পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ, ৭ দিনে ১৩ মামলায় ১৬৫ জন গ্রেফতার প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার

এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি :

পঞ্চগড়ের আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৭ দিনে ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ১৬৫ জনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানালেন পুলিশ সুপার (এসিপি) এস এম সিরাজুল হুদা।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান এ পর্যন্ত ১৬৫ জনকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা প্রায় ১১ হাজার জনকে আসামি করে পঞ্চগড় সদর থানায় ১১টি ও বোদা থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পঞ্চগড় পুলিশ সুপার (এসিপি) এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতায় অংশগ্রহণকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোনো সাধারণ নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, জড়িত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

এর আগে গত শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ায় শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশকে লক্ষ করে মুসল্লিরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ঘটনায় দুইজনের প্রাণহানি ঘটে।

সংঘর্ষের সময় বিক্ষোভকারী জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় চালায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগসহ জেলা শহরের আহমদিয়াদের চারটি দোকানে আগুন ও বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা পঞ্চগড়। সেদিন রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

৪ মার্চ শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পঞ্চগড় শহর। গুজব ছড়িয়ে পড়ে ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) লোকজন দুজনকে গলাকেটে হত্যা করেছে। এমন গুজবে বিক্ষুব্ধ হয়ে কিছু মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাটসহ শহরের ট্রাক-টার্মিনালে একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় তারা।

গত শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ঘ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় উভয়পক্ষের দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় শনিবার (৪ মার্চ) থেকে পৃথকভাবে পঞ্চগড় সদর থানায় ১১টি ও বোদা থানায় দুটি মোট ১৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।