গৃহবধূ নির্যাতন

সম্পাদকীয় …

গত ১৫ জুলাই প্রিয় সময়ে প্রকাশিত দুঃখজনক একটি ঘটনা ‘ভালো রুটি তৈরি হয়নি! তাই অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে পুড়িয়ে মারলেন শাশুড়ি’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। লোমহর্ষক ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানকার মানুষ সরাসরি দেখেছেন। আর পত্রিকায় প্রকাশিত মর্মান্তিক সংবাদটি পড়েছেন অনেক মানুষ! বুক ফেঁটে যায়, হৃদয় কেঁটে উঠে, গা শিউরে উঠে, চোখে জল চলে আসে-যখন এমন ঘটনার খবর প্রায় দিনই আমাদের শুনতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সমাজে অহরহ ঘটেই চলেছে।

মূল ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যমগ্রামের চন্ডীগড় রোহন্ডা পঞ্চায়েতের বিড়পুর এলাকায় ১৩ জুলাই ঘটেছে। এই ঘটনা আমাদের মনে কী প্রশ্নের জন্ম দেয়? এখন ভাববার বিষয় যে, আমরা কোথায় আছি। যখন এসব ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটে তখন প্রশ্ন জাগে যে, আমাদের নৈতিক শিক্ষার দারুণ অভাব রয়েছে। আমরা মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের বাংলাদেশের কথাই যদি বলি, তবে আমরা দেখবো যে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও মেয়েদের উপর নির্যাতন ঘটে চলেছে। হয়তো সেগুলোর কয়েকটি ঘটনা প্রকাশিত হয় মাত্র। আর তখনই প্রকাশিত হয়, যখন অত্যাচার করতে করতে মারা যায়। কারণ, তখন আর বিষয়টি লুকানো যায় না।

একটি পরিবার নিজের মেয়েকে বৈবাহিক সূত্রে অন্যের হাতে তুলে দেয়। এটা সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই নিয়ম। তাছাড়া ধর্মীয় দৃষ্টিতেও পবিত্র বিষয়। মা বাবা নিজের কলিজার টুকরোকে নিয়ম অনুযায়ী অন্যের হাতে তুলে দেয়। তখন সে হয় নতুন একটি পরিবারের সদস্য। আর সে ওই পরিবারে যদি হয় ‘পরের মেয়ে’ হয়েই থাকে তাহলে তো অন্যায় হবে। ছেলের বউ করে নিয়ে আসলেও তাকে নিজের মেয়ে ভেবে তার প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখাতে হয়। অথচ আমাদের পরিবারগুলোর এমনই সেন্টিমেন্ট যে, নিজের মেয়ে হাজারটা অন্যায় করলেও সেটি দোষের কিছু নয়; কিন্তু ছেলের বউয়ের ‘পান থেকে চুন খসলেই’ সেটি আর সহ্য করা যায় না। কোনোভাবেই সেটি আর মেনে নিতে পারে না। তখন সেটাকে বিশাল আকার হিসেবে রূপ ধারণ করা হয়। প্রকাশিত ঘটনাটিতে রুটি ঠিকমতো তৈরি হয়নি বলেই তার উপর প্রচণ্ড রকমে নির্যাতন করা হয়। উপরন্তু মেয়েটি ছিলো অন্তস্বত্ত্বা! অন্তত সেদিকটা বিবেচনা করেও তার উপর দয়া করা যেতো। অথচ তার প্রতি করা হয়েছে দয়াহীন নির্মম অত্যাচার। নিজের ছেলের বউয়ের গায়ে তেল ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও তো বাঁচানোর জন্যে এগিয়ে আসতে পারতো। কিন্তু তারা এগিয়ে আসেনি। এ ধরনের অন্যায় যারা করে তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখা উচিত এবং তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত।

গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনার সবক’টি প্রকাশিত হয় না। অনেক নির্যাতনের ঘটনা চারদেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। শুধুমাত্র প্রকাশিত হয় যখন ঘটনাটি চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। অনেক সময় লোকলজ্জার ভয়ে, সম্মানহানি হওয়ার ভয়ে মেয়ে ও মেয়ের বাড়ির লোকজন সেগুলো মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তখন মেয়ের বাপের বাড়ির লোকের শুধুমাত্র মেয়ের দিকে তাকিয়ে নীরব থাকতে বাধ্য হয়। অনেক সময় অন্যায় হচ্ছে জেনেও হাসিমুখে সহ্য করে চেপে যায়। গৃহবধু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলার পরিসংখ্যানও কোনো অংশে কম নয়। এভাবেও শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি।

প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২০ খ্রি.