কেমন কাটছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সময়

মাকসুমুল মুকিম :

বর্তমান সময়ে পৃথিবীর চলমান এক আতঙ্কের নাম “করোনা ভাইরাস”।গত ৮ই মার্চ দেশে সর্বপ্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে।তারপর থেকেই ধীরেধীরে দেশের শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির চলমান চাকায় মন্দা নেমে এসেছে।

গত ১৭ই মার্চ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।তারপর থেকেই শুরু হয়েছে বারবার অঘোষিত লকডাউন ও শিক্ষাক্ষেত্রে চরম বিপত্তি। তবে এই অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।তাদের সময় কেমন কাটছে সেটাই জানার চেষ্টা করতেছি।

জয়পাড়া কলেজের মানবিক বিভাগের ছাএী মাহমুদা মিলি বলেন “আমরা আমাদের চলমান পথ হারিয়েছি।পরীক্ষা যখন আমাদের সন্নিকটে তখন এমন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কোনভাবেই আমাদের প্রত্যাশিত ছিলো না ।ছোট থেকে আমরা পড়ালেখার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে এসেছি। এখন এইরূপ অনিয়ম আমাদের সাথে খাপ খাচ্ছে না।

অপর দিকে আরো একজন জয়পাড়া কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাএ মোঃ আল রাজিব হোসেন বলেন আমরা আমাদের সেরা প্রস্তুতিটা নিয়েই তৈরি ছিলাম।তবে এখন ঘরে বসে আমাদের কোচিং টিউটরদের অনলাইন ভিত্তিক ক্লাসগুলোই আমাদের ভরসা। আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থী তাদের প্রত্যেকের একটা স্বপ্ন থাকে, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এবং অনার্স করার পাশাপাশি আউট ওয়ার্কিং বা পার্টাইম জবের মাধ্যমে নিজের এবং বাবা মাকে সাহায্য করা।তবে এমন অনিশ্চয়তা আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নবাবগন্জ পাইলট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাদিয়া ইসলাম জানিয়েছে গত এপ্লিল মাসে পরীক্ষা হবে বলে পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা না হওয়াতে পুরো পড়া ও শেখা নিজিস ভুলের মাঝে চলে এসেছে। বর্তমানে সরকারের উদ্যোগে Zoom Appsএর মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থস করেছে সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারনে বেশিভাগ সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক পেতে অসুবিধা হয় সে কারনে আমরা ঠিক মতো অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছি না।

সরকারি পদ্মা কলেজের ছাত্র রিফাত বলেন সেশনজট সহ নানামূখী চিন্তাভাবনা এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।তবে নিয়মিত আইইডিসিআর এর ব্রিফিং এবং পৃথিবীতে নিয়মিত রোগী বৃদ্ধি হারের নিউজ গুলো দেখা হয় বলে অনেক কিছু আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে,কারণ সবার আগে জীবন।তাই এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত আমাদের জন্য দ্রুত ফলপ্রসূর চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া”।


সরকার দোহার নবাবগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত ইসলাম বলেন, “করোনা পরিস্থিতি সবকিছুর মতো পড়াশোনা তে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আর আমরা যেহেতু এইচ এস সি পরীক্ষার্থী ছিলাম আমাদের উপর এর প্রভাব আরো ব্যাপকভাবেই পড়েছে।আমাদের পরীক্ষাটা এমন সময় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল যখন আমরা আঁট ঘাট বেধে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তারপর থেকেই অনেক অপপ্রচার এবং গুজব ছড়িয়েছে পরীক্ষা নিয়ে। এই পরিস্থিতি তে পড়াশোনা আগের মতো নেই। হ্যাঁ চালিয়ে যাচ্ছি যেনো পিছিয়ে না পড়ি।কিন্তু পরীক্ষা পিছানো, হবে কি না সেটার অনিশ্চয়তা এইসব মিলিয়ে অনেকাংশেই পিছিয়ে পড়েছি। তবুও চেষ্টায় আছি যেনো হুট করে পরীক্ষা শুরু হলে প্রস্তুত থাকতে পারি। আর এই পরিস্থিতি প্রতিকার হিসেবে আমাদের হাতে কিছুই নেই।যতদিন করোনা থাকবে ততদিন আমাদের কিছু করারও নেই।আসলে জীবনের উর্ধ্বে তো আর পরীক্ষা না। এখন এই পরিস্থিতির মাঝে পরীক্ষা নিলে আমাদেরও করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ।প্রথমত আমাদের সুস্থ থাকতে হবে।তার পাশাপাশি পড়ালেখাটাও চালিয়ে যেতে হবে নিজের মতো করে যেনো পিছিয়ে না পড়ি।