নিরালোকে দিব্যলোক

যুবক অনার্য :

রাত কতো হলো বুঝতে পারছি না।কখন ঘুমিয়েছিলাম মনে নেই তবে এখনও রাত্রি জেগে আছে- অন্ধকার তা টের পাইয়ে দেয়।
লুনিক!লুনিক!
লুনিক আসছে না।আসবেও না কারণ লুনিক বলে কেউ নেই।যদি থেকেও থাকে- সে আমার অসম্পুর্ণ ভাবনায়।যে এই লুনিক তাকেই বলছি – জানো লুনিক আজ অনেক দিন পর, মনে হয় শতবর্ষ পর, মনে হলো গদ্য লিখি।কবিতার বাইরে আর কিছু তো কখনোই ছিলো না ইচ্ছে -লিখবার।আজ কেনো যে মনে হলো! বলা ভালো – ইচ্ছে হলো- হয়তোবা তাই।

পুনরায় উল্লেখযোগ্য ভাবে আরো একজন খুন হলো।এইভাবে আরো কতোজন হবে, হতেই থাকবে হয়তোবা।যেন না হয় সে উদ্দেশে সক্রেটিস মার্ক্স ম্যান্ডেলা আরও কতোশত মহাপ্রাণ কতো কিছু চেষ্টা তদবির চালিয়ে গেছেন।এখনো চলছে।পাশাপাশি খুনিও থেমে নেই।তবে অধিকাংশ খুনিই কিন্তু খুন করেননা,খুন করানো হয়।
প্রিয় লুনিক আমি তবে লিখতে পারি গদ্য- সদ্য প্রকাশিত
-খুন নিয়ে
-খুনিকে নিয়ে
-যিনি খুন হলেন তাকে নিয়ে
-যারা খুন করালেন তাদেরকে নিয়ে
জানি,তুমি বলবে: সমস্যা কি, লিখে ফেলো
-সমস্যা আছে- যারা খুন করালো তারা আমাকেও খুন করে ফেলবে নিশ্চিত
:এতো ভয় পেলে কি লেখক হওয়া যায়!
-তা বটে।do or die!
:হ্যাঁ ঠিক তো।সবই বুঝো দেখছি। ঠিক তাই।
-তবে উপায় আছে মেটাফোরিক্যালি লিখলে বুঝতে পারবে না।তবে দু’চারজন অবশ্য বুঝে যাবেই।
আচ্ছা, এক কাজ করি বাবা আজ মান্তুকে নিয়ে এক জায়গায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছেন-
সেই বিষয়েও লেখা যায়,কি বলো?
:জো হুকুম।
-সেই অনুষ্ঠানে যাওয়া নাকি অনেক হ্যাপা।গাড়িঘোড়া চলছে না।দূরের পথ। যেতে হবে ভেঙে ভেঙে।রিক্সা অটো ভেন ঠেলাগাড়ি পায়ে হেঁটে…বহুদূর হে
:ভালোই তো- যতো দূর যতো হ্যাপা গদ্য ততোই স্ট্রং!
-ততোই তো ঝুঁকি
:কীরকম?
-এই ধরো কিসের অনুষ্ঠান।উদ্দেশ্য কী।কাদের অনুষ্ঠান।কোনো বিশেষ দলের কিনা…
:দলাদলি না হলে লেখা জমবে কী করে!
-লেখা হয়তো জমবে কিন্তু ঝুঁকিও ষোলো আনা
:তাহলে লেখা বাদ দাও
-তাই কি হয়! ওরা ডালে ডালে লেখক পাতায় পাতায়
:তবে আর সমস্যা কি- শুরু হয়ে যাক…
লুনিককে আমি আর কি বলবো খুঁজে পাইনা।লুনিক চলে গেলো।
ঠাওর হলো এখন মধ্যযাম।শব্দটা কি ঠাওর নাকি ঠাহর।মনে পড়ছে না।গুগল সার্চ করা যেতে পারে।আমি গুগল সার্চ করি না।গ্লাসের সামনে দাঁড়াই।ভাবি- দর্পণে নিজের দিকে তাকিয়ে- আচ্ছা আমি মরে গেলে কি হবে,আর বেঁচে থেকেই বা কি আসবে যাবে।মা বাবা কষ্ট পাবেন।পূরবীও কষ্ট পাবে- হয়তোবা।তারপর ভুলে যাবে।এই তো।কিন্তু ভাবানাটা অন্য জায়গায়।আমি কিছু একটা গদ্য লিখে গ্রেপ্তার হলাম জেল হলো বা আততায়ীগণ না হয় মেরেই ফেললো- তাতেই কি সমস্যার সমাধান হবে! গল্প কবিতা দিয়ে কি কোনো সমস্যার সমাধান হয়!তাহলে লিখে কি লাভ!সুতরাং প্রশ্ন হতেই পারে- আমি কেনো লিখি কেনো লিখবো দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য নাকি অভ্যাসবশত ইচ্ছেবশত…
শীট! এতো প্রশ্ন কেনো-
এতো প্রশ্ন কেনো!-
আমি চিৎকার করে উঠি-এতো প্রশ্ন কেনো!
লুনিক! লুনিক!
লুনিক আসে না। বস্তুত কেউই আসেনা।

