তথ্য ও প্রযুক্তিতে আমাদের এগিয়ে থাকা উচিত কেনো?

মো. রফিকুল ইসলাম রানা :
তথ্য ও প্রযুক্তি বা আইসিটি (ইনফরমেশন এন্ড কম্যুউনিকেশন টেকনোলজি) শব্দটির সাথে আমরা বর্তমানকালে প্রায় সবাই পরিচিত। কারণ গত ক’বছর পূর্ব থেকেই স্কুল-কলেজে এই বিষয়ে একটি বিষয় পাঠ্য রয়েছে। বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা এখন এ বিষয়ে ধীরে ধীরে জ্ঞানলাভ করছে।

ব্যবহারভেদে এটির সংজ্ঞা ভিন্ন হতে পারে। সহজ কথায় এর সংজ্ঞা আমরা এভাবে দিতে পারি, যে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে স্বল্প খরচে এবং দ্রæততম সময়ে কোথাও প্রেরণ কিংবা নিজে পাওয়ার জন্যে আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করি তা-ই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।

প্রথমেই বলি, বাংলাদেশ কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিতে অতটাও পিছিয়ে নেই। বিগত ১০ বছরে প্রযুক্তির যে উন্নয়ন হয়েছে তা অভাবনীয়। উদাহরণ দিবো না, কারণ সচেতন ব্যাক্তিমাত্রই এসব জানে। কিন্তু যখনই বহির্বিশ্বের সাথে তুলনা করতে যায় দেখা যাবে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে বহুগুণে পিছিয়ে আছে। কেনো? কারণটা কি?

আমার মতে সব থেকে বড় কারণ হচ্ছে, আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই খুশি। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিবিদ তৈরি হয় না। হাতে গোণা দু’একজন হয়, তারাও চলে যায় দেশের বাইরে। নাসা, গুগল, ইউটিউব, ফেইসবুকসহ খ্যাতনামা আইটি কোম্পানিগুলোতেও কিন্তু বাংলাদেশীরা আছে। একবার ভাবুন তো, তারা যদি আজ দেশের কাজে লাগতো তাহলে আমরা কতটা এগিয়ে যেতে পারতাম? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এদেশে মেধার মূল্য অনেক কম। মেধাবীদেরকে সঠিকভাবে প্রমোট করা হয় না। বরং মেধাবীদেরকে নানাভাবে হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অপমান, অপদস্ত হতে হয়। বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এসব বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচতে ও সঠিক মূল্যায়ন পেতেই তারা বিদেশে পাড়ি জমায়।

আবার, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে সার্টিফিকেট নির্ভর। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্যে, সেটা দিয়ে চাকুরী করার জন্যে। প্রযুক্তিবিদ বা ইঞ্জিনিয়ার যাকে বলে, সেটা হওয়ার জন্যে নয়।

আমাদের তথ্য ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর হতে হলে ২টি জিনিস অবশ্যই প্রয়োজন। যেমন : এক. দক্ষ জনশক্তি, দুই. গবেষণামূলক কার্যক্রম।

শুধুমাত্র বিদেশী প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নয়ন করা যাবে না। আমাদের পদ্মা সেতু,পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, বড় বড় সব প্রজেক্ট করার জন্যে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসা লাগে বিদেশ থেকে। তো কীভাবে আমরা এগিয়ে যাবো? আমাদের না আছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনশক্তি, আর না আছে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার মতো গবেষণামূলক কার্যক্রম।

প্রযুক্তিতে আমরা তখনই উন্নত হতে পারবো যখন আমরা প্রযুক্তি শুধু ব্যবহার না করে উদ্ভাবন করার মত সক্ষমতা অর্জন করবো। আমাদেরকে তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। নইলে যুগের পর যুগ আমরা উল্টো পথেই হাঁটতে থাকবো।

তথ্য ও প্রযুক্তি দক্ষতার সাথে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অনিচ্ছা কিংবা ভয়ের কারণে বিষয়টির সুফল গ্রহণ করার মজা থেকে আমরা অনেকেই বঞ্চিত। আশার কথা, বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা এবং আইটির মানুষগুলোর সততার কারণে বাংলাদেশও স্বপ্নের ‘ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ’-হবার পথে পুরোদমে যাত্রা শুরু করেছে।
মোট কথা, একটু খেয়াল করলেই আপনি মুগ্ধ হবেন শিক্ষা, চিকিৎসা, ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার, ব্যাংকিং জগত, কৃষিখাত, ই-গভর্নেন্স থেকে শুরু করে সবখানেই আজ তথ্য-প্রযুক্তির জয়জয়কার। মানুষ সহজেই এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের কাজগুলি সাবলীলভাবেই সম্পাদন করে নিচ্ছে। তাই, আসুন আমরা আজ থেকেই শেখা শুরু করি এবং তা হাতের মোবাইলটি দিয়েই।

পৃথিবীর বর্তমান চেহারা বলে দেয়, যে মানুষটি তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার জানবে না বা শেখার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে না, ব্যবহারিক জীবনের অলিগলিতে তিনি ঠকবেনই।

তাই, আধুনিক দুনিয়ার সাথে নিজেকে গতিশীল রাখার জন্যে, নিজেদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমগুলো মনের মতো করে সম্পাদনের জন্যে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার জানা ও শিখা একান্ত প্রয়োজন।

লেখক পরিচিতি : মো. রফিকুল ইসলাম রানা, শিক্ষার্থী : অনার্স ৩য় বর্ষ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।