পঞ্চগড়ে পুলিশ-মুসল্লি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত শতাধিক

এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতকে (কাদিয়ানি) নিষিদ্ধ ও তাদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।

তিনি বলেন, মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজন সাধারণ ও আরেকজন কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের। প্রশাসনের অনুরোধে আহমদিয়া সম্প্রদায় নেতারা তাদের সালানা জলসা স্থগিত করেছেন। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা রয়েছে।

ন্যাশনাল বার্ষিক সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমেদ তফসের চৌধুরী বলেন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের আমাদের জলসা স্থগিতের নির্দেশনা দিয়েছে। আইন ও প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা জলসা স্থগিত করেছি।

গত শুক্রবার (৩ মার্চ) জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা পঞ্চগড় শহরে মিছিল বের করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরিফুর রহমান (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তিনি মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে। অপর দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান (২২) নামের যুবক মারা গেছেন। তিনি নাটোর জেলার বনপাড়ার বাসিন্দা।

শুক্রবার জুমার নামাযের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শহরে দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় বিজিবি ও র‌্যাব। বিকেলে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের আহম্মদনগর জামাত এলাকার বাড়িগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। এ সময় ২০ থেকে ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সংঘর্ষের সময় প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কে সকল ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ থাকে শহরের সকল দোকানপাট। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষেরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়েছেন পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহফুজুল হক। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ৫ প্লাটুন পরে আরো ৫ প্লাটুন বাড়িয়ে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাতে প্রচার মাইকিং করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) একই দাবিতে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। বিকেল ৩টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমঝোতার আশ্বাস দেন। পরে মুসল্লিরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।