সিলেটে খাদিমপাড়া হাসপাতালে শুরু হচ্ছে করোনা চিকিৎসা

 

নিউজ ডেস্ক :
সিলেটে করোনা আক্রান্তদের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। গত তিন মাস ধরে এই হাসপাতালেই দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। অনেক আগে থেকেই হাসপাতালে রোগী সংকুলান হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয় বেশি থাকায় রোগীরা শামসুদ্দিনে চিকিৎসা নিতে বেশি আগ্রহী। এ কারণে হাসপাতালে চাপ ছিলো রোগীদের। সেই চাপ কমাতে সিলেটে আজ থেকে আরো একটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে। সেটি হচ্ছে খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার ফটকেই সেই হাসপাতাল অবস্থিত।

কিছুদিনের মধ্যে নগরীর দক্ষিণ অংশের দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার চিকিৎসা শুরু হবে। ওই হাসপাতালকে করোনার চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এতে করে সিলেটে চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছেন তারা। সিলেটের শাহপরান (রহ.) মাজার গেইটের পাশে অবস্থিত খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা বিশিষ্ট।

এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই হাসপাতালটি নির্মাণ করেছিলেন। হাসপাতাল নির্মিত হলেও ডাক্তার, নার্সসহ আনুষঙ্গিক সংকটের কারণে সেখানে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে- বর্হিবিভাগে ডাক্তাররা রোগী দেখতেন। এবারে করোনা কাল শুরু হওয়ার এক মাস পরই স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চেয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের ভাড়া বেশি চাওয়ার কারণে সরকার থেকে সেটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

এরপর থেকে সিলেটে ৮১ শয্যার দু’টি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- খাদিমপাড়া এবং দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে প্রবাসীদের অর্থায়নে এ দু’টি হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে। খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ কাজ শেষ পর্যায়ে। ফলে রোগী ভর্তি করতে কোনো সমস্যা নেই। এজন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রস্তুত। আজ থেকে সেখানে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি শুরু হবে। এরই মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, স্বেচ্ছাসেবকদের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

সিলেটের সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সেটি দেখাশোনা করবেন। তিনি জানান- কিছুদিনের মধ্যে দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ভর্তি করা হবে। এই হাসপাতালেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এদিকে- খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধনের পর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এখন শামসুদ্দিন হাসপাতালে নমুনা নেয়া হচ্ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অনেকেই নমুনা দিতে পারেন না। খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা নেয়া হলে জট কিছুটা কমবে।

খাদিমপাড়া হাসপাতালটিকে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করছে সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন। সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনের মহাসচিব কর্নেল (অব.) আবদুস সালাম বীরপ্রতীক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও হাসপাতালে পৌঁছেছে। চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নার্স ও স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও সন্দিগ্ধদের সেবা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ প্রায় শেষ। তিনি জানান- ফাউন্ডেশনের সভাপতি সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল ইউনিভার্সিটির মেডিসিন ও নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ফিলাডেলফিয়ার ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধানে দেশ-বিদেশের চিকিৎসকরা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদান করবেন। আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ইতিমধ্যে বড় অঙ্কের একটি তহবিলও গঠন করেছে কিডনি ফাউন্ডেশন।