‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ’ বেরিয়ে আসবে

১৮ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ : শনিবার

সম্পাদকীয়

‘বাংলাদেশি তরুণীদের পাচার করে দু’বাইয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতেন আজম’
‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ’ বেরিয়ে আসবে

প্রিয় সময় পত্রিকায় গত ১৩ জুলাইয়ে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশি তরুণীদের পাচার করে দু’বাইয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতেন আজম’ শিরোনামে লজ্জাজনক ঘটনাটি। এ ঘটনার মাধ্যমে টনক নড়েছে প্রবাসীদের, বিশেষ করে তরুণীরা; সেই সাথে তরুণীদের মা বাবাও চিন্তায় পড়ে গেছেন।

আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে বৈদেশীক মুদ্র। আর সেই বৈদেশীক মুদ্রার একটা অংশ আসে প্রবাসীদের অর্থ উপার্জনের দ্বারা। মানুষ প্রবাসে যায় টাকা উপার্জনের জন্যে। যেন তাদের সেই উপার্জনে দেশে থাকা পরিবার আত্মীয়স্বজনরা স্বচ্ছলভাবে চলতে পারে। আর বিদেশ যেতে হলে একটা মাধ্যম দরকার হয়। যারা তাকে নিরাপদে বিদেশ পাঠাতে পারে ও সেখানে তার কর্মসংস্থান করাতে করিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেই মাধ্যম যদি হয় অসততায় পূর্ণ তাহলে প্রবাসীদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে। তবে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট যদি এমন অবিশ্বস্ত হয় তাহলে মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে?

পৃথিবীতে সৎ মানুষ রয়েছে। সৎ মানুষ আছে বলেই মানুষ এখনো বিশ্বাসের উপর টিকে আছে। কিন্তু সেই বিশ্বাসের জায়গাটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে? অতএব, শুধুমাত্র তাদের কারণেই সৎ মানুষদের সন্দেহের অবস্থান তৈরি হয়ে যায়, আর তাদের দিকেও মানুষ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকায়।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় যে, মাত্র ‘১০ হাজার টাকার লোভে অন্ধকার জগতে তরুণীদের ঠেলে দিতো দালালরা। সারা দেশে আজম খানের ৫০ জনের মতো দালাল আছেন। তারা ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুীদের টার্গেট করে। দুবাইয়ের অভিজাত হোটেলে ওয়েট্রেস, ক্লাবে নৃত্য শিল্পীর কাজ দেয়ার নাম করে প্রলুব্ধ করতেন। বলা হতো মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে। এমনকি আস্থা অর্জনের জন্য বেতনের অগ্রিম হিসেবে যাওয়ার আগেই টাকা দেয়া হতো।’ বাহ্! কী দারুণ বুদ্ধি! অতএব, এই লোভনীয় বিষয়ের প্রতি মেয়েদের সতর্ক থাকার দরকার।

প্রকাশিত সেই সংবাদের মাধ্যমে তরুণীদের দিয়ে কী করা হতো তার লোমহর্ষক ঘটনা জানা যায়, হাজারেরও বেশি তরুণীকে দেহ ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। তরুণীদের আটক রেখে জোর করে ডান্স বারে নাচানো, দেহ ব্যবসায়ী বাধ্য করা এবং তাদের কথামতো না হলে ইলেকট্রিক শকের মতো নানা নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো যেমন লজ্জাজনক, তেমনি অমানবিকও বটে।

ঘটনাটি পড়ে তরুণী ও তার অভিভাবকরা আরো সতর্ক হওয়া উচিত। ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে তবেই তরুণীদের বিদেশে যেতে দিতে হবে। অন্যথায় মেয়েকে হারিয়ে সেই পরিবারকে দুঃখে চোখের জল ফেলতে হবে।

বাংলাদেশে শ্রম সম্পদ প্রচুর। আর বিদেশের মাটিতে আমাদের বাংলাদেশের শ্রমের চাহিদা রয়েছে। অপরদিকে আমাদেরও বেঁচে থাকার অর্থের দরকার এবং বিদেশ শ্রমের বিনিময়ে আমাদের প্রচুর অর্থের যোগান দিয়ে থাকে। কারণ, আমাদের দেশে চাহিদার অনুপাতে কর্মসংস্থানের সঙ্কুলান রয়েছে। এ কারণে বিদেশে যেতে বাধ্য হয় আমাদের তরুণ সমাজের পাশাপাশি তরুণীরাও। বিশেষ করে আমাদের তরুণীরা যেন ধ্বংস না হয়ে যায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই ঘটনার দিকে দৃষ্টি দিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আরো খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে হয়। হতেও তো পারে, ‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ’ বেড়িয়ে আসবে।