শেরপুরের নকলায় করোনা জয়ী বজলুর রহমানকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন ইউএনও

মো. জাকারিয়া খান জাহিদ, শেরপুর প্রতিনিধি:

শেরপুরের নকলা উপজেলা প্রশাসনের নৈশ্য প্রহরী মো. বজলুর রহমান করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে নিজ বাসায় ফিরেছেন।

৩০ মে শনিবার দুপুরের দিকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে করোনা জয়ী বজলুর রহমানকে হোম আইসোলেশন থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মজিবুর রহমানের অফিস কক্ষে কয়েকজন চিকিসৎক ও সাংবাদিকদের উপস্থিতে এ ছাড় পত্র প্রদান করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মজিবুর রহমান।

ছাড় পত্র প্রদানের পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান করোনা জয়ী বজলুর রহমানকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মজিবুর রহমান, নকলা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আবু কাউসার বিদ্যুতসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, সাংবাদিক ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য মতে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে ২৯ মে শনিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সন্দেহে উপজেলার ৪০০ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল রাতে পাওয়া করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার শেষ রিপোর্ট অনুযায়ী উপজেলায় ১১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৯ জন সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে নিজ বাসা-বাড়িতে ফিরে গেছেন। বাকী ২ জন আইসোলেশনে সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।

নকলা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আবু কাউসার বিদ্যুত জানান, উপজেলা প্রশাসনের নৈশ্য প্রহরী মো. বজলুর রহমান এর শরীর থেকে ১১ মে সোমবার নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার চাপ বেশি থাকায় ১৫ মে শুক্রবার বজলুর রহমানের নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং তার নমুনায় পজেটিভ আসে। ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসন তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেন। পরে ৩ বার তার শরীরে করোনা উপস্থিতির ফলোআপ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। প্রথম ফলোআপ নমুনা পরীক্ষাতেও পজেটিভ আসে। পরে আরও ২ বার নমুনা ফলোআপ পরীক্ষা করা হয়। এতে সর্বশেষ ২৭ মে বুধবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে পর পর ২ বারই নিগেটিভ আসায় তাকে আইসোলেশন থেকে ছাড় পত্র দেওয়া হয়।

করোনা জয়ী বজলুর রহমান সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নভেল করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। এই ভাইরাস আক্রমণ করার পরে সচেতনতার অভাব না হলে কোন সমস্যা হয়না। সচেতনতা অবলম্ভন করলে ও আইসোলেশন নিয়ম মেনে চললে দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব; আমি এর উজ্জল প্রমাণ। এভাবেই হাসি মুখে বললেন করোনা জয়ী বজলুর রহমান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.  মুহাম্মদ মজিবুর রহমান জানান, করোনা জয়ী বজলুর রহমান নিজের বাসায় হোম আইসোলেশনে থাকলেও তাকে নকলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রেখে নিয়মিত পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বজলুর রহমান আমার ত্বত্তাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ায় তাকে ছাড় পত্র দেওয়া হলো। আইসোলেশন থেকে ছাড় পত্র পেলেও তাকে নিজ বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষে তথা কিছু দিনের মধ্যে নিজের কর্মস্থলে কাজে যোগদান করতে কোন বাধা নেই বলে তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান জানান, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফল ও শাক সবজি খেলে, কিছুক্ষণ পর পর লবণ বা ভিনেগার মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে, সম্ভব হলে আধা ঘন্টা পর পর গরম পানি পান করলে এবং আইসোলেশনের সকল নিয়ম-কানুন মেনে চললে করোনা ভাইরাস দ্রুত সেড়ে যায় বলে চিকিৎসকের কাছে তিনি শুনেছেন।করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হলে এতে চিন্তার কিছু নেই। সচেতনতা অবলম্বন করলে ও আইসোলেশন নিয়ম মেনে চললে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস মুক্ত হওয়া যায়। বজলুর রহমান এমনটাই করেছেন, ফলে সে কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। অতএব করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা অবলম্বন করতে সকলের প্রতি আহবান জানা তিনি।