বাবা অনুষ্ঠানে গেছেন।গত দু’বছর তেমন ফলন হয় নি।এবছরও হলো না। সামনে হয়তো একদমই হবে না।বাবা কি গেছেন এজন্য যে ভালো ফলন হবে!
গিয়েছে হাজারে বিজারে লোক।ভালো ফলন হবে চাট্টা ডালভাত হবে।আমিও যেতে চেয়েছিলাম।বাবা নিলেন না।তবে কি আমি মরে গেলে সমস্যা আর মান্তু মরলে সমস্যা নেই!আর গেলেই যে মরে যাবো তাও তো নয়।
ধ্যাৎ! আবারো সেই মরে যাওয়া। মৃত্যুকে এতো ভয় কেনো।শুনেছি মৃত্যু নাকি জীবনের চেয়ে সুন্দর।
সারাদিন কীভাবে এলেবেলে ভাবে কেটে গেলে।বাবা মান্তু আজ ফিরবে না।অনুষ্ঠান শেষ করে আসতে আরও ২/১ দিন লেগে যাবে।আসবার সময়ও গাড়ি নেই।ভেন ঠেলা পায়ে হাঁটা।
সারাদিন আমি একটি প্লট খুঁজছিলাম। যদিও আধুনিক গদ্যে প্লটের কোনো প্রয়োজন নেই।কখনও লিখিনি তাই মনে হলো একটু সহনশীলমাত্রায় শুরু করি।প্রথমেই কাফকা-কে কড়কে দিতে চাইলে ব্রেক ফেইল হবে।কিন্তু প্লট পাচ্ছি না।আচ্ছা প্লটের কী দরকার শুরু করলেই তো শুরু হয়ে যায়।-
আমি শুরু করি – এখান থেকে নদী দেখা যায়…
মুছে ফেলি।এখান থেকে আসলে নদী দেখা যায় না।
তারপর লিখি- এক মুঠো ক্ষুধা নিয়ে বসে আছি যেনো এক মুঠো ষোড়শী আগুন…
মুছে ফেলি।বাক্যটি গদ্য নয়।কবিতা হয়ে যাচ্ছে।
রাতের বেলা রিভোট্রিল পয়েন্ট ফাইভ এমজি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

আজ ওরা ফিরে এসেছে।বাবা, মান্তু।
বাবার মুখে বর্ণনা শুনে আমি লিখে ফেললাম দুই পাতা জুড়ে।বাবা বর্ণনা করেছেন কীভাবে গেলেন কীভাবে এলেন পথে বাধা বিঘ্ন’র নমুনা অনুষ্ঠানে কী আলোচনা হলো।বাবার চোখে স্বপ্ন জ্বল জ্বল করছিলো- ভালো ফলন হবে চাট্টা ডালভাত হবে।
এই যে বাবার চোখ জ্বল জ্বল করছিলো- সেই জ্বল জ্বলের মধ্যেই যেনো সব আছে- গদ্য পদ্য উপন্যাস প্রবন্ধ একটি জাতি একটি সমগ্র দেশ।
তবু আমি কোনো প্লট পেলাম না।
ভাবছি আগামী অনুষ্ঠানে আমি একাই চলে যাবো।
৭ দিন পর আমি রওনা হলাম। জীবনে এই প্রথম আমি এমন কোথাও যাচ্ছি। থ্রিল হচ্ছে।গদ্যটদ্য মাথা থেকে উবে গেছে।গাড়িঘোড়া নেই।ভেন রিক্সা অটো পায়ে হাঁটা।মানুষের ঢল মিছিলের মতো।
আমার কাছে মনে হচ্ছে- চোখে জ্বল জ্বল স্বপ্ন আঁকা এই যে সহস্র মানুষের ঢল- ফলন হবে চাট্টা ডালভাত হবে- আসুক বাধা আসুক বুলেট-
মিছিলদগ্ধ মৃত্যুপিয়াসি জীবনপিয়াসি সহস্র মানুষ – ভুখা নাঙা- এর চেয়ে বিখ্যাত কোনো গদ্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো কবিতা পৃথিবীর কোথাও নেই।
ব্রাকেটে বলে রাখি- আমার একটুও ভয় হচ্ছে না