বিচিত্র ঐতিহ্য মানুষকে জানাতে চান শিরিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রবাদ আছে, ‘যিনি রাধেন তিনি চুলও বাঁধেন’। এ প্রবাদের সাথে অতোপ্রোতে ভাবে জড়িয়ে আছে রাজশাহীর মেয়ে শিরিন আক্তার। নানা বিধি নিষেধ আর প্রতিবন্ধকতার মাঝেও নিজকে পাশ কাটিয়ে কন্টেন্ট বানিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ছুটে বেড়ান গ্রাম-গঞ্জ আর মাঠে প্রান্তরে। কখনও ছুটে যান কর্দমাক্ত প্রান্তরে আবার কখনও সাপখোপ জঙ্গল ঘেরা ভাঙ্গা প্রাসাদেও।উদ্দেশ্য একটাই, হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে তুলে ধরা। আর দর্শকদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়া। খুব অল্প সময় হলো কাজ শুরু করেছেন তিনি। সংসারের নানা রকম কাজ আর বিধি মেনেই তিনি কন্টেন্ট তৈরি করেন। ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছে তার বিচিত্র কন্টেন্ট। শিক্ষামূলক কনটেন্ট বানানোর জন‍্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন যেনো।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে- লাইক, কমেন্ট, ভিউ আর রাতারাতি ভাইরাল হবার নেশায় হাসিতামাশা, অশ্লীলতা বা সাম্প্রতিক ভাইরাল ইস্যু নিয়ে কনটেন্ট বানিয়ে খুব সহজেই এগিয়ে যেতে পারতেন কিন্তু পথটা সহজ নয় জেনেও এমন গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করে যাচ্ছেন শিরিন আখতার। ঘরে বসিয়েই দর্শকদের দেখাচ্ছেন ইতিহাস, ঐতিহ্য আর দর্শনীয় স্থান।

জীবনের এ অধ্যায়ের শুরুটা স্ট্রাগল করে পড়াশোনাটা শেষ করেছেন তিনি। সমস্ত শিক্ষা জীবনে ভালো ফলাফলও ভালো করেছেন। তবে অন্য পাঁচ সাতজনের মতো চাকুরি কিংবা ব্যবসার পিছনে না ছুটে শুরু করেছেন কন্টেন্ট তৈরি করা। তবে শুরুটা বেশ কষ্টকরই ছিলো। ‘বাবার প্রথম স্ট্রোক করার সময় সবেমাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন শিরিন। তার ছোট ভাইটও মাধ‍্যমিক পাশ করে রাজশাহী পলিটেকনিকে ভর্তি হয়। চিকিৎসা নেয়ার সময় এক পর্যায় তার বাবাকে সম্পূর্ণ বেডরেস্টে চলে যেতে হয়। শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। এ যেনো বন্ধুর পথ। কঠিন এক জীবন অতিবাহিত হচ্ছে কালক্রমে।এর মধ্যে শিরিন রাজশাহীর স্বনামধন্য কয়েকটি প্রাইভেট ফার্মে জব করেন, বেশ কয়েকটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। একটা সময় তার বাবা না ফেরার দেশে পারি জমান।

জীবনের এক কঠিন পথ পারি দিতে শুরু করেন। এরই মধ্যে শিরিন সংসারীও হোন। তবে মনের ভেতর একটা আগ্রহ কাজ করে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ে। যেমনটা তিনি ঘুরতে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন ইতিহাস ঐতিহ্যকে জানতে। সেই থেকেই মূলত কন্টেন্ট তৈরিতে খুব আগ্রহ। তরুণ প্রজন্ম নতুনত্বের করাল গ্রাসে ভুলে যেতে বসেছে দেশে কি ছিলো আর এখন কি নেই! এমন ভাবনা থেকেই সিদ্ধান্তটা নেন ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরবেন। মানুষকে জানাবেন দেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো ঐতিহ্য আর বিচিত্র রূপের রানী বাংলাদেশ ও গ্রামগঞ্জকে।

এটা বেশ মজার বিষয় যে শিরিনের ভাইরাল বিষয় কিংবা তথ্যা কথিত সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে ভিডিও বানানোর নেশাটা টানে না।কেন টানে না সে স্বপক্ষে শিরিন নিজেই বলেন, ‘আমি শিক্ষকতা করেছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, কোচিং এবং টিউশনিও করেছি। একদম হাতের লেখা শেখানো থেকে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের ছাত্রছাত্রী পড়িয়েছি। তাদের মাইন্ড রিড করেছি। কোন বিষয়গুলো আমার স্টুডেন্টদের জন‍্য উপকারী ছিলো এবং কোনগুলো নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে ওরা পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়বে বা অমনোযোগী হয়ে পড়বে বা পড়তো, শিক্ষক হিসেবে সেটা আমি অনুভব করতাম। অভিভাবকদের সাথে কথা বললে বুঝতে পারতাম সমসাময়িক বিষয় আর অতিরিক্ত হাসিতামাশার কনটেন্টগুলো কিভাবে বাচ্চাদের ধীরেধীরে ছিটকে নিয়ে যাচ্ছে। ভাইরাল সংলাপ দিয়ে কিভাবে ওদের আদব-কায়দার ঘাটতি ঘটাচ্ছে। সবকিছুকে মাথায় রেখেই আমি এমন কিছু করতে চেয়েছি যেটা সব বয়সের মানুষের জন‍্য উপকারী হয় এবং সব সময় নতুনের মতোই যেনো মনে হয়। যেখান থেকে কিছু শেখা যায়। অন্যকে শিখতে উৎসাহি করা যায় এ বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরির নেশাটা আমার সব সময় টানে।

এতে হয়তো অন‍্যদের মতো আমি রাতারাতি বা অল্পসময়ে সফল হতে পারবোনা তবুও আমি মানসিকভাবে শান্তি পাই যে আমি এমন কিছু বানাতে চেষ্টা করছি।’

নিজের কন্টেন্ট তৈরির পরিধি বিষয়ে শিরিন বড় আগ্রহ নিয়েই বলেন, ‘আমি সবেমাত্র শুরু করেছি। এখনো শিখছি। শহরের ভেতর এবং আশেপাশের স্থাপত্যসমূহ নিয়েই আপতত কাজ করছি। সময়ের সাথে সাথে গোটা বাংলাদেশ এমনকি দেশের বাইরেও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়েও কাজ করতে চাই। কতটা পারবো সেটি সময়েই বলে দিবে।’

শিরিন আখতার শহীদ নজমুল হক উচ্চ বালিকা বিদ‍্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ‍্যমিক পাশ করলেও ছেলেবেলা থেকে প্রচণ্ডরকমের সাহিত্যমনা হওয়ায় বাংলা সাহিত্য নিয়ে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে অনার্স এবং রাজশাহী কলেজ থেকে সফলভাবে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। প্রচণ্ড উদারমনা স্বামীর উৎসাহ আর নিজের অদম্য ইচ্ছে নিয়ে এগিয়ে  যাচ্ছেন তিনি।