চাঁদপুর সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির ক্ষোভ

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী :

গত ১ অক্টোবর শনিবার বিকেলে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হাসপাতালের ৩য় তলার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি’র সভাপতিত্বে ও উক্ত হাসপাতালের তও্বাবাধয়ক ডাঃ মাহবুবুর রহমান পরিচানায় সভার শুরুতে হাসপাতালের সার্বিক বিষয় নিয়ে শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সেবার মান উন্নত হয়েছে। আমাদের প্রয়োজনীয় অনেক সরঞ্জামাদির সংকট রয়েছে। গণপূর্ত অধিদফতরের অধীনে হাসপাতালের সংস্কার কাজ চলছে খুব সহসাই শেষ হবে। তিনি হাসপাতালের আসা সেবা প্রার্থীদের জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাম মেশিন সহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জরুরি প্রয়োজন। তাছাড়া আইসিও চালু হলেও নেই জনবল নেই।

তিনি আরো বলেন, হাসাপাতালে এখন প্রতিদিন ৪০০ রোগী প্রতিনিয়ত থাকছে। তাই সভাপতি কে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট সমস্যাটি মেটানোর আহবান জানান। তিনি বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সভার সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনার ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল কে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে, এজন্য তিনি এ বিষয় প্রতিকার চান।

এরপর পর পরই হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় কর্মরত এস আই বিল্লালের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির ব্যাখ্যার চান।

এ বিষয়ে প্রথমে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নিকট ঐ রাতের ঘটনা শুনতে চান। এসময় পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, চাঁদপুর সদর মডেল থানায় কর্মরত এস আই বিল্লাল অসুস্থতার কারনে এই হাসপাতালে রাত পৌনে ৯ টায় ভর্তি হওয়ার পর বেশ কটি পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। কিন্তু এর ফাঁকে তাঁর শারিরীক অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে। এ ঘটনা শুনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় হাসপাতালে চলে আসেন এবং একের পর এক হাসপাতালের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কারো কাছ থেকে নুন্যতম কোনো মানবিকতা বা সহযোগিতা পাননি। এক পর্যায়ে এই হাসপাতালে একজন ডিউটি ডাক্তার সব কিছু জেনে শুনেও একজন কনসালটেন্টের সাথে পরামর্শ করেননি।

তিনি অত্যান্ত আক্ষেপ করে বলেন একজন সরকারি কর্মচারী বা পুলিশের একজন এস আই মূমুর্ষ অবস্থায় রাত পৌনে ৯ টায় ভর্তি হয়ে পৌনে ১ টায় মৃত্যু বরন করেন। জেলা পুলিশের একজন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিজে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি। শুধু তাই নয়, আমার এই কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর শুনে আমি যে পোশাক শরীরে ছিলো সেই পোশাক পড়ে হাসপাতালে তাৎক্ষণিকভাবে চলে আসি, এরপর ১ ঘন্টা অবস্থান করার পরও কতৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা কে খুঁজে পাইনি।

এরপর এ সকল বিষয় গুলো শুনে সভার সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমি শুনে আশ্চর্য হলাম কোনো রোগীর গুরুতর অসুস্থ হলে একজন সিনিয়র কনসালটেন্টের পরামর্শে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কোনো কনসালটেন্টদের ডিউটি রোস্টার বা অনকলে পরামর্শ করার ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, এই হাসপাতালে একটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল একই বিল্ডিংয়ে অথচ সমন্বয়ের মাধ্যমে সেবা প্রার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এটি কেনো? এ বিষয়টি লজ্জা জনক ও দূঃখ জনক। এই সমন্বয়ের ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজেরও দায়িত্ব বোধ রয়েছে, তেমনি হাসপাতালের ও রয়েছে। আপনারা এই দুপক্ষের দায়িত্ব বোধ টুকুর অবস্থা দেখে আমি হতাশ।

তিনি বলেন, জেলার একজন সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তা বা পুলিশ সুপার তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তার চিকিৎসা সেবার জন্য যোগাযোগ করেও কাউকে পায়নি। অথবা দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা কেনো?

হাসপাতালের চিকিৎসার মান বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন একের পর এক করে যাচ্ছি অথচ আপনারা দায়িত্ব অবহেলা করছেন, এটা কেনো?
তিনি বলেন, এ সকল নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জেলার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, অতএব আগামী দিন থেকে একজন সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে কোনো কারো কাছ থেকে যেনো আর কোনো অভিযোগ শুনতে না পাই।
তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট বলেন, আমি একজন চিকিৎসক হয়ে আপনাদের অনেক বিষয় আমি সাধারণ ভাবে মেনে নিয়েছি আর একটি বিষয় ও মেনে নিবো না।

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কারা কারা আছেন, কারা ১০ টায় এসে ১২ টায় চলে যান, কারা দায়িত্ব পালন করেন না। তাদের তালিকা চাই।


তিনি বলেন, সরকার আপনাদের বেতন দিচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য অথচ আপনারা এখানে নেতাঘিরি করবেন তা চলবে না।

তিনি বলেন, দেশের মেধাবী সন্তানরা চিকিৎসক হয়। এদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা অথচ আমি ডাক্তার হিসেবে বলতে লজ্জা লাগে আমরা চিকিৎসকরা মনে হয় আত্ন মর্যাদাবোধ হারিয়ে ফেলেছি।

তিনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পুলিশ সদস্য এস আই বিল্লালের মৃত্যুর বিষয় কাদের গাফিলতি রয়েছে এবং কাদের দায়িত্ব অবহেলা ছিলো এ বিষয় সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলেন। তিনি হাসপাতালে প্রতি মুহূর্তে রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য শুধু মেডিকেল অফিসার নয়, সার্বিকভাবে এবং সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য কনসালটেন্টদের তালিকা বা রোস্টার এবং অন কল চালু করার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, সকল ডাক্তাদের নাম এবং মোবাইল নাম্বার যা হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেগুলো তালিকা করে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান , সিভিল সার্জন, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহারসহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগন।

উল্লেখ্য উক্ত সভায় উপস্থিত সকল গণমাধ্যম কর্মীদের সভা থেকে বের করে হলরুমে দরজা জানালা বন্ধ করে সভাটি করা হয়।