শ্বেতী রোগ: রঙহীন ত্বকের গল্পে আশার আলো

হাকীম মিজানুর রহমান :

মানুষের ত্বক শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি আত্মপরিচয়েরও বাহক। কিন্তু যখন ত্বকের রঙ হারিয়ে যায়, তখন শুধু চেহারার পরিবর্তন নয়, বদলে যায় আত্মবিশ্বাস, সামাজিক অবস্থান, এমনকি জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিও। শ্বেতী রোগ—যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় ভিটিলিগো বলা হয়—তেমনই এক চর্মরোগ, যা ত্বকের রঙ তৈরি করা কোষ ধ্বংস করে দেয়, ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে সাদা দাগ দেখা দেয়। এই রোগ ছোঁয়াচে নয়, প্রাণঘাতীও নয়, কিন্তু এর সামাজিক ও মানসিক প্রভাব গভীর।

রোগের পরিচয়

শ্বেতী রোগ একটি অটোইমিউন রোগ। অর্থাৎ, শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। মেলানোসাইট নামক কোষগুলো ত্বকের রঙ নির্ধারণ করে, কিন্তু এই রোগে সেই কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে ত্বকে সাদা বা দুধের মতো দাগ দেখা দেয়। মুখ, হাত, পা, চোখের চারপাশ, ঠোঁট, এমনকি গোপনাঙ্গেও এই দাগ দেখা দিতে পারে।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ১-২% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এর সংখ্যা কম নয়। অনেকেই রোগটি সম্পর্কে জানেন না, আবার অনেকে কুসংস্কার ও সামাজিক অবহেলার শিকার হন।

শ্বেতী রোগের কারণ

শ্বেতী রোগের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে গবেষণায় কিছু সম্ভাব্য কারণ উঠে এসেছে:

– অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: শরীরের ইমিউন সিস্টেম মেলানোসাইট কোষকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ধ্বংস করে।
– বংশগত প্রবণতা: পরিবারে কারও এই রোগ থাকলে অন্য সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
– মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা ট্রমা রোগের সূচনা বা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে।
– হরমোনজনিত পরিবর্তন: বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হরমোনের ওঠানামা রোগের প্রকোপ বাড়াতে পারে।
– সৌর বিকিরণ ও রাসায়নিক সংস্পর্শ: অতিরিক্ত রোদে থাকা বা কিছু রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

লক্ষণ ও ধরণ

শ্বেতী রোগের প্রধান লক্ষণ হলো ত্বকে সাদা দাগের উপস্থিতি। তবে এই দাগের রঙ, আকৃতি ও বিস্তৃতি রোগীর শরীর অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ ধরণ হলো:

– সেগমেন্টাল ভিটিলিগো: শরীরের এক পাশে সীমিতভাবে দেখা যায়।
– নন-সেগমেন্টাল ভিটিলিগো: দুই পাশে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
– মিউকোসাল ভিটিলিগো: ঠোঁট, মুখগহ্বর বা গোপনাঙ্গে দেখা যায়।

সামাজিক ও মানসিক প্রভাব

শ্বেতী রোগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা। অনেকেই মনে করেন এটি ছোঁয়াচে, যা সম্পূর্ণ ভুল। আবার কেউ কেউ এটিকে অভিশাপ বা পাপের ফল বলে মনে করেন। এসব কুসংস্কার রোগীদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।

অনেক রোগী স্কুল, কর্মস্থল বা পারিবারিক পরিবেশে অবহেলার শিকার হন। বিশেষ করে নারীরা এই রোগে আক্রান্ত হলে বিয়ে বা সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হন। ফলে রোগটি শুধু শারীরিক নয়, এক গভীর মানসিক যন্ত্রণা হয়ে ওঠে।

 চিকিৎসা ও প্রতিকার

শ্বেতী রোগের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে নিয়ন্ত্রণ ও রঙ ফিরিয়ে আনার কিছু কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে। চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে রোগের ধরণ, বিস্তৃতি এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী।

১. ঔষধ ও ক্রিম

– কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম: ত্বকে প্রয়োগ করলে রঙ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
– ইমিউনো-মডুলেটর: যেমন ট্যাক্রোলিমাস বা পিমেক্রোলিমাস, যা অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া কমায়।
– মেলানিন উৎপাদনকারী ঔষধ: কিছু ক্ষেত্রে মেলানোসাইট কোষকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে।

২. ফটোথেরাপি

– Narrowband UVB Therapy: নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি ত্বকে প্রয়োগ করে রঙ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
– PUVA Therapy: ফটোসেনসিটিভ ঔষধ খেয়ে UVA রশ্মি প্রয়োগ করা হয়।

 ৩. অস্ত্রোপচার

– স্কিন গ্রাফটিং: সুস্থ ত্বক থেকে কোষ নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়।
– মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লান্টেশন: সরাসরি রঙ উৎপাদনকারী কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়।

 ৪. ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা

– কালোজিরা তেল: অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের কোষকে সক্রিয় করতে পারে।
– তুলসী পাতা ও মধু: ত্বকে প্রয়োগ করলে কিছু ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
– আহার পরিবর্তন: ভিটামিন B12, D, ফোলেট, জিঙ্ক ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

৫. মানসিক সহায়তা

শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় মানসিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে সাহস দেওয়া, কুসংস্কার দূর করা, এবং পরিবার ও সমাজের সহানুভূতিশীল আচরণ রোগীর সুস্থতায় বড় ভূমিকা রাখে।

হাকীম মিজানুর রহমানের চিকিৎসা পদ্ধতি

বাংলাদেশে হাকীম মিজানুর রহমান এই রোগের চিকিৎসায় একটি আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন। তাঁর ইউনানি ও হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতি শত শত রোগীর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। তিনি রোগের মূল কারণ অনুসন্ধান করে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা দেন, যা রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়:

– প্রাকৃতিক উপাদান যেমন— রিক্যাপ ক্রিম, ন্যাচারাল হার্বস টেবলেট, ভিটিলিগো টেবলেট, ভিটিলিগো রিমোভার স্প্রে ও ভিটিলিগো পাউডার।
– রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন
– মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পরামর্শ

প্রতিরোধ ও সচেতনতা

শ্বেতী রোগ প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

– অতিরিক্ত রোদে না থাকা
– রাসায়নিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
– মানসিক চাপ কমানো
– পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
– নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যম, সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলে রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ গড়ে তুলতে হবে।

শ্বেতী রোগ একটি রঙহীন যন্ত্রণা, কিন্তু এর প্রতিকার ও সহানুভূতির আলোয় রোগীরা ফিরে পেতে পারেন জীবনের রঙ। এটি শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, বরং মানবিকতারও। আমাদের দায়িত্ব রোগীদের পাশে দাঁড়ানো, কুসংস্কার দূর করা, এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলা—যেখানে ত্বকের রঙ নয়, মানুষের মন ও মেধাই হবে পরিচয়ের ভিত্তি।

যোগাযোগ

হাকীম মো. মিজানুর রহমান

ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত) 

অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা 

সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ 

 চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা

সততা প্লাজা, 

ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার 

প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন 

রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন

মোবাইল, ইমো, হোয়াটস অ্যাপ : 01762240650

সেবাসমূহ :

শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।

মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

ডায়াবেট্সি হলে কি করবেন?

শেয়ার করুন
প্রিয় সময় ও চাঁদপুর রিপোর্ট মিডিয়া লিমিটেড.

You might like

About the Author: priyoshomoy