ওড়িশায় আঘাত হেনেই পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়বে ফণী

শুক্রবার ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এরপর ফণীর অভিমুখ হবে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশায় আছড়ে পড়ার পর এর গতিবেগ কিছুটা কমে যাবে। তবে শক্তি কমলেও এটি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে।

ঠিক একই রকম গতিতে আছড়ে পড়েছিল আইলাও। ২০০৯ সালের মে মাসের তীব্র গরমে ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। নদীর বাধ ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছিল উপকূলের জনজীবন।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত আইলার সেই আতঙ্ক মনে করিয়ে দিতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত এক দশকে তেমন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে হয়নি এ রাজ্যকে। বেশির ভাগই তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার ওপর দিয়ে গেছে।

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনি এবং রোববার কলকাতা, ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে।

উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ঝড়ের গতিবেগ আরও বৃদ্ধি পাবে। ঘণ্টায় প্রায় ১১৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে আগামী ৩ এবং ৪ মে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে থাকবে ঝড়ে হাওয়া। ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড় শুরু হতে পারে ২ তারিখ থেকেই। ৪ তারিখে সেটা ১০০ থেকে ১১৫ কিলোমিটার গতিবেগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দিঘা, মন্দারমনি, সাগর, বকখালিতে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যেই মৎসজীবীদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। পর্যটকদের ওই সব এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আবহাওয়া দফতর রাজ্য প্রশাসনকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

ঝড়ের ধাক্কায় ভেঙে পড়তে পারে কাঁচা বাড়ি, গাছপালা, পুরনো বাড়িও। ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হতে পারে। ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। উপড়ে যেতে পারে গাছপালাও। কলকাতা শহরে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। সে করণে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের নিরাপদে সরে আসার অনুরোধ করা হয়েছে।

রাজ্য প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। ইতোমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। দক্ষিণ-পূর্ব রেল আগাম জানিয়ে রেখেছে যে, পুরী, ভূবনেশ্বর এবং দক্ষিণ ভারতগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের সফরসূচি প্রয়োজনে পরিবর্তিত বা বাতিল করা হতে পারে।

এদিকে, হ্যারিকেনের গতি সম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের চারটি নদীবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-২৭) জানানো হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী সামান্য উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১১০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।