স্বপ্ন ভঙ্গ : ক্ষুদীরাম দাস

ক্ষুদীরাম দাস :

একে একে একচল্লিশটি বছর কেটে গেলো!
এখন বুঝি হিসেবের খাতা খোলার পালা?
না চাইলেও ভাবনাটা এমনই;
সেই ছাত্র জীবনের একটা সময়ে কবিতা আবৃত্তি করতাম।
কলেজের সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি করে প্রথমও হয়েছি কয়েকবার,
বন্ধুরা আমাকে বেশ উৎসাহ দিতো,
ভাবতাম হয়তো কবিই হবো একদিন,
কিন্তু সময়ের বাস্তবতা, ব্যস্ততা, সাহিত্য থেকে দূরে থাকা
আর হয়ে উঠলাম কৈ!
বাংলা সাহিত্য বেশ ভালো লাগতো,
তাই বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ফেল করেছি,
সাহিত্য ভালোবাসতাম বলে কবিতার নির্মাণ শৈলী
রপ্ত করতে পেরেছিলাম বেশ ভালোভাবেই।
ক্যাসেটে কবিতা শুনতে ভালো লাগতো,
গভীর রাতে যখন ঘুম আসতো না,
তখন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসিমউদদীন, মধুসূদন, জীবনানন্দ দাশের কবিতা আবৃত্তি করতাম।
অনেক কবির কবিতা-এমনকি পুরো কাব্য মুখস্থ ছিলো।

ছাত্র জীবনে স্বপ্ন ছিলো কলেজে শিক্ষকতা করবো,
কিন্তু বাস্তবতা আর স্বপ্নের মেলবন্ধন ঘটেনি আমার জীবনে।
বড় কষ্ট হয় সেসব ভাবলে,
রবীন্দ্রনাথের একরাত্রি গল্পের নায়কের জীবন উদ্ভুত লাগতো,
সেই নায়ক স্কুল মাস্টারের মতোই জীবনটা চলছে,
.. ঠিক যাপিত জীবনের নিয়মে।
এখন আর বৃষ্টির দিনে কিম্বা চাঁদনী রাতে কবিতা আবৃত্তি করা হয় না,
বলতে গেলে কবিতা আর আমার কন্ঠে আসে না।
আসবেও না হয়তো কোনোদিন-
আমার জীবনের দীর্ঘশ^াসগুলো কেউ দেখে না
স্বপ্নগুলো কেমন ছিলো সেটা কারো দেখার বিষয় নয়,
হয়তো সে রকম স্বপ্ন দেখা উচিতই ছিলো না আমার।

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ঋতুতে প্রকৃতি তার অবয়ব বদল করলেও
জীবন বদলায় না।
আমার জীবনও তাই-একেবারে সে রকমই।

বাঁশী কবিতাটি আমি আত্মস্থ করেছিলাম স্কুল জীবনেই।
আর দুই বিঘা জমি আবৃত্তি করতে গিয়ে
কতোবার যে কেঁদেছি কষ্টে!
আর রবীন্দ্রনাথের হরিপদ কেরানী আমার খুব প্রিয় চরিত্র ছিলো,
আজকাল আর কবিতা পড়া হয় না।

বাংলা সাহিত্যে জীবনের স্বপ্নের সিঁড়িটা ছোঁয়া হলো না আমার,
তবে হিতৈষীদের পরামর্শে আইন শাস্ত্রে মনোনিবেশ করতে হলো,
অন্তত একটা সম্মানজনক পেশা ও রুটি-রুজির ভাবনায়।
আমি হতাশ হই-
আমার স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্টে।
সান্ত¡না শুধু একটাই-
আমার মতো অনেকের জীবনের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় সময়ের পরিক্রমায় এভাবেই!
জীবন উপেন বা হরিপদ কেরানীর মতোই রয়ে যায়।
জানিনা জীবন নামের এই যন্ত্রটা কোথায় গিয়ে থামবে!
চলতে চলতে একদিন থেমে যাবে
শিরোনামহীন এই নষ্ট জীবন…
হারিয়ে যাবে বিস্মৃতির অতল গহŸরে..
এখন আমি আর কাঁদি না-কাঁদবো না,
স্বপ্ন ভঙ্গ-হতাশার জীবন হয়ে।