স্বরূপকাঠিতে গ্রাহকের দুই কোটি টাকা নিয়ে সমবায় সমিতি লাপাত্তা

স্বরূপকাঠি প্রতিনিধি

“সুন্দর জীবনের জন্য সঞ্চয়, আজকের সঞ্চয় আগামী দিনের জন্য ভবিষ্যৎ” এমন মনোহরি শ্লোগানে এক লাখ টাকায় মাসে লাভ দেয়া হবে ১ হাজার ৫শত টাকা। এমনই প্রলভনে পড়ে নেছারাবাদ উপজেলার সমেদয়কাঠি ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ গরু,ছাগল,জমি বিক্রি করে টাকা রেখেছিলেন সমেদয়কাঠি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি সমবায় সমিতিতে। এভাবে আমানত সংগ্রহ করে সমিতির পরিচালক টুটুল শীল গ্রাহকের প্রায় ২কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। টুটুল শীল সমেদয়কাঠি গ্রামের গৌতম শীলের ছেলে।

জানাগেছে, টুটুল ইউনিয়নের সমেদয়কাঠি বাজারে ভাড়া বাসায় ‘সমুদয়কাঠি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে অফিস খুলেন। সেখানে দৈনিক,সাপ্তাহিক,মাসিক এবং এককালিন আমানত জমা রাখত। এভাবে আমানত সংগ্রহ করে ওই এলাকার মানুষের প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়ে পরিবার সহ উধাও টুটুল শীল। প্রতিষ্ঠানটিতে ঋণ কার্যক্রম চললেও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির কোন অনুমোদন ছিল ন। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার সহায়তায়, জেলা সমবায় দফতর থেকে সনদ নিয়ে নিয়ম না মেনে তিনি এ কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন কয়েক বছর। অথচ, এগুলো দেখার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ছিল নির্বিকার।

স্থানীয়রা জানান, সমেদয়কাঠি বাজারে সমবায় সমিতির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সমিতি পরিচালনা করে আসছিলেন টুটুল শীল। সেখানে সমবায় সমিতির নামে ব্যাংকিং স্টাইলে সমিতি চলে তার। গ্রাহদের আমানতে ছয় বছরে দ্বিগুন, এককালিন স্থায়ী আমানতে লাখে মাসিক মুনাফা একহাজার পাচশত টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। গ্রামের কিছু শিক্ষিত বেকার লোকদের কর্মী বানিয়ে দরিদ্রের বাড়ী বাড়ী গিয়ে আমানত সংগ্রহ শুরু করে টুটুল। পাশাপাশি লোক দেখানো কিছু ঋনও বিতরণ শুরু করে। পরে তাদের কাছ থেকে দৈনিক,সাপ্তাহিক,মাসিক এবং এককালিন আমানত সংগ্রহ শুরু করে টুটুল শীল। প্রথমে আমানতকারিদের কিছু কিছু লাভ দেয়া শুরু করলে লোভে পড়ে গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে যায় তার। এভাবে সে দুই কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে এলাকা থেকে লাপাত্তা হয়েছেন দুই মাস ধরে।

স্থানীয় মহাদেব নামে এক ভুক্তভোগী গরীব দিনমজুর অভিযোগ করেন, তিনি কস্ট করে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় করে ছিলেন। সেই টাকা তার সমবায় সমিতিতে এককালিন জমা রাখেন ভবিৎষত নিরাপত্তার আশায়। সেই টাকায় প্রথমে সে কিছু কিছু মাসিক লাভ দিত আমাকে। এতে তার প্রতি বিশ্বাস হয় আমার। পরে মানুষের বাড়ি বাড়ি কৃষান খেটে টুটুলের সমিতিতে আরো দৈনিক জমায় ৩৭ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছি। এখন তিনি সব টাকা নিয়ে লাপাত্তা।

একই গ্রামের বাদল হালদার নামে অপর এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, এলাকায় ছোটখাটো কাজ করে দেড় লক্ষ টাকা জমিয়েছিলাম। কিছু লাভের আশায় সেই টাকা টুটুল শীলের সমবায় সমিতিতে রেখেছিলাম। এখন লাভতো দূরের কথা।কার কাছে গেলে আসল টাকা পাব। আমার এখন মরন ছাড়া উপায় নেই।

খোকন হালদার নামে অপর এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে, আমি জমি বিক্রি করে তার সমিতিতে ৫ লক্ষ টাকা রেখেছিলাম। আমাকে সামন্য কিছু লাভ দিয়ে এখন আসল টাকা নিয়ে উদাও সে। আমার কি হবে। পরিবার নিয়ে কিভাবে বেচে থাকব।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য টুটুল শীলের দেখা না পেয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭৩৬-৪৭৫২৯২ নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমন আইচ সরকার বলেন, আমাদের এলাকায় দু’টি সমবায় সমিতি রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে রূপান্তরিত হয়েছিল। রিপন বড়াল নামে এক ব্যক্তির সমবায় সমিতি ইতোমধ্য শেষ। মানুষ আমানতের টাকা ফিরে পেতে নানান জায়গায় ঘুরছে। অপরদিকে আমার এলাকার গরীব লোকেরা টুটুল শীলের হায় হায় সমিতিতে দ্বিগুন লাভের আশায় আমানত রেখে ছিলেন। টুটুল দুইশতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা আমানত নিয়ে সে এখন পরিবার নিয়ে লাপাত্তা। প্রতিদিন মানুষ আমার কাছে আসছে। আমি কি করব।

নেছারাবাদ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো: কামরুল হাসান জানান, ” কাউকে সমবায় লাইসেন্স দিলে তার যোগ্যতা দেখে দেয়া হয়। লাইসেন্স দিয়ে মাঝেমধ্য মনিটারিং করে থাকি। গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হলে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।