বিপাকে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা

আনিছুর রহমান সুজন :
সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো কিন্ডারগার্টেন গুলোও বন্ধ রয়েছে। তবে শিক্ষকরা ইতিমধ্যেই মার্চ মাসের বেতন পেলেও কিন্তু বিপাকে পড়েছে কিন্ডারগার্টেন গুলোর শিক্ষকরা। নামমাত্র বেতনে চাকুরি করা এসব শিক্ষক অনেকেই এখন অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে। এই চরম দুসময়ে তাদের দিকে তাকানো কেউ নেই।

জানা গেছে, গতানুগতিক ধারা বাইরে গিয়ে আদর ও  স্নেহের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিন্ডারগার্টেন গুলো যাত্রা শুরু করে। তাদের পাঠদান পদ্ধতি ও আধুনিকতা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বিপ্ল সাধন করে। এক সময়ের ঢিলে ঢালা ভাবে চলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাড়াতে বাধ্য করে। এক সময়ে শহরাঞ্চলে কিন্ডারগার্টেন গুলো থাকলেও এখন তা জালের মতো পুরো দেশে ছড়িয়ে গেছে। প্রত্যন্ত জনপদে এগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্ত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যারা চাকুরি করছেন তাদের নামমাত্র বেতন পেতেন। এই বেতন দিয়ে না চললেও প্রাইভেট পড়ানোর মাধ্যমে তারা তাদের সংসার চালিয়ে নিতো। সরকার শিক্ষাব্যবস্থার নতুন এই ধারার সাথে তাল মিলিয়ে সরকার ইতিমধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে বই দিয়ে তাদেরকে সরকারি কারিকুলামে চলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।

সেই ধারা মেনে ইতিমধ্যেই সরকারের সকল কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করছে কিন্ডারগার্টেন গুলো। সর্বশেষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। শিশুদের সুরক্ষার কারণে অভিভাবকরাও বন্ধ রেখের প্রাইভেট। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে এই সেক্টরে কর্মরত ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক। এর সাথে রয়েছে বিপুল সংখ্যক কর্মচারী।

কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে কলা বলে জানা গেছে, সরকারি ঘোষনার কারণে হঠাৎ করেই কিন্ডারগার্টেন গুলো মাসের অর্ধেক সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া মাসিক টিউশন ফি সংগ্রহ করতে পারেন নি। ফলে মার্চের পর এপ্রিল মাসও চলে যাচ্ছে কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের শিক্ষকদের বেতন দিতে সক্ষম হয়নি। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানই ফেব্রয়ারী মাসের বেতন পর্যন্ত দিতে পারেন নি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা কিন্ডারগার্টেন ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম হোসেন জানান, পুরো জেলায় প্রায় ৫শতাধিক কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। এদের প্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ফেব্রæয়ারী মাসের সম্মানি শিক্ষকদের দিতে পারেন নি। মার্চের শেষের দিকে ত্রৈমাসিক পরীক্ষা যদি হতো তাহলে আদায়কৃত টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষকদের সম্মানি দেয়া সম্ভব হতো। এছাড়া শিক্ষকরা অনেকেই ভ্যক্তিগত ভাবে টিউশনি করে সংসার চালায়। বর্তমানে তাও বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত।

কুমিল্লা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জানান, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের কথা কেউ ভাবে না। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকি করণে এদের অবদান শতভাগ।

একটি কেজি স্কুলের মাসিক আয় বিদ্যালয়ের ঘর ভাড়া শিক্ষক শিক্ষিকাদের সম্মানি ও কর্মচারীর বেতন বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস ও পানির বিল সহ অন্যান্য খরচ এ সব চলে যায়। যা সরকারের যথাযত কর্তৃপক্ষের বরাবরে হিসেব দেখানোর প্রয়োজনীতা আছে এবং অনুমোদিত স্কুলের পক্ষ থেকে হিসেব জমাদান ও করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের আয় তথা টিউশন ফি পাওয়া বন্ধ। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষিকা এবং কর্মচারীদের কথা চিন্তা করে আর্থিক প্রণোদনা দিলে উপকৃত হবে দেশের শিক্ষক সমাজ এমনটাই দাবী তাদের।