যাম্বুলেন্সটি দক্ষ ড্রাইভার না থাকা এবং হাসপাতালের কোন বাজেট না থাকা এটি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যায় না।এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন জনবল নিয়োগ করা হয় নি। তাই এটি নিয়ে বেকায়দা পরতে হচ্ছে তাদের কে।

সাম্প্রতিক মনপুরা থেকে স্পিডবোটে যাওয়ার সময় পাশের উপজেলা চরফ্যাশন বেথুয়া ঘাটে এক প্রসৃতি মায়ের সন্তান প্রসবের ঘটনায় নৌ অ্যাম্বুলেন্সের কথা আলোচনা আসে।গত (২৫ মে) রাত ১১টায় মনপুরা হাসপাতাল থেকে মুক্তা নামে এক প্রসৃতি মাকে রেফার করা হয় পাশের উপজেলা চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রাত অনেক বেশি হওয়া খুব বেক পেতে হচ্ছে প্রসূতি মুক্তার পরিবারের।এই দিকে প্রসব বেদনা কাতরাচ্ছে মুক্তা বেগম। রাত অনেক হওয়া মেঘনা নদী পারি দিতে চাচ্ছেনা কোন স্পিড বোট মালিক। বহুত কষ্টের পর সালাউদ্দিন নামে এক স্পিড বোট মালিকে মেনেজ করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিলে বেথুয়া নাম স্থানে গেলে নদীর পাড়ে সন্তান প্রসব করেন মা মুক্তা বেগম। তবে সেখানে কাকতাড়ুয়া ভাবে চরফ্যাশন এর তিন চিকিৎসক ঘাটে উপস্থিত থাকায় বড় দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে মা মুক্তা বেগম।

এতে অনেকে মনে করেন,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নৌ অ্যাম্বুলেন্স যদি চালু থাকতো সাথে সাথে রোগীদের কে নিদিষ্ট সময় পৌঁছাতে পারতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জেলে জানান, দীর্ঘদিন এটি এখানে পরে আছে অযত্ন অবহেলা। তাই অনেকে জাল ও মাছ শিকারের বিভিন্ন মালামাল এখানে রাখা হয়।হাসপাতাল যদি নিয়ে যায় তা হলে ভালো হত।

মনপুরা প্রেসক্লাবে সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, মনপুরা নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকায় সত্যও এটি অকেজো থাকায় এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা চরম শিকার।তাদের এই অবহেলার কারণে অনেক প্রসৃতি মায়ের অকাল মৃত্যু ও কষ্ট বহন করতে হতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এটি সচল করে মনপুরার বাসির জন্য ব্যবহার উপযোগী করা হোক।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৈয়বুর রহমান বলেন, চালক না দেয়ার কারণে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো সম্ভব না, এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যদি এটি কে কোন নিদিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে বলেন সেখানে রাখার ব্যবস্থা করবো। তা না হলে খোলা আকাশের নিচে রাখতে হবে